আইন-আদালত

সাড়ে চার মাসে বিএনপির দেড় হাজার নেতা-কর্মীর সাজা

সাড়ে চার মাসে বিভিন্ন মামলায় বিএনপির কমপক্ষে দেড় হাজার নেতা-কর্মীর সাজা দিয়েছেন আদালত। বুধবার এক দিনে সর্বোচ্চ ১১৯ জন নেতা-কর্মীর সাজা হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, সরকার এখন বিরোধী নেতা-কর্মীদের দমনে আদালতকে সরাসরি ব্যবহার করছে।

অবশ্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দাবি করছেন, ‘যা হচ্ছে আইন মেনেই হচ্ছে।’ বুধবার মোট ছয়টি মামলায় বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের ১১৯ জন নেতা-কর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রায়গুলো দিয়েছেন। ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দণ্ডিত ১১৯ জনের মধ্যে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম, হাজারীবাগ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল আজিজ, বনানী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।

যে ছয়টি মামলায় বুধবার রায় দেওয়া হয়েছে তারমধ্যে পাঁচটি মামলার বাদি পুলিশ এবং ২০১৮ সালে দায়ের করা, আর একটি মামলা ২০১৩ সালের। মামলাগুলোর মধ্যে দুইটি উত্তরখান থানায় আর বাকি চারটি মামলা ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী ও কামরাঙ্গিরচর থানার। ওইদিন হাজারিবাগ থানার আরেকটি মামলায় সবাইকে খালাস দেওয়া হয়েছে। মামলাগুলোতে মূল অভিযোগ পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, হামলা ও ভাঙচুর। বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির সময়ে ওই ঘটনাগুলো ঘটে বলে অভিযোগ করা হয়।

আদালত থেকে পাওয়া তথ্য মতে, এনিয়ে গত সাড়ে চার মাসে ৭৩ মামলায় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের কমপক্ষে এক হাজার ১৪৫ জন নেতা-কর্মীর সাজা হলো। জামায়াতের কিছু নেতা-কর্মীও দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে আছেন। কয়েকজন আছেন যারা একাধিক মামলায় সাজা পেয়েছেন।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, ‘আমার জানা মতে গত আাড়াই মাসেই এক হাজার ২৬ জনকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে ৬৯টি মামলায়। এই মামলাগুলো ২০১৩-১৪ এবং ২০১৮ সালের। মামলাগুলোর কথিত অভিযোগ হলো পুলিশের কর্তব্যকর্মে বাধা এবং নাশকতার। মামলাগুলো আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি চলার সময়ে। বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের মধ্যম পর্যায়ের নেতারাই মূলত এইসব মামলার আসামি।’

তার দাবি, ‘গুম হওয়া, মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সাজা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি উচ্চ আদালতের বিচার স্থহিত করা মামলায়ও সাজা দেয়ার একটি নজির আমরা পেয়েছি। তাই বলা হচ্ছে বিচার প্রক্রিয়াকে এখন কবরে পাঠানো হচ্ছে। এটা বিচারের নামে পলিটিক্যাল ট্রায়াল।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘মামলাগুলোর রায় রাজনৈতিক কারণে দেওয়া হচ্ছে। ঠিক মত সাক্ষীও নেওয়া হচ্ছেনা। বিচারক শুধু রায় পড়ছেন। কয়েকটি কোর্ট এই কাজ করছে। আদালতকে ব্যবহার করে বিরোধীদের দমন ছাড়া আরও উদ্দেশ্য হলো এরা যেন কোনো পর্যায়ে নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারেন। সেজন্য অধিকাংশকেই দুই বছরের বেশি জেল দেওয়া হচ্ছে। সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয় না বছরের পর বছর। দুর্নীতি ও ব্যাংক লুটপাটের মামলার বিচার হয় না। কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার স্পিডি ট্রায়াল হচ্ছে। এটা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘আমরা ধারণা করেছিলাম সংবাদমাধ্যমের লেখালেখি ও সমালোচনার কারণে এই ধরনের বিচার বন্ধ হবে। কিন্তু সেটা বন্ধ না হয়ে কিছু রাজনৈতিক মামলার বিচার আরও স্পিডি হচ্ছে। তাতে আমার মনে হচ্ছে শক্ত পরিকল্পনা করেই এই কাজ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও জনগণকে মুখোমুখি অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ভাল না।’

তিনি বলেন, ‘বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্ত ও বিচার এক ধরনের লাইনে চলে। আর যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের জন্য আরেক ব্যবস্থা। দুই লাইনে চলার কারণে মানুষ মনে করে আদালতকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর মানুষের এই যে ধারণা তা দূর করতে সরকারও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেনা।’

তবে ঢাকা মহানগন দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু দাবি করেন, ‘রাজনৈতিক কারণে কাউকে দণ্ড দেওয়া হচ্ছে না। যাদের বিরদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হচ্ছে তারাই দণ্ডিত হচ্ছেন।’

পর্যাপ্ত সাক্ষ্য গ্রহণ না করে রায় দেওয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘হঠাৎ কোনো রায় হচ্ছে না। মামলাগুলো পুরানো। দীর্ঘদিন ধরেই বিচার কাজ চলছিল। এখন রায় হচ্ছে।’

মৃত ও গুম হওয়া ব্যক্তির বিরুদ্ধে রায় হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসামিরা পলাতক অবস্থায় মারা গেলে তা তো আদালতকে জানাতে হবে। না জানালে আদালত জানবেন কীভাবে? হাইকোর্ট যদি কোনো মামলার বিচারকাজ স্থগিত রাখার আদেশ দেন তাও বিচার আদালতকে জানানো আসামি পক্ষের দায়িত্ব।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button