নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার বাড়ৈই আলগী গ্রামের মিলন খানের ছেলে মাঈন উদ্দিন। ৩ ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন ২৪ বছর বয়সের এই টগবগে যুবক। চার বছরের একমাত্র কন্যা রিদনী, স্ত্রী জেসমিন, বাবা মিলন খান ও মা উম্মে কুলসুমকে নিয়ে তার সংসার। রিকশা চালিয়ে যে টাকা আয় করতেন তা দিয়েই সংসার চলতো।
১৯ জুলাই নরসিংদীর ইটাখোলা মোরে শিক্ষার্থীদের ডাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন মাঈন উদ্দিন। এসময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হন তিনি। হাত ও পেটে গুলি লাগে তাঁর। একটি গুলি তার ডান হাত ভেত করে বের হয়। আরেকটি গুলি পেটের নিচের অংশে ঢুকে নারী-ভুরী ভেত করে কোমরের পেছনের দিকে আটকে থাকে। এতে সে গুরুতর আহত হয়ে পরলে আন্দোলনকারীদের কয়েকজন প্রথমে অর্থোপেডিক হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ঐ রাতেই অর্থোপেডিক হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে জরুরি ভিত্তিতে প্রেরণ করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী ভিত্তিতে মাঈন উদ্দিনের একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। গুলিবিদ্ধ মাঈন উদ্দিনের পেটে গুলি থাকায় খাদ্যনালী একাধিক জায়গায় ছিদ্র হয়ে যায়।
এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে মাঈন উদ্দিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। এঅবস্থায় তার পেটের খাদ্যনালীর বেশ কিছু অংশ কেটে রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারির মাধ্যমে পেটের ডানপাশে মল ত্যাগ করার জন্য কোলোস্টোমি ব্যাগ স্থাপন করা হয়। বেশ কিছুদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার বাড়ৈআলগী নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন।
পুনরায় তার পেটে ব্যথা শুরু হলে অসুস্থতা বোধ করেন মাঈন উদ্দিন। এ কারণে তাকে ১২ আগস্ট নরসিংদী ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৬ দিন চিকিৎসা নেয়ার পর উন্নত চিকিৎসার আশায় পুনরায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গত ২৩ অক্টোবর তাঁর রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারির মাধ্যমে রিভার্সেল অব অ্যান্ড জেজুনোস্টমি ও কোলোস্টোমি ক্লোজার করা হয়। এর ফলে স্বাভাবিক নিয়মে মলত্যাগ করতে পারছেন মাঈন উদ্দিন। পরবর্তীতে বিষয়টি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এবং ডা. মাহমুদুল হাসান, তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়কদের সাথে মাঈন উদ্দিনের উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়।
এতে উর্দ্ধতন কর্তপক্ষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামানকে অবহিত করেন। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের যোগাযোগের ফলে প্রফেসর সালমা সুলতানার অধীনে মাঈন উদ্দীনকে ভর্তি করা হয়।
নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ এন এম মিজানুর রহমান জানান, জেলা হাসপাতালে ভর্তির সময় তার দুর্বিষহ জীবন আমাদের হৃদয়কে নাড়া দেয়। তার পেটে ব্যথা, শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক যে কষ্ট সেগুলো চিকিৎসকদের মনে হৃদয়বিদারক। যা চিকিৎসকদের স্পর্শকাতরতার সৃষ্টি করে।
মাত্র ২৪ বছর বয়সের এই তরুণ প্রতিনিয়তই তার ভবিষ্যত জীবন সম্পর্কে হতাশা প্রকাশ করছেন।