জাতীয়বাংলাদেশ

নির্বাচনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের জবাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী

অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্রের জবাব দেয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নির্বাচন বাতিলের জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অনেকে আন্তর্জাতিকভাবেও জড়িত। তারা বাংলাদেশে তৃতীয় পক্ষকে ক্ষমতায় আনার কাজ করছে। আমরা আগামী ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের উপযুক্ত জবাব দেবো। গতকাল সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন সরকারপ্রধান কোটালীপাড়া ও মাদারীপুরের কালকিনিতেও নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রীর এসব জনসভায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এ সময় নিজ নির্বাচনী এলাকা টুঙ্গিপাড়ায় সাধারণ মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ৭ই জানুয়ারি আমাদের নির্বাচন। নৌকা মার্কায় আমরা ভোট করবো।

আপনারা ওইদিন সকালে সশরীরে এসে ভোট দিয়ে এই বিশ্বকে দেখাবেন, এই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং আমরা তা করতে জানি ও করতে পারি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আমরা করতে পারি। তিনি বলেন, আমার বড় শক্তি টুঙ্গিপাড়াবাসী। অনেক ঘাত- প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে চলতে হয়েছে; তারপরেও আপনারা সব সময় আমাকে স্নেহ, ভালোবাসা, সমর্থন দিয়ে আগলে রেখেছেন। আমাকে শক্তি দিয়েছেন, সাহস দিয়ে এই দেশের মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। সেই জন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি হচ্ছে খুনিদের পার্টি আর জামায়াত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীর পার্টি। জাতির পিতাকে যারা হত্যা করেছিল তাদের বিচার হবে না সেই আইন করেছিল জিয়াউর রহমান। সে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনীতে। আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের লাশ গুম করে ফেলেছে। এই হত্যাকাণ্ড তারা ঘটায় শুধু নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার জন্য। তাদের হাত থেকে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ কেউই রেহাই পায়নি।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি’র মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব নেই। ওরা মানুষকে মানুষ বলে মনে করে না। ক্ষমতায় থাকতে লুটপাট করে অর্থ পাচার করে বিদেশে পালিয়ে গেছে আর সেখানে বসে মানুষ খুন করার হুকুম দিচ্ছে। এটাই ওদের চরিত্র, কারণ তারা জানে এদেশের মানুষ আর তাদেরকে বিশ্বাস করে না। ২০১৮ নির্বাচনে সেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে তাদের কতো জনসমর্থন। আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারলে লন্ডনে বসে হুকুম দেবে আর আমার দেশের মানুষের ক্ষতি করবে, দেশের মানুষকে মারবে- সেটা হতে পারবে না। দরকার হলে ওটাকে লন্ডন থেকে টেনে এনে শাস্তি দেয়া হবে। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল বাশার খায়েরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল শেখের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর চাচা শেখ কবির হোসেন, গোপালগঞ্জ দুই আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল প্রমুখ।

এদিকে কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আরেক নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা উপস্থিত জনতার কাছে নৌকায় ভোট চান। বলেন, আমি আপনাদের ভালোবাসা আর সহযোগিতা চাই। আপনারা আমার শক্তি। কারণ আপনারা আমাকে বার বার নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়ন ও মানুষের সেবা করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কথা দিয়ে কথা রাখে, আমরা সরকারে এসে সারা দেশের উন্নয়ন করেছি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, বিনামূল্যে বই বিতরণ, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জমিসহ ঘর-ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, গ্রাম থেকে গ্রামে যেতে সংযোগ সড়ক, মহাসড়ক, বিনামূল্যে করোনার টিকা দিয়েছি। প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বীরনিবাস করে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, কোনো জমি অনাবাদি থাকতে দেবো না, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে, পরিবহন ভাড়া বেড়ে গেছে। আমরা ক্ষমতায় থাকলে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কোনো দুঃখ-দুর্দশা থাকবে না।

এসময় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার তো তিন শ’ আসনে যেতে হয়, যার কারণে আপনাদের কাছে আসা কম হয়, আপনারাই তো আমার দায়িত্ব নিয়েছেন, আমার নির্বাচন করে দেবেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম বাহাউদ্দীন নাসিম, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি সাবেক সিনিয়র সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ প্রমুখ।

এদিকে মাদারীপুরের কালকিনিতে নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি, সেখানে বিনিয়োগ হবে, দেশি-বিদেশি। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বাস করে, তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের অগ্রগতি। এই তারুণ্যেই আমরা উপযুক্তভাবে তৈরি করতে চাই, স্মার্ট তরুণ সমাজ হিসেবে। দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়তে চাই। কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে এ নির্বাচনী জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনা বলেন, যুব সমাজের জন্য কাজের ব্যবস্থা করেছি। কম্পিউটার ও ডিজিটাল ডিভাইস এগুলোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো, দিন বদলের সনদ দিয়েছিলাম, বাংলাদেশ ১৫ বছরে বদলে গেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সবদিকেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়ন করেছে। এই হলো বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমাদের লক্ষ্য হলো ২০৪১ সাল। এই ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলবো।

এ সময় তিনি বলেন, টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশের ধারাবাহিক একটা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নৌকা মার্কায় আছে বলেই এই উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে ও জেলা পর্যায়ে এমনকি তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, মানুষের যা যা প্রয়োজন। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী ৭ই জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button