লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া প্রয়োজনে দলের নেতৃত্ব ছাড়তে রাজি—এমনটি জানিয়েছেন তিনি ভিডিও কনফারেন্সে দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে আলাপকালে। তবে তার এই দল ত্যাগ মানে পুরোপুরিভাবে দলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ নয়, দলে তিনি উপদেষ্টা বা অন্য কোন পদে থাকবেন। তারেক জিয়া এটাও বলেছেন যে তার পিতার আদর্শে দল গড়ে উঠেছে। কাজেই এই দলের সঙ্গে তার সম্পর্ক রক্তের।
বিএনপির ব্যর্থতা, আন্দোলন কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের হতাশা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটেই করণীয় নিয়ে আলোচনা হয় বিএনপিতে। এসময় বিএনপির সিনিয়র একজন নেতা নেতৃত্বের পরিবর্তন এবং নতুন করে কাউন্সিল অধিবেশনের কথাটি সামনে নিয়ে আসেন। নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রসঙ্গ আসতেই তারেক জিয়া বলেন যে, আমাকে নিয়েও যদি দলে কোন সমস্যা হয়, আমিও যদি দলের জন্য বোঝা হই তাহলে আমি নেতৃত্ব থেকে সরে যেতে রাজি আছি। এতে আমার কোনো আপত্তি নাই। তিনি এটিও বলেছেন যে, দলের ভিতর প্রয়োজনে শুদ্ধি অভিযান করা হবে। যারা যোগ্য এবং নেতৃত্ব দিতে সক্ষম তাদেরকে সামনের দিকে নিয়ে আসা হবে। কিন্তু বিএনপিকে শক্তিশালী করতে হবে।
নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিএনপির অধিকাংশ নেতাই বলেছেন যে, তাদের হতাশ হবার কিছু নেই। কারণ সামনের দিনগুলো তাদেরই। বিএনপির সামনের দিনগুলোতে আরও সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান সরকার নির্বাচন করে ফেললেও এখন পর্যন্ত তাদের জন্য স্বাভাবিক অবস্থা নাই। সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও একটা নেতিবাচক অবস্থা তৈরি হচ্ছে। বিএনপিকে ধৈর্য ধরতে হবে বলেও মন্তব্য করেন বিভিন্ন তৃণমূলের নেতারা। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় যে সামনে উঠে এসেছে তা হল, নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে, সেই হতাশা দূর করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন অনেকে।
তারা বলছেন, কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং তারা মনে করছেন যে এখন বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে। এই হতাশা কাটানোটাই বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে তারা মনে করছেন। হতাশা কাটানোর জন্য বিএনপির বিভিন্ন নেতারা একাধিক পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা, বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করা এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের কমিটি গুলোকে দ্রুত সম্পূর্ণ করার ওপর অনেকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন যে, হতাশ হওয়ার কিছু নেই- এই বার্তাটা দিতে হবে। বিশেষ করে যে সমস্ত নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হয়েছেন, যারা পলাতক রয়েছেন, তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সহ কয়েকজন পরামর্শ দিয়েছেন। সবকিছু মিলিয়ে বিএনপিতে একটা পরিবর্তনের বার্তা এসেছে গতকালের সিনিয়র নেতাদের বৈঠকে এবং এই পরিবর্তনটি কখন কি ভাবে হবে সেটি এখন দেখার বিষয়।
উল্লেখ্য যে, ২০১৮’র নির্বাচনের পর বিএনপির মধ্য থেকে পরিবর্তনের আওয়াজ এসেছিল। সে সময় দলের সিনিয়র নেতারা নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে নেতৃত্ব পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আহ্বানে সাড়া দেননি লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। এবার তারেক জিয়াকেই নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ডাক এসেছে। এখন দেখা যাক সেই ডাকে তারেক জিয়া সত্যি সত্যি সাড়া দেন কিনা।