নির্বাচনবাংলাদেশরাজনীতি

আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ‘ডামি’ প্রার্থীর বিড়ম্বনায় পড়েছে

বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না আসার ব্যাপারে অনড় বিএনপি। ধারাবাহিক আন্দোলনে ব্যস্ত দলটি। এমন অবস্থায় বিএনপিবিহীন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহনযোগ্য করতে দলের পাশাপাশি অধিকাংশ আসনে ডামি প্রার্থী ‘স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জমিয়ে তুলতে চায় দলটি। তবে এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ও সংকটে মোকাবিলা করতে হবে ক্ষমতাসীন দলটিকে।

সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করার পাশাপশি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে দলীয় বিশৃঙ্খলা। এছাড়াও রাজপথের প্রধান বিরোধী দলকে বাহিরে রেখে এই নির্বাচন কতটা উৎসবমুখর হবে এবং দেশে-বিদেশে নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে- এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা তেমনটি মনে করছেন না। তাদের ভাষ্যমতে- নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পরপরই সারাদেশে ব্যাপক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ডামি প্রার্থী থাকলেও কোথায় সংঘাত-সহিংসতার শঙ্কা নেই।

আগামী ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। নির্বাচন সামনে রেখে ইতিমধ্যেই ২৯৮টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ। চূড়ান্ত প্রার্থীদের ‘নৌকা’ প্রতীক বরাদ্দের চিঠি বিতরণ করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। তৃণমূলে শুরু হয়েছে উৎসব। এমন অবস্থায় আলোচনায় আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী। স্বতন্ত্রের ব্যানারে নির্বাচনের অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এই দৌড়ে এগিয়ে দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা। সব মিলিয়ে সারা দেশের প্রায় প্রতিটি আসনেই ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মনোনয়নপত্রও কিনতে শুরু করেছেন অনেকেই। ফলে প্রধান প্রতিপক্ষ মাঠে না থাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এবার নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ঘরের প্রার্থীরাই। এ নিয়ে টেনশনে আছেন দলের অনেক প্রার্থী। শেষ পর্যন্ত দলের ডামি প্রার্থীরা ভোটের মাঠে থাকলে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে দলটির তৃণমুলে।

অথচ বিএনপি বিহীন নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণ মূলক করতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে নমনীয় থাকার কথা বলেছিল আওয়ামী লীগ। তারপরও পদধারী আওয়ামী অনেক নেতা ও বর্তমান কয়েকজন সংসদ সদস্য মনোনয়ন না হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আর এসব প্রার্থীদের বিষয়ে দলের অবস্থান কী হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে হলে দলের মনোনীত প্রার্থীকে অবগত করতে হবে। যদি দলীয় প্রার্থীকে অবগত না করে কেউ যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়- সে আর আওয়ামী লীগ থাকবে না। কারণ ডামি প্রার্থী এক জিনিস, স্বতন্ত্র প্রার্থী এক জিনিস ও বিদ্রোহী প্রার্থী আরেক জিনিস। সহিংসতা তো প্রশ্নই ওঠে না। বরং যারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে যাবে- তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

তিনি আরও বলেন, দলীয় নেতাকর্মীরা দলের প্রতি প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতি আস্থাশীল। তিনি যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন- সবাই তাকেই মেনে নিয়েছেন। তবে কেউ কেউ ভিন্ন অযুহাতে এগিয়ে যাচ্ছে নির্বাচনের দিকে। এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আর দলটির উপদেষ্টার পরিষদের সদস্য মো. রশিদুল আলম মানবকণ্ঠকে বলেন, ডামি প্রার্থীর বিষয়টি আমাদের নেত্রীর সিদ্ধান্ত। নির্বাচন বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তিনি নির্বাচনকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ করার জন্য সব চিন্তা করেই এই ঘোষণা দিয়েছেন।

একাধিক প্রার্থী থাকায় বিশৃঙ্খলা হবে না দাবি করে তিনি আরও বলেন, দলীয় প্রার্থীদের চিঠি দেয়া হয়েছে। সবাই চিঠি নিয়ে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ছুটে গেছেন। মনোনয়নপত্র সাবমিট হওয়ার পর নির্বাচনী উৎসব শুরু হয়ে যাবে। নির্বাচনে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ দলের জন্য কখন কি সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সঠিক জানে।

নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকে বিদেশীদের চাপ রয়েছে সরকারের উপর। অবাধ, সুষ্টু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে মনযোগী সতর্ক দৃষ্টি রাখছে তারা। নির্বাচনে আসবে না বিএনপি। এমন সিদ্ধান্তের উপর ভর করে আন্দোলনে ব্যস্ত দলটি। বিএনপিবিহীন নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাধারণ ভোটাররা নির্বাচনমুখী হবে কি না তা নিয়েও বাড়তি চাপ থাকবে নির্বাচন কমিশনের উপর। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেকদের ভাষ্যমতে- কতগুলো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো সেটি বড় কথা নয়- নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা স্বাধীনভাবে নিজেদের ভোটার অধিকার প্রয়োগ করতে পারছে কি না? ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাবে কি না। সেগুলো বিষয়ে গুরুত্ব পাবে। তাহলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে। নইলে কিন্তু নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার সুযোগ নেই। তবে বিএনপির বিহীন নির্বাচন হলে এবং আওয়ামী লীগের দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলে বিশৃঙ্খলার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না বলে মনে করেন তারা। বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সহিংসতার পথেই এগুবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নির্বাচনে নিজেদের ভোট প্রয়োগে ভোটারদের স্বাধীনতা থাকতে হবে। নির্বাচনে যদি সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসেন এবং ভোট দেন- তাহলে নির্বাচন অংশগ্রহন ও প্রতিযোগিতা বলতে যা বোঝায় তাই হবে। সাধারণ ভোটের অংশগ্রহণেই ভোট উৎসবমুখর হয়। তিনি আরও বলেন, কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না সেটা সেই রাজনৈতিক দলের সিদ্দান্ত। জনগণ ভোটার অধিকার নিশ্চিত করা গেলেই তাহলে নির্বাচন অংশগ্রহণ মূলক বলা যায়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সব জায়গায় দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। নির্বাচন অংশগ্রহনমূলক করার জন্য ডামি প্রার্থীও দিবে।

দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেউ যদি স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচন করতে চান। তাহলে তাতে কোনো বাঁধা নেই। এতে কিন্তু যারা সত্যি কারের জনপ্রিয় তারাই নির্বাচিত হয়ে আসবে। ভোটাররা স্বাধীন ভাবে ভোট দিয়ে নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করবে। এবার বিশৃঙ্খলা হবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। স্বতন্ত্র বা ডামি প্রার্থীদের দলের পক্ষ থেকে উৎসাহিত করার কথা বলা হলেও এবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফ্রি স্টাইল হবে না।

তিনি বলেন, ডামি প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়টা স্পষ্ট হবে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফ্রি স্টাইল হবে না। এ ছাড়া ১৪ দলের কারা কারা মনোনয়ন চায়, সেটা দেখতে হবে। যারা বিজয়ী হবেন তাদের অবশ্যই মনোনয়ন দেয়া হবে। এর মধ্যে জোটের আসন সমন্বয় করা হবে।

Back to top button