লাঙ্গলের বিপরীতে নৌকা থাকবে না ২৬ আসনে
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৬টি আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির (জাপা) ভোটের সমঝোতা হয়েছে। উভয় দলের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এসব আসনে লাঙ্গল প্রতীকের বিপরীতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থাকবেন না। ২৬টির মধ্যে ২৩টিতে বর্তমানে জাপার সংসদ সদস্য রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও জাপার নেতাদের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির (নানক), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন (নাছিম) ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম উপস্থিত ছিলেন।
জাপার পক্ষে ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ কো–চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু)। তবে বৈঠক শেষে কোনো পক্ষই গণমাধ্যমের কাছে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গতকালের বৈঠকে বর্তমান সংসদে থাকা জাপার ২৩টি আসনসহ মোট ২৬টি আসন নিয়ে ভোটের সমঝোতা হয়। এই সমঝোতায় জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক, জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের প্রায় সবার আসন নিশ্চিত করা হয়েছে।
বর্তমান সংসদে জাপার যে ২৩ জন সংসদ সদস্য আছেন তাঁদের মধ্যে চারজন ছাড়া বাকিরা এবারও দলীয় প্রার্থী হবেন। এই চারজনের মধ্যে রওশন এরশাদ ও রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ এবার নির্বাচন করছেন না। জাপার সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান (রাঙ্গা) ও রুস্তম আলী ফরাজী দল থেকে ইতিপূর্বে বাদ পড়েছেন।
মসিউর রহমানের নির্বাচনী এলাকা রংপুর-৩ আসনে এবার জাপা প্রার্থী করেছে এইচ এম শাহরিয়ার আসিফকে। তিনি এরশাদের ভাতিজা। আর রুস্তম আলী ফরাজীর পিরোজপুর-৩ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে মাসরেকুল আজমকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে সমঝোতার জন্য জাপা ৫০টি আসনে দলীয় প্রার্থীদের তালিকা দেয় আওয়ামী লীগকে। ওই তালিকায় রওশন এরশাদের নির্বাচনী এলাকা ময়মনসিংহ-৪ আসন ও রুস্তম আলী ফরাজীর পিরোজপুর-৩ আসনে এবারের প্রার্থীদের নাম থাকলেও পরে সমঝোতার তালিকায় এ দুটি আসন ছিল না। রংপুর-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মসিউর রহমান এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
জাপা এই আসনটি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করেছে শাহরিয়ার আসিফের জন্য। ৫০ আসনের তালিকায় দলের সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের জন্য পটুয়াখালী-৪ আসনটি চেয়েছে জাপা। কিন্তু গত রাতের বৈঠকে আসনটি আওয়ামী লীগ নিশ্চিত করেনি বলে জানা গেছে। আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মুহিব্বুর রহমান। তবে রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী বরিশাল–৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। সমঝোতায় এই আসন এবারও পেয়েছে জাপা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব আসনে লাঙ্গল প্রতীকের বিপরীতে নৌকা প্রতীক থাকবে না। আমরা আসনগুলোর ব্যাপারে দুই পক্ষ একমত হয়েছি। এখন আসনগুলোতে জাতীয় পার্টি কাকে প্রার্থী করবে, সেটা তাদের ব্যাপার।’
সমঝোতা বৈঠকসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, জাপার দুই নেতা অন্তত ৪০টি আসনের জন্য শেষ পর্যন্ত দেনদরবার করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের মধ্যস্থতাকারী নেতারা তাতে সম্মত হননি। যদিও জাপা ২৬টি আসনে সন্তুষ্ট কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সমঝোতা বৈঠকে থাকা আওয়ামী লীগের একজন নেতা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, জাপা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বৈঠক শেষে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মুজিবুল হককে একাধিকবার ফোন করলেও তাঁরা ধরেননি। জাপার অন্য কেউও এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেননি।
এ দিকে সমঝোতা বৈঠকের পাশাপাশি জাপা নির্বাচনী প্রস্তুতিও চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের কাগজপত্র চূড়ান্ত করেছে দলটি। ২৮৮টি আসনের প্রার্থীদের লাঙ্গল প্রতীকের কাগজ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে দলের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
নৌকা দরকার নাই। যদি সতন্ত্র থাকে তাহলেই চলবে। জাতীয় পার্টির একজনও পাশ করবেনা।