‘হিজবুত তাহরির, ছাত্র শিবিরের মতো নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো তৎপর বুয়েটে’
“মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তি বা আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত হলেই তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে থাকা হয়,” অভিযোগ এক পক্ষের।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘আবেগকে’ ব্যবহার করে ‘নিষিদ্ধ সংগঠন’ স্বার্থ হাসিল করছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষার্থী।
শনিবার বিকাল ৩টায় বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এই অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভীর মাহমুদ স্বপ্নীল, আশিক আলম, সাগর বিশ্বাস, অরিত্র ঘোষ ও ২১ ব্যাচের অর্ঘ দাস উপস্থিত ছিলেন।
আরও ২০-২৫ জন উপস্থিত হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ‘বুলিংয়ের’ ভয়ে তারা অংশ নেননি বলে এই শিক্ষার্থীরা দাবি করেন। একইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ‘বুলিংয়ের’ কিছু স্ক্রিনশট সাংবাদিকদের দেখান।
লিখিত বক্তব্যে ২০ ব্যাচের আশিক আলম বলেন, “বুয়েটর সংবিধানে ক্যাম্পাসে সকল ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের যে আইন আছে, আমরা তাকে সম্মান করি। তবে এই সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে গোপনে হিজবুত তাহরির, ইসলামী ছাত্র শিবিরের মতো নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো কাজ করছে।
“আবরার ফাহাদের হত্যার ঘটনায় আমরাও দুঃখিত। তবে সে ঘটনার আবেগকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামানো হয়েছে।”
আশিক বলেন, “২০২৩ সালে সুনামগঞ্জে বুয়েটের ৩৪ শিক্ষর্থীকে গ্রেপ্তার করা হলে আমরা মৌলবাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করি। সে ঘটনায় আমাদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয় এবং ৭০-৮০ জন মিলে দুইজনকে ডেকে ‘কালচারাল র্যাগিং’ দেওয়া হয়। কারও পরিবার রাজনীতির সাথে যুক্ত হলে তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও পরিবার নিয়ে অশালীন মন্তব্য করা হয়। তাদেরকে নিয়মিত র্যাগিং, বুলিং, হুমকি ও ভয় ভীতির মধ্যে জীবন কাটাতে হয়।”
এমন এক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আশিক বলেন, “একবার আমরা বন্ধুবান্ধব ও সিনিয়র-জুনিয়র মিলে ক্যাফেটেরিয়ায় কাচ্চি রান্না করে খাই। এটিকে রাজনৈতিক তকমা দিয়ে আমাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আমাদেরকে সকল গ্রুপ ও ক্লাব থেকে বের করে দেওয়া হয়।
“শিক্ষা উপকরণ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ভালো খেলা সত্ত্বেও সব ধরনের খেলা থেকে বাদ দেওয়া হয়। আমাদেরকে র্যাগার, খুনি, মাদকাসক্তসহ আরও অপবাদ দেওয়া হয়।সম্প্রতি ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিনে আমরা ইফতার বিতরণ করি, সেখানেও আমাদের একই অপবাদ দেওয়া হয়।”
‘বুয়েটে হিজবুত তাহরির, ছাত্রশিবির স্বার্থ হাসিল করছে’
ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চাওয়ার পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিতে বুয়েট প্রশাসন ও সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন।
২০২৩ সালের জুলাই মাসে সুনামগঞ্জের হাওরে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতার অভিযোগে বুয়েটের প্রাক্তন এবং বর্তমান ৩৪জন শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়। যাদের নামে এখনো আদালতে মামলা চলমান এবং তারা জামিনে আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “আমরা কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী মৌলবাদের বিরুদ্ধে ‘Rise above Fundamentalism’ ব্যানারে মানববন্ধন করি। এই মানববন্ধন করার দরুণ আমাদেরকে চিহ্নিত করে ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং জবাবদিহিতা চাওয়া হয়।
“বিভিন্ন হলের রুমে রুমে রাত ১১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ডেকে জবাবদিহিতা চায় এবং প্রায় ৭০-৮০জন মিলে দুইজনকে মাঝে ডেকে একটি কালচারাল র্যাগিংয়ের দৃষ্টান্ত রাখে সবার সামনে এবং একটি গোষ্ঠীর ইন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আমাদের নিয়ে মিথ্যাচার করে। এমনকি মানববন্ধনকে একটি অপরাধের সাথে তুলনা করে আমাদের হল থেকে বের করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়।”
এদের হোতা হিসেবে শিহাব খান (মেকানিক্যাল-১৮), ফারাবি (মেকানিক্যাল-২০), ইবনুল মুহতাদি শাহ (মেকানিক্যাল-২০), রেদওয়ান আহমেদ (আইপিই- ১৮), তানভিরুল ইসলাম সাজিন (ইইই-২০), যামশেদুল ইসলাম রাহাদ (মেকানিক্যাল-২০), সিফাত কাওসার (কেমি-১৮) ছিল বলে অভিযোগ করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে তানভীর মাহমুদ স্বপ্নীল বলেন, “বুয়েটের অভ্যন্তরীণ ফেইসবুক গ্রুপগুলোতে আমাদের পক্ষে কেউ নিজের কোনো মতামত রাখতে গেলে তাকেও বুলিং এবং নানা ধরনের হুমকির শিকার হতে হয় এবং আমাদের সাথে ভালো সম্পর্ক কিংবা পরিচয় ছিলো বিধায় অনেককেই কটাক্ষের স্বীকার হতে হয়। আহসানউল্লাহ হলের নর্থের আবাসিক ছাত্র হওয়ার জন্যও বুলিংয়ের শিকার হতে হয়, যা বুয়েটের একমাত্র মাইনরিটি রেসিডেন্স।
“এরপর থেকে যে কারোরই পারিবারিকভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তি বা আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত হলেই তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে থাকা হয়। এমনকি পরিবারকে নিয়েও অশালীন মন্তব্য করা হয় অনলাইন ও অফলাইনে।”
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা বুয়েটে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকের প্রবেশের ঘটনার পর থেকে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা শনিবার দ্বিতীয় দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ছয় শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের পাশাপাশি আরো কয়েকটি দাবি তুলে ধরেছেন।
উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করার জন্য যা যা করার, করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন এলে আমরা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। নিয়মবহির্ভূতভাবে একজনকে বহিষ্কার করলে সেটা আদালতে টিকবে না। নিয়মের মধ্যে সবকিছু করার জন্য সময়ের প্রয়োজন। যেহেতু রোজার মাস, সময় একটু বেশি দেওয়া উচিত ছিল।”
বুয়েটে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর কার্যক্রম তদন্ত করা হবে: শিক্ষামন্ত্রী
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর কার্যক্রম চলছে কি না তা গভীরভাবে তদন্ত করার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কিছু জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী গোপনে সেখানে (বুয়েট) কার্যক্রম করার একটা আলোচনা-সমালোচনা আছে। সেটা নিয়েও আমরা গভীরভাবে তদন্ত করব। ব্যক্তি পর্যায়ের কেউ যদি এমন মানসিকতা রাখে তা যদি হয় মৌলবাদী বা জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীকে প্রশ্রয় দেওয়া-তাহলে তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, জঙ্গিবাদ নিয়ে যারা কাজ করে (কাউন্টার টেররিজম এর বিশেষ টিম) তারা সেগুলো দেখবে। শুধু একটি না সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য এটা প্রযোজ্য। পেছন থেকে কেউ কি ইঙ্গিত দিচ্ছে কি না, কেউ কি জঙ্গিবাদী বা উগ্রবাদী ইঙ্গিত দিচ্ছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।
বিশেষ উদ্দেশ্য কেউ এটা করছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মুক্তিবুদ্ধির চর্চায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, প্রগতিশীল মুক্তবুদ্ধির সুযোগ না রাখার প্রচেষ্টা এগুলো অবশ্যই ভালো কিছু নয়। কারা এই ধরনের মনোবৃত্তি লালন করছে বা প্রশ্রয় দিচ্ছে সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখব।’
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার পরিবেশ যেন কোনোভাবেই বিঘ্নিত না করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন।
এর আগে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের দৃষ্টিতে ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা-শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চ্যালেঞ্জ ও সমাধানের পথ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপুল চন্দ্র সরকার। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সভাপতিত্ব করেন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী।