আইন-আদালতএক্সক্লুসিভজাতীয়ঢাকাবাংলাদেশবিএনপিরাজনীতি

এক মাস কারাবন্দি থাকার পর মুক্ত মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস

টানা এক মাস কারাবন্দি থাকার পর মুক্ত হয়েছেন, বিএনপি মহাসচিব  মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। উচ্চ আদালতের জামিনে সোমবার সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিএনপি’র এই দুই শীর্ষ নেতা মুক্ত হন।

মুক্তি পেয়ে রাতেই নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান তারা। এ সময় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী মির্জা ফখরুলকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। তাদের মুক্তিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন দলীয় কর্মীরা।

এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের পিছু হঠার সুযোগ নেই। আন্দোলনের মাধ্যমেই আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো। আমাদের যারা কারাগারে আছে তাদের মুক্ত করতে হবে। আন্দোলন আরও তীব্র করে তুলতে হবে। ১১ তারিখ আমাদের গণঅবস্থান আছে। আন্দোলন সফল করার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। এই সরকারকে পরাজিত করাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। জেল থেকে বের হয়ে আমাদের আবার নতুন অঙ্গীকার, বিজয় না হওয়া হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতেই থাকবে।

তিনি বলেন, আল্লাহ্ তায়ালার ইচ্ছা ও আপনাদের আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা মাত্র দুইজন মুক্তি পেয়েছি। আরও সবাই এখনো কারাগারে। শুধু বন্দি নয়, তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। একটা সেলের মধ্য ৫-৭ জনকে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে।

মুক্ত হয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গ্রেপ্তার নির্যাতন করে মামলা দিয়ে আমাদের দমন করতে পারবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পরাজিত করবো ইনশাআল্লাহ্। যত বেশি নির্যাতন করবে তত বেশি নেতাকর্মীরা জেগে উঠবে।

তিনি বলেন, আমাদের পার্টি অফিস থেকে চারশ’র ওপর নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে তারা (সরকার) মনে করেছিল, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন বন্ধ করে দিতে পারবে। কিন্তু পারেনি। আপনারা সফলভাবে কর্মসূচি পালন করেছেন।আজকে গোটা বাংলাদেশ প্রতিবাদের জড়ে প্রকম্পিত হয়েছে।

এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি সময়ের ব্যাপার। আপনাদের আন্দোলনে চাপের মুখে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে। আমরা বৃহত্তর সংগ্রামের মধ্যে আছি। এই দেশের মাটি, মানুষকে রক্ষা করতে হবে। মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষা করতে হবে।

ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ নিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন,  সমাবেশের স্থান নির্ধারণ নিয়ে অস্থির অবস্থার মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়। আমার অপরাধ ছিল আমি সংঘর্ষ এড়িয়ে গেছি। সরকারকে বলবো বিএনপি সন্ত্রাসী দল নয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় তারেক রহমান তাদের পরিবারের খোঁজ নেয়ায় ধন্যবাদ জানান তিনি।  আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ খালেদা জিয়ার মুক্তি তরান্বিত করা হবে বলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বিএনপি’র এই সিনিয়র নেতা।

এর আগে সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার সময় সেখানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হন। কারাগার থেকে দুই নেতা বেরিয়ে এলে নেতাকর্মীরা স্লোগান দিয়ে তাদের স্বাগত জানান। পরে গাড়িতে করে তারা সরাসরি দলীয় কার্যালয়ে চলে যান।

গত ৩রা জানুয়ারি মির্জা ফখরুল ইসলাম ও মির্জা আব্বাসকে ৬ মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কেন স্থায়ী জামিন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। পরদিন তাদের জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

ওই আবেদনের শুনানির জন্য রোববার ৮ই জানুয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন চেম্বার আদালত। এদিন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানিতে তাদের জামিন বহাল রাখা হয়। এর আগে মোট চারবার ফখরুল ও আব্বাসের জামিন আবেদন নাকচ করেন নিম্ন আদালতের বিচারকেরা। পরে হাইকোর্টে আবেদন করেন তারা।

গত বছরের ৭ই ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন বিএনপি কর্মী নিহত হন এবং পুলিশসহ অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। সংঘর্ষের পর রাতের বেলা বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ।

পরদিন পল্টন, মতিঝিল, রমনা ও শাহজাহানপুর থানায় পৃথক চারটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এতে বিএনপি’র দুই হাজার ৯৭৫ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ৭২৫ জনের। সেখানে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের নাম ছিল না।

৮ই ডিসেম্বর গভীর রাতে নিজ নিজ বাসা থেকে ফখরুল ও আব্বাসকে আটক করে পুলিশ। দু’জনকে প্রথমে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন তাদের পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

বিএনপির কার্যালয়ে এ সময় অন্যদের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, দলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদল সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Back to top button