আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত উপজেলার নান্দিনা বাজার এলাকায় জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে সারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন কয়েক শ কৃষক। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসে আশ্বাস দিলে সড়ক ছেড়ে দেন তাঁরা।
কৃষকদের অভিযোগ, রোপা আমনের খেতে সার দেওয়ার সময় চলে যাচ্ছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী তাঁরা সার পাচ্ছেন না। আজ সকালে স্থানীয় ডিলার মেসার্স হায়দার ট্রেডার্স থেকে কৃষকদের সার দেওয়ার কথা ছিল। এ জন্য সকাল সাতটা থেকে নান্দিনা বাজারে বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা জড়ো হন, তবে ৯টা বেজে গেলেও গুদামটি খোলা হচ্ছিল না। এ জন্য কৃষকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
যে গুদাম ঘিরে বিক্ষোভ হয়েছে, তাঁর স্বত্বাধিকারীর ভাষ্য, যে পরিমাণ সার তিনি বরাদ্দ পেয়েছেন তাঁর অর্ধেক গুদামে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু গুদামের সামনে কয়েক গুণ কৃষক জড়ো হয়েছেন। সে কারণে তিনি আরও বিশৃঙ্খলার শঙ্কায় গুদাম খোলেননি।
অন্যদিকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সারের কোনো সংকট নেই। কিন্তু কৃষকেরা সার পাবেন না বা অতিরিক্ত দামে সার কিনতে হবে—এমন শঙ্কা থেকে সার বিক্রির খবর পেয়েই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তাঁরা। এ কারণেই সেখানে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ সকাল ১০টার দিকে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কৃষকেরা বিক্ষোভ করছিলেন। সদর উপজেলার ইউএনও লিটুস লরেন্স চিরান কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। এরপর তিনি কৃষকদের পার্শ্ববর্তী রানাগাছা ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে নিয়ে যান। এ সময় সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। পরে ইউএনও তালিকা করে কৃষকদের সার দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) লাইসেন্স পাওয়া সারের ডিলার মেসার্স হায়দার ট্রেডার্সের মালিক মো. হায়দার আলী বলেন, তিনি ১৪ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ পেয়েছেন। এর মধ্যে তিনি সাত মেট্রিক টন সার গুদামে এনেছেন।
আজ সকাল থেকে সেগুলো কৃষকদের কাছে সরকারনির্ধারিত মূল্যে বিক্রির কথা ছিল। কিন্তু সকালে তিনি গুদামের সামনে এসে দেখতে পান, কয়েক শ কৃষক জড়ো হয়েছেন। কিন্তু তাঁর কাছে মাত্র ৭ মেট্রিক টনের ১৪৭ বস্তা সার ছিল। এত মানুষের মধ্যে অল্প সার তিনি কীভাবে বিতরণ করবেন, সে শঙ্কায় তিনি গুদাম খোলেননি।
সিরাজুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, ‘কৃষকদের সঙ্গে সরকার মশকরা করছে। সরকার বলছে, সারের কোনো অভাব নেই। যদি অভাব নাই-ই থাকে, তাহলে আমরা কেন সার পাচ্ছি না। সারের জন্য আমাদের ডিলারদের কাছে ধরনা দিতে হচ্ছে, দোকানে দোকানে ঘুরতে হচ্ছে। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, আর কৃষক মরলে কিন্তু দেশ আর দেশ থাকবে না। এত খরচ দিয়ে চাষ করে, এখন যদি সারের জন্য খেত নষ্ট হয়, তাহলে কৃষক বাঁচবে কীভাবে!’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা ইয়াছমিন বলেন, উপজেলার ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়েছে। এসব জমির জন্য ৯২৮ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে ডিলাররা অর্ধেক সার উত্তোলন করেছেন। সারের কোনো সংকট নেই। কিন্তু কৃষকদের মধ্যে কেন জানি একটি ভয় কাজ করছে, তাঁরা সার পাবেন না বা অতিরিক্ত দাম দিয়ে সার কিনতে হবে—এমন শঙ্কা থেকে সার বিক্রির খবর পেয়েই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন, ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ