টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের ক্ষতে প্রলেপ দিতে ওয়ানডে সিরিজই এখন ভরসা বাংলাদেশের। ফলে জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করতে মুখিয়ে স্বাগতিকরা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে বাংলাদেশকে বোলিংয়ে পাঠায় শ্রীলঙ্কা। আগে ব্যাট করতে নেমে কুশল ও জেনিথ লিয়ানাগার অর্ধশতকে ৪৮.৫ ওভারে ২৫৫ রানে গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে শুরুতেই টপ অর্ডারের ব্যার্থতায় বিপদে পরে বাংলাদেশ। তবে অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত দুদার্ন্ত শতকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩২ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটের জয় বাংলাদেশ। তাতে তিন ম্যাচ সিরিজের ১-০তে এগিয়ে রইলো রিয়াদ-মুশফিকরা।
শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৫৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস শুরু করতে আসেন লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। তবে শুরুটা ভালো করতে পারেননি টাইগার ওপেনাররা। ইনিংসের প্রথম বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন কুমার দাস। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ব্যাট হাতে বাইশ গজে নামেন অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত।
শুরুর ধাক্কা সামাল দেবার আগেই দিলশান মাদুশঙ্কার দ্বিতীয় ওভারে ফেরেন আরেক ওপেনার সৌম্য। সাজঘরে যাবার আগে ৩ রান করেন তিনি। ফলে দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পরে বাংলাদেশ। এরপর তৃতীয় উইকেটে ব্যাট হাতে আসেন সম্প্রতি দারুণ ফর্মে থাকা তাওহীদ হৃদয়। তবে উইকেটে এসে বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি তিনিও।
দলীয় ২৩ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। যাবার আগে ৮ বলে তিন রান করেন তিনি। দলের এমন বিপর্যয় অবস্থায় ব্যাট হাতে চতুর্থ উইকেটে আসেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শান্তকে সঙ্গে চাপ সামলিয়ে জুটি গড়েন রিয়াদ। এই দুই জনের ব্যাটে ৬৯ রান আসে চতুর্থ উইকেটে।
তবে দলীয় ৯২ রানে রিয়াদ আউট হলে ভাঙে এই জুটি। সাজঘরে যাবার আগে ৩৭ বলে ৩৭ রান করেন তিনি। এরপর পঞ্চম উইকেটে ব্যাট হাতে আসেন মুশফিকুর রহিম। তাকে সঙ্গে নিয়ে দেখে শুনে খেলতে থাকেন শান্ত। আস্তে আস্তে থিতু হয়ে রানের চাকা সচল রাখনে দুই ব্যাটারই।
আর তাতে পঞ্চম বাংলাদেশী অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে শতকের দেখে পান শান্ত। অন্যদিকে মুশফিকও তুলে নেন অর্ধশতক। ফলে এই দুই জুটিতে জয়ের ভিত পেয়ে যায় টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত আর উইকেট না গেলে ৩২ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটের জয় পায় টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন দিলশান মাদুশঙ্কা।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন লঙ্কান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস। দলের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন পাথুম নিশাঙ্কা ও আভিষ্কা ফার্নান্দো। শুরু থেকেই দেখে খেলার পাশাপাশি বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন তারা। প্রথম পাওয়ার প্লে নির্বিঘ্নেই পাড়ি দেওয়ার পথে ছিলেন দুই ওপেনার। তবে ইনিংসের দশম ওভারে বাধ সাধেন তানজিম হাসান সাকিব। তার বলে উইকেটের পিছে ব্যক্তিগত ৩৩ রানে ক্যাচ তুলে দেন আভিষ্কা।
পরপর আরো দুই ওভারে দুই উইকেট শিকার করেন সাকিব। তার বলে স্লিপে থাকা সৌম্যের তালুবন্দী হন ৩৬ রান করা নিশাঙ্কা। আর ব্যক্তিগত ৩ রানে সাজঘরে ফেরেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। মাত্র ১৩ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন কুশল মেন্ডিস ও চারিথ আসালঙ্কা। দুই জনের ৪৪ রানের জুটি ভাঙেন মেহেদী মিরাজ। তার বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১৮ রান করেন আসালঙ্কা।
দলের বিপর্যয়ের মুখে হাল ধরেছেন অধিনায়ক মেন্ডিস। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছেন জানিথ লিয়ানাগে। ইনিংসের ৩৩তম ওভারে সাকিবের বলে অর্ধশতক পূরণ করেন মেন্ডিস। ৬৯ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটার। এরপর দলীয় ১৯৭ রানে ৭৫ বলে ৫৯ রান করে আউট হন মেন্ডিস।
মেন্ডিসের বিদায়ের পর ১৪ বলে ১৩ রান করে সাজঘরে ফিরে যান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। তার বিদায়ের পর ক্রিজে এসেই আউট হন মাহিশ থিকশানা। এরপর দলীয় ২৪৪ রানে ৬৯ বলে ৬৭ রান করে আউট হন লিয়ানাগে। শেষ পর্যন্ত ৪৮.৫ ওভারে ২৫৫ রানে অলআউট হয় লঙ্কানরা। বংলাদেশের হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও তানজিম সাকিব।