আওয়ামী লীগএক্সক্লুসিভবাংলাদেশরাজনীতি

শামীম ওসমান কে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন খালেদ মুহিউদ্দীন

শামীম ওসমান। নামেই যার পরিচয়। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এক সময় শামীম ওসমান আর আওয়ামী লীগ প্রতিশব্দের মত ছিল। কিন্তু সেই অবস্থা পাল্টে গেছে। নারায়ণগঞ্জে এখন সেলিনা হায়াৎ আইভীর উত্থান ঘটেছে, শামীম ওসমান অনেকটাই কোণঠাসা। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শামীম ওসমান একটি ব্যাপক আলোচিত নাম।

নানাভাবে তিনি আলোচিত-সমালোচিত। সবসময় তাকে মনে করা হয় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কণ্ঠস্বর।*কিন্তু সত্যি কি তাই? তিনি আসলে আওয়ামী লীগের জন্য কতটুকু কাজ করেন আর কতটাই বা নিজের স্বার্থ আদায়ের জন্য কাজ করেন, এই প্রশ্নটি এখন ব্যাপকভাবে উঠেছে। দু’দিন আগেই খালেদ মুহিউদ্দীন প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মানহানিকর বক্তব্যের জন্য সম্প্রতি একজন বিএনপি কর্মীকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে খালেদ মুহিউদ্দীন যে মন্তব্য করেছেন তা রীতিমতো আপত্তিকর এবং অমার্জনীয়।

খালেদ মুহিউদ্দিনের এই অনুষ্ঠানটিতে অনেকেই যোগদান করেন না। আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে ডাকা হলেও সেখানে যান না। কিন্তু শামীম ওসমান এই অনুষ্ঠানে গিয়েছেন এবং গুম নিয়ে কথা বলেছেন।প্রশ্ন উঠেছে, গুম নিয়ে কথা বলার এখতিয়ার শামীম ওসমানকে কে দিলো? এ ব্যাপারে কি তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত? দায়িত্বপ্রাপ্ত না হয়ে একজন সংসদ সদস্য হয়ে বাংলাদেশের গুম পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার মত এখতিয়ার এবং তথ্য-উপাত্ত কি তার কাছে আছে? শামীম ওসমানকে সবসময় সুসময় আওয়ামী লীগে পাওয়া যায়। বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে তিনি আলোচিত। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের টকশোতে যাওয়ার আগে তিনি আওয়ামী লীগের ত্যাগী-পরীক্ষিতদেরকে সামনে নিয়ে আসার ব্যাপারে দাবি করেছিলেন, বিভিন্ন সময়ে তিনি বিএনপিকে হুঙ্কার দেন, খেলা হবে বলে আওয়াজ দেন।

কিন্তু দুঃসময়ে কি তিনি আওয়ামী লীগের পাশে থাকেন?গতকাল ডয়েচে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায় শিরোনামের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন শামীম ওসমান। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।২০০১ সালের নির্বাচনের পর তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় যে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ এবং নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, সেই সময় তিনি কোথায় ছিলেন? এই প্রশ্ন এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে দানা বেঁধেছে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সময় শামীম ওসমান দেশের বাইরে ছিলেন।

এমনকি ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি অংশগ্রহণ করেননি। আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নেতা আছেন যারা সুসময়ে অনেক বড় বড় কথা বলেন, শেখ হাসিনার জন্য জীবন উৎসর্গ করার করবেন বলে কথার ফুলঝুরি দেন কিন্তু দুঃসময়ে তারা পালিয়ে যান। আওয়ামী লীগের সত্যিকারের ত্যাগী।সাহসী নেতা তারাই যারা সুসময়ে দলের জন্য কাজ করে আর দুঃসময়ে দলের পাশে থাকে এবং কাজ করে। শামীম ওসমান কোন সংকটে এরকম ভূমিকা পালন করেছিলেন, সেটা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন প্রশ্ন উঠেছে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর ওসমান পরিবারের ভূমিকা ছিল স্মরণ রাখার মত। সেই সময় শামীম ওসমানরা প্রকৃত অর্থেই যোদ্ধার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন এবং জাতির পিতার হত্যার বিরুদ্ধে যারা প্রথম প্রতিবাদ করেছিল তাদের মধ্যে এই পরিবারটি নিঃসন্দেহে অন্যতম।

কিন্তু সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।এখন শামীম ওসমান যে কাজগুলো করছেন তা কতটুকু আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার জন্য, সেই প্রশ্নটি খুব বড় করেই উঠেছে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে তার প্রকাশ্য বিরোধিতা কি আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য উপকার করছে কিংবা খালেদ মুহিউদ্দীনের অনুষ্ঠানে যোগদান করে ওই অনুষ্ঠানকে জায়েজ করে কি আওয়ামী লীগের স্বার্থ রক্ষা করছে? এই প্রশ্নগুলো সামনে চলে আসছে। শামীম ওসমানকে অনেকেই মনে করছেন যে, তিনি সুসময়ে বড় বড় কথা বলেন, দুঃসময়ে পালিয়ে যান।

Back to top button