রাশিয়ার কাছ থেকে সরকার ৫০ মার্কিন ডলার বেশি দিয়ে গম কিনছে
রাশিয়ার কাছ থেকে সরকার যে পাঁচ লাখ টন গম কিনছে, তাতে টনপ্রতি দর প্রায় ৫০ মার্কিন ডলার বেশি পড়ছে। সরকারি পর্যায়ে চুক্তির ভিত্তিতে (জিটুজি) খাদ্য অধিদপ্তর রাশিয়ার গম কিনছে প্রতি টন ৪৩০ ডলার দরে। যদিও বাজারদর এখন ৩৮০ ডলারের মতো।
মজুত কমে যাওয়ায় সরকার রাশিয়া থেকে গম আমদানি করছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে দেশটির (রাশিয়ার) সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ব্যাহত হয়। গত জুলাই মাসে রাশিয়া ও ইউক্রেন খাদ্য রপ্তানির চুক্তি করার পর ওই অঞ্চল থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি শুরু হয়েছে।
সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টন গম কেনার অনুমোদন দেয়, যা ধাপে ধাপে আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে দেশে আসার কথা। টনপ্রতি ৫০ ডলার বেশি ব্যয় হলে পাঁচ লাখ টন গম আমদানিতে সরকারের ২৪০ কোটি টাকার মতো বেশি খরচ হবে।
রাশিয়া থেকে কেন বেশি দামে গম কেনা হচ্ছে, জানতে চাইলে খাদ্যসচিব মো. ইসমাইল হোসেন গত শুক্রবার বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার সঙ্গে ২৪ আগস্ট গম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওই দিন দাম ছিল ৪৩০ ডলার। সেই দাম ধরেই আমদানির চুক্তি হতে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের সংকটের এই সময়ে রাশিয়া আমাদের কাছে ৫ লাখ টন গম রপ্তানি করবে, এটা দেশের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য সুখবর। কারণ, সরকারি গমের মজুত বেশ কমে এসেছে।’খাদ্যসচিব আরও জানান, চুক্তি সইয়ের ৪০ দিনের মাথায় রাশিয়ার গমের প্রথম চালান দেশে আসবে। পুরো পাঁচ লাখ টন গম আসবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষস্থানীয় একজন আমদানিকারক বলেন, তাঁদের কাছে সরবরাহকারীরা রাশিয়ার প্রতি টন গমের দাম চাচ্ছেন ৩৭০ ডলারের আশপাশে। এই দর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছানো পর্যন্ত ব্যয় ধরে। সরকারি দর হয় একেবারে বন্দরে পৌঁছানোর ব্যয় ধরে। সে ক্ষেত্রে প্রতি টন ১০ ডলার বেশি পড়ে। তিনি বলেন, বন্দরে পৌঁছানোর ব্যয় ধরে রাশিয়ার গম এখন ৩৮০ ডলারের আশপাশের দামে কেনা যায়।
সরকারিভাবে গম আমদানির সিদ্ধান্ত হলেও বেসরকারি খাত এখনো রাশিয়া থেকে আমদানি শুরু করেনি। বেসরকারি খাতের চারটি প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার গমের দাম কমছে। আরেকটু অপেক্ষা করলে দাম আরও কমে পাওয়া যাবে।
সাধারণত পড়তির বাজারে বেসরকারি আমদানিকারকেরা মূল্য স্থির হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন। এ ছাড়া রাশিয়া থেকে আমদানির ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত বিষয়টি আরও স্পষ্ট হওয়াও প্রয়োজন বলে মনে করেন তাঁরা।
গম আমদানির সিদ্ধান্তের আগে গত ১১ আগস্ট বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকসান্দার মান্টিটস্কি খাদ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশে গম রপ্তানির আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ সময় প্রাথমিকভাবে ৩ লাখ টন গম কেনার বিষয়ে সম্মত হয় দুই দেশ। খাদ্যমন্ত্রী রাশিয়ার গম রপ্তানির আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক উপদেষ্টা এ এম এম শওকত আলী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে গম আমদানির ক্ষেত্রে দর আরও যাচাই-বাছাই করা উচিত। কারণ, এর আগেও বিদেশ থেকে বেশি দামে চাল ও গম আমদানির অভিযোগ ছিল। তিনি বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানির চুক্তির পর বিশ্ববাজারে দাম কমছে। রাশিয়া থেকে কেন খাদ্য মন্ত্রণালয় বেশি দামে গম কিনছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
বাংলা ম্যাগাজিন এস/কে