বিএনপিরাজনীতি

আলো-আঁধারীর অদ্ভুত খেলায় মেতেছে বিএনপির নেতারা

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপিতে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম হল ‘ডাবল এজেন্ট’। বাইরে থেকে তিনি দেখাচ্ছেন বিএনপির জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দেবেন, বিএনপির জন্য ত্যাগ স্বীকার করবেন, বিএনপির জন্য তিনি প্রয়োজন হলে জেল জুলুম, নির্যাতন ভোগ করবেন। কিন্তু আবার গভীর রাতে সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করছেন, সরকারের সাথে হাত মেলাচ্ছেন এবং সরকারকে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করে দিচ্ছেন। আর এই সমস্ত যারা করছেন তাদেরকে বলা হচ্ছে ‘ডাবল এজেন্ট’। আবার বলা যায়, তারা আলো-আঁধারীর অদ্ভুত খেলায় মেতেছেন।

একদিকে তারা বিএনপির মধ্যে সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন বিএনপি নেতা হিসেবে প্রতিপন্ন করার জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। সকাল-সন্ধ্যা সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, সরকারকে গালমন্দ করছেন, সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের ব্যাপারে নানারকম কথা বার্তা ঘোষণা করছেন। আবার রাতের অন্ধকারে সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে বিএনপির অনেক গোপন তথ্য এবং পরিকল্পনা সরকারের কাছে ফাঁস করে দিচ্ছেন। বিএনপিতে এরকম বেশ কয়েকজন ‘ডাবল এজেন্ট’ ইতোমধ্যে নির্বাচনের আগে পরে চিহ্নিত হয়েছে। এখনও বেশ কয়েকজন আছেন সন্দেহের তালিকায়।

শাহজাহান ওমরের কথাই ধরা যাক। শাহজাহান ওমরকে মনে করা হত তিনি সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার একজন ব্যক্তি এবং তিনি যে ধরনের বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছিলেন তাতে বিএনপির যে কোন নেতাই তার প্রতি সম্মান দেখাতে পারেন, তার ওপর অত্যন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করতেই পারেন। কিন্তু শাহজাহান ওমর ছিলেন আসলে একজন ‘ডাবল এজেন্ট’। তিনি বাইরে সরকারের সমালোচনা করে ভিতরে ভিতরে সরকারের সঙ্গে গোপন যোগসাজশ করতেন এবং এবার নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছেন।

শাহজাহান ওমরের ‘ডাবল এজেন্ট’ রূপ প্রকাশ হয়ে গেছে বটে কিন্তু মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আসলে ‘ডাবল এজেন্ট’ ছিলেন কিনা তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা আচ্ছন্নতা কাটেনি।

মেজর হাফিজ বলছেন, সরকার তার বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়াচ্ছে। কিন্তু সরকারের কি এমন দায় পড়েছে যে মেজর হাফিজের সম্পর্কে সরকার কুৎসা ছড়াবে। বরং মেজর হাফিজ তার নিজের কথাবার্তাতেই নিজেই ফেঁসে যাচ্ছেন। তার কথার ফাঁক ফোকর গুলো এমন কদর্য হয়ে বেরিয়ে আসছে যাতে বোঝা যাচ্ছে যে, তিনি আসলে ‘ডাবল এজেন্ট’ এর ভূমিকা পালন করেছিলেন। মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন অবশ্য এখন পর্যন্ত স্বীকার করেন না যে, তিনি সরকারের সাথে গোপন যোগাযোগ করেছিলেন। যেমন বিএনপির অনেকেই স্বীকার করেন না যে, সরকারের সাথে তাদের গোপন যোগসাজশ আছে।

বিএনপির একজন নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, যিনি বিএনপিতে এখন ‘ডাবল এজেন্ট’ হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকেও মনে করা হয় ‘ডাবল এজেন্ট’। তিনি সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা নেন এমন তথ্যপ্রমাণ বিএনপির নেতাদের হাতে হাতে রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা সকলেই জানে।

বিএনপির অন্যতম নীতি নির্ধারক গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর গোপন সম্পর্কের কথা কারও অজানা নয়। নসরুল হামিদ বিপু তাকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেন বলেও কেরানিগঞ্জে গুঞ্জন আছে। দুজন একই এলাকার বাসিন্দার। মির্জা আব্বাসের সঙ্গেশাজাহান খানের গোপন যোগাযোগের কথাও আজকাল বিএনপিতে চর্চা হয়। শাজাহান খান বিএনপির অনেক হাঁড়ির খবর অকপটে জেনে নিয়ে সরকারের কাছে তা জানিয়ে দেন। এখন মির্জা আব্বাসকে কেউ কি ‘ডাবল এজেন্ট’ বলবেন? এটি বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ বলছেন যে, এখন বিএনপিতে প্রায় সবাই ‘ডাবল এজেন্ট’। বাইরে থেকে তারা সরকারকে ফেলে দেয়া হুমকি দেন কিন্তু গোপনে গোপনে সরকারের কাছ থেকে নানারকম সুযোগ সুবিধা নেন। আর যে কারণে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কোন গতি হয় না এবং ডাবল এজেন্টদের কারণে বিএনপি এখন মুখ থুবড়ে পড়ছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button