ক্রিকেটখেলা

মিরপুর টেস্টে কেমন হবে টাইগারদের টিম কম্বিনেশন?

ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শতভাগ স্পিনবান্ধব পিচে টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ। একটি ছোট পরিসংখ্যানেই মিলবে তার প্রমাণ। ২০১৬ সালে অক্টোবরে শেরে বাংলায় ইংলিশদের বিপক্ষে ১০৮ রানের বড় ব্যবধানে জয়ের রূপকার ছিলেন ৩ স্পিনার- মেহেদী হাসান মিরাজ, সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম। অফস্পিনার মিরাজ একাই ওই টেস্টে ১২ উইকেট (৬/৮২ ও ৬/৭৭) দখল করে ম্যাচসেরার পুরস্কারও পান। বাকি ৮ উইকেট জমা পড়ে অপর ২ স্পিনার সাকিব (১/৪১, ৪/৪৯) ও তাইজুলের (৩/৬৫ ও ০/৭) পকেটে।

আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১৭ সালের অক্টোবরে ২০ রানে জয়ের নায়ক সাকিব। ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে ৮৪ রানের ইনিংসের পাশাপাশি স্পিনজাদুতে ম্যাচে ১০ উইকেটশিকারি (৫/৬৮ ও ৫/৮৫) সাকিবই ছিলেন ম্যাচসেরা। সাকিবের ওই অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সটাই গড়ে দেয় পার্থক্য। অসিদের বাকি ১০ উইকেটের ৯ টিই পান অপর ২ স্পিনার (মিরাজ ৩/৬২ ও ২/৮০ ) ও তাইজুল (১/৩২ ও ৩/৬০)।

এবার সিলেটে স্বাগতিক দলে ছিলেন ৩ স্পিনার। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ১০ উইকেটের পতন ঘটিয়েছেন। অথচ উইকেট এত স্পিন সহায়ক ছিল না। সঙ্গে জয়ে টাইগার ব্যাটারদের ভূমিকাও ছিল প্রচুর। সবচেয়ে বড় কথা, সিলেটে শান্ত বাহিনী যে ক্রিকেটটা খেলেছে, তা ওই পরিবেশ আর নিউজিল্যান্ডের বর্তমান দলটির শক্তি-সামর্থ্যের আলোকে যথেষ্ট ও শ্রেষ্ঠতম ছিল। তার প্রমাণ আছে স্কোরলাইনে। দুই ইনিংসেই টাইগারদের স্কোর ৩০০ পেরিয়ে (৩১৭ ও ৩৩৮) গিয়েছিল। অন্যদিকে টিম সাউদির দল প্রথম ইনিংসে তিনশোর্ধ্ব (৩১৭) করলেও পরেরবার ১৮৫ রানেই থেমেছে। যে কারণে ১৫০ রানের বড় জয় পেয়েছে টাইগাররা।

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দল নির্বাচন ও উইকেটের চরিত্র বুঝে দল সাজানো এবং ক্রিকেটার নির্বাচন; সব কিছুতেই দূরদর্শিতার ছাপ রাখে টিম ম্যানেজমেন্ট। টস জেতার পর আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্তটাও দারুণ কাজে দিয়েছে। সেই সাথে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট ও বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলের বলে জ্বলে ওঠা বাংলাদেশের সাফল্যকে করে ত্বরান্বিত। পাশাপাশি ব্যাটার ও বোলাররা নিজ নিজ করণীয় কাজগুলো যথাযথভাবে পালন করেছেন।

ওপেনিং তেমন ভালো না হলেও দুই ইনিংসেই একজন করে টাইগার টপঅর্ডার মোটামুটি বড় ইনিংস খেলে পুষিয়ে দিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ওপেনার মাহমুুল হাসান জয় (৮৬) আর দ্বিতীয় ইনিংসে শান্তর দুর্দান্ত সেঞ্চুরি (১০৫) হাঁকানো ইনিংস দলকে ৩০০’র ঘরে পৌঁছে দেয়।

এছাড়া মুমিনুল হক ৩৭ ও ৪০ রানের দুটি মাঝারি ইনিংস খেলেন এবং দ্বিতীয় ইনিংসে দলপতি শান্তর সঙ্গে ৯০ রানের বড় জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে দিয়েছেন। অভিজ্ঞ ব্যাটর মুশফিকুর রহিম (৬৭) এবং অলরাউন্ডার মিরাজ (৫০*) দ্বিতীয় ইনিংসে মিডলঅর্ডারে রান করে দলকে ৩৩০’র ঘরে নিয়ে যান।

অন্যদিকে বোলিংয়ে মূল কাজটি করেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। ব্লাক ক্যাপসদের ২০ উইকেটের মধ্যে একাই ১০ উইকেটের (৪/১০৯ ও ৬/৭৫ ) পতন ঘটান এই বাঁহাতি স্পিনার। টম ল্যাথাম, ডেভন কনওয়ে, গ্লেন ফিলিপস, হেনরি নিকোলস, ড্যারিল মিচেল আর কেন উইলিয়ামসনের মতো নামী ও দক্ষ ব্যাটাররাও তাইজুলকে ঠিকমতো খেলতে পারেননি।

যে কারণে ১০ উইকেট তুলে তাইজুল হয়েছেন ম্যাচসেরা। এছাড়া পেসার শরিফুল ইসলাম, মিরাজ ও নাইম হাসানও ভালো সহযোগিতা করেছেন। তাদের সাঁড়াশি বোলিংয়েই দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৮৫ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস। এখন দেখার বিষয় হলো, ঢাকা টেস্টে ওই কাজগুলো ঠিকমতো হয় কিনা! সিলেটে মাত্র ৪ জন বোলার (তিন স্পিনার- তাইজুল, মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসান) আর একমাত্র পেসার শরিফুল ইসলামকে দিয়ে একাদশ সাজানো হয়।

শেরে বাংলায় কী হবে? এ মাঠেও কি ৩ স্পিনার খেলবেন? একজন মাত্র পেসার নিয়ে মাঠে নামবে শান্তর দল? ইতিহাস জানাচ্ছে, এই মাঠে চলতি বছরের এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সমান ৩ জন করে পেসার ও স্পিনার আর জুনে সর্বশেষ টেস্টে আফগানদের বিপক্ষে ৩ পেসারের সাথে খেলেছিলেন ২ স্পিনার।

শেরে বাংলায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টেস্টে টিম বাংলাদেশের কম্বিনেশন কেমন হবে? আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে এ বছর হওয়া ওই ২ টেস্টের মতো এই ম্যাচেও কি ৩ পেসার থাকবেন একাদশে? নাকি সিলেটের মতো আবারও ৩ স্পিনারের সঙ্গে ১ পেসারকেই খেলতে দেখা যাবে?

প্রেস কনফারেন্সে এমন প্রশ্ন করা হলেও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তা পাশ কাটিয়ে গেছেন। বলেছেন, কন্ডিশন আর প্রতিপক্ষের ঘাটতি ও দুর্বলতা দেখেই দল সাজানো হবে। তিনি আরও যোগ করেন, শেরে বাংলার উইকেট ২-৩ সেশন খেলা না হলে বোঝাও কঠিন। হাথুরুর কথায় এটি পরিষ্কার যে, উইকেট নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় টাইগার কোচ। কাজেই একাদশ নিয়ে এখনও দোটানায় টিম ম্যানেজমেন্ট।

তবে এর আগে যেহেতু মিরপুরে পেস আক্রমণে প্রাধান্য দিয়ে (৩ পেসার) জিতেছিল বাংলাদেশ, তাই টিম ম্যানেজম্যান্ট কমপক্ষে একজন পেসার বাড়ানোর কথা ভাবতে পারে। সেক্ষেত্রে খালেদ আহমেদের সুযোগ মিলতে পারে একাদশে। তাকে ঢাকা টেস্টের আগে অনুশীলনে বেশ সিরিয়াস দেখা গেছে। টিম কম্বিনেশনে তাই সিলেটের মতো এক পেসার না নিয়ে দুই পেসার খেলানো হতে পারে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button