প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ বছর পর শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছেন
২৬ ডিসেম্বর রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগমন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাবারের
পাঁচ বছর পর নিজের শ্বশুরবাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগমন উপলক্ষে এরই মধ্যে স্বজনরা নিয়েছেন ব্যাপক প্রস্তুতি। আয়োজন করা হয়েছে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাবারের।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) ফতেপুর গ্রামে নিজ বাসভবন “জয় সদনে” তিনি অবস্থান করবেন। বিকেলে পীরগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে রংপুর-৬ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সমর্থনে বিশাল জনসভায় ভাষণও দেবেন।
পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বিমানযোগে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। এরপর সড়কপথে তার শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামে যাবেন। সেখানে তার ছেলের অর্থায়নে নির্মিত “জয় সদন” ভবনে দুপুর পর্যন্ত অবস্থান করবেন। প্রথমে তিনি তার প্রয়াত স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কবর জেয়ারত ও ফাতেহা পাঠ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্কে নাতনি সাবাবা হোসেন ওহি জানান, তার দাদির শ্বশুরবাড়িতে আগমন উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিলবিলাতি আলু, খটখটিয়ার বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের ভর্তা, দেশি মাছ, পিঠাসহ ২০ ধরনের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি স্বজনদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাবেন।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বিয়ের পর প্রয়াত স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়াসহ যে ঘরটিতে থাকতেন, সেটিও সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখানে এলেই প্রধানমন্ত্রী এই ঘরটির নানান স্মৃতি রোমন্থন করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।”
এবার সময় কিছুটা কম পেলেও সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ড. ওয়াজেদ মিয়ার ভ্রাতুষ্পুত্র, জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাদায়েত হোসেন বকুল বলেন, “বড় আব্বা মরহুম ড. ওয়াজেদের পারিবারিক বসতভিটায় সজীব ওয়াজেদ জয় একটি তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জয় এলে সেখানেই অবস্থান করেন। এবারও প্রধানমন্ত্রী সেই বাড়িতেই অবস্থান করবেন।”
সাদায়েত হোসেন বলেন, “আমাদের অনেক স্বজন আছেন, যাদের সঙ্গে সবসময় দেখা-সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারা সবাই আসবেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাবেন।” এছাড়াও পারিবারিক নানান বিষয়ে আলোচনাও হবে বলে জানান তিনি।
পৌর মেয়র এবং পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তানজিবুল ইসলাম শামীম জানান, বেলা ৩টায় পীরগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নিজের নির্বাচনি এলাকা রংপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সমর্থনে নির্বাচনি সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। জনসভা সফল করার জন্য চলছে ব্যাপক মাইকিংসহ প্রচার-প্রচারণা। সভামঞ্চ নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ চলছে পুরোদমে।
জনসভার প্রস্তুতি সম্পর্কে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মকবুল হোসেন সরদার বলেন, “ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের উপদেশ মোতাবেক মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। নারীদের বসার জন্য পর্যাপ্ত চেয়ার রাখা হচ্ছে। এছাড়া দুটি মেডিকেল টিম জনসভাস্থলের দুই পাশে অবস্থান করবে। তারা জনসভায় আগত কেউ অসুস্থ হলে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।”
জনসভায় কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ লাখ মানুষের সমাগম হওয়ার আশা করছেন জানিয়ে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “পীরগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের উপজেলা থেকেও মানুষের ঢল নামবে জনসভায়।”
প্রধানমন্ত্রী পীরগঞ্জের উন্নয়নের জন্য যা করেছেন, তা এক কথায় অভাবনীয় এবং অকল্পনীয় উল্লেখ করে পীরগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিগত ১৫ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পীরগঞ্জে অভাবনীয় উন্নয়ন করেছেন। রাস্তাঘাট, ব্রিজ থেকে শুরু করে নেভাল অ্যাকাডেমি, ডিজিটাল সেন্টারসহ এই এলাকায় অনেক কিছুই হয়েছে। পীরগঞ্জের সব স্তরের মানুষ তার প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী যেসব ওয়াদা করেছিলেন, তার প্রায় সবই বাস্তবায়ন করেছেন। আর যেসব কাজ অসমাপ্ত রয়েছে, সেগুলো সম্পন্ন করার জন্য তিনি নিজেই ঘোষণা দেবেন বলে আশা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনে এলাকায় বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। এলাকার পুত্রবধূকে দীর্ঘদিন পর কাছ থেকে একনজর দেখার প্রত্যাশায় উন্মুখ আছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় ভ্যানচালক মমতাজ উদ্দিন বলেন, “শেখ হাসিনা পীরগঞ্জের পুত্রবধূ। তার কাছে আমাদের চাওয়া-পাওয়া আছে। তিনি পীরগঞ্জকে আরও উন্নত সমৃদ্ধ করবেন, তবে এজন্য আমাদের দাবি করতে হয় না। উনি জানেন পীরগঞ্জের কী কী উন্নয়ন করা দরকার।”