বিএনপি এখন প্রকাশ্যে ভারত বিরোধিতার রাজনীতি শুরু করেছে। ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচির আদলে ভারতীয় পণ্য বর্জন কর্মসূচিকে তারা সমর্থন দিয়েছে। ভারতকে চাপে ফেলার মাধ্যমে তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপে ফেলতে চায়। তারা মনে করে যে, ভারতের যে অন্ধ আওয়ামী সমর্থন তা বন্ধ করার জন্য এটির কোনো বিকল্প নেই। বিএনপির ভারত বিরোধিতা ভারত সরকারের টনক নড়বে এবং ভারত বিএনপির সঙ্গে একটা আপস সমঝোতা করবে। এমন ভাবনা থেকেই এই ভারত বিরোধিতার কৌশল সামনে এনেছে বিএনপি। কিন্তু ভারত এখন আগের অবস্থানে নেই।
ভারত এখন বিশ্বের অন্যতম একটি পরাশক্তি। বিশ্বের এমন কোন দেশ নেই যারা ভারতকে সমীহ করে চলে না বা সমীহ করে কথা বলেন না। এরকম একটি বাস্তবতায় বিএনপির ভারত বিরোধিতা কতটুকু সফল হবে সেটি যেমন একটি প্রশ্ন, তেমনই বিএনপির মধ্যেও বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ রয়েছেন যারা ভারতের সহানুভূতিশীল এবং ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার পক্ষপাতী। এদেরকে বিএনপিতে ভারতপ্রেমিক রাজনীতিবিদ মনে করা হয়। এই সমস্ত ভারতপ্রেমিক রাজনীতিবিদরা এই ভারত বিরোধিতার মধ্যে কী করবেন সেটাও একটা দেখার বিষয়।
বিএনপির মধ্যে যে সমস্ত নেতাদের সঙ্গে ভারতের প্রকাশ্যে এবং গোপনে সম্পর্ক রয়েছে, যারা ভারতের সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক রেখে রাজনীতির আবহে একটি সম্প্রীতির জায়গা তৈরি করতে চান তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন;
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অনেকেই ভারতপন্থী রাজনীতিবিদ মনে করেন। ভারতের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। বিএনপিতে যে ভারত বিরোধিতার ধারা ছিল সেখান থেকে সরে আসার পেছনে যাদের অবদান রয়েছে, তাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলামের অন্যতম। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো অনেকেই মনে করেন যে, ভারতের সাথে সুসম্পর্ক রাখার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নতি করা সম্ভব। ভারত বিরোধিতা কখনোই বিএনপির জন্য ইতিবাচক ফলাফল দেবে না।
আবদুল আউয়াল মিন্টু: আবদুল আউয়াল মিন্টু একজন ভারতপন্থী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত এবং ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা নতুন করে বলার নাই। আবদুল আউয়াল মিন্টুও ভারতের সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক রক্ষা করে এবং আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ভারতের আস্থা অর্জনের নীতিতে বিশ্বাসী। তিনি এখন কী করবেন সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও একজন ভারতপন্থী রাজনীতিবিদ হিসেবে বিএনপিতে পরিচিত। একাধিক বার তিনি ভারতে গেছেন। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেন দরবারে তিনি কথাবার্তা বলেছেন ভারতের সঙ্গে। ভারতের কূটনৈতিক মহলে আমীর খসরু মাহমুদ এর একটি আলাদা পৃথক অবস্থান রয়েছে এবং সব সময় তারা আমীর খসরু মাহমুদকে ইতিবাচকভাবে দেখে।
ড. মঈন খান: ড. মঈন খান মূলত পশ্চিমা ধাঁচের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করেন। কিন্তু ভারতের কাছেও তিনি অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য এবং আস্থাভাজন ব্যক্তি। ভারতের সঙ্গে বৈরিতা নয়, বরং সুসম্পর্কের নীতি গ্রহণ করে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য। মঈন খান ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানাননি। বিএনপির বৈঠকে প্রকাশ্যে তিনি এধরনের কর্মসূচিকে আত্মঘাতী হিসেবে অভিহিত করেছেন বলেও জানা গেছে। ভারত বিরোধিতার যে নতুন জিকির বিএনপি তুলেছে তার বিরোধিতাকারীদের মধ্যে মঈন খান অন্যতম।
এরকম বেশ কিছু বিএনপি নেতা আছেন যারা ভারতের সঙ্গে এধরনের হঠকারি সম্পর্ক চান না, বৈরিতা চান না। বরং একটি সুস্থ রাজনৈতিক কর্মধারায় দেশের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে চান। তারা এখন বিএনপি এই নতুন হঠকারি কর্মসূচির ক্ষেত্রে কী করবেন সেটাই দেখার বিষয়।