বিশ্ব সংবাদ

বিশাল সমাবেশে নরেন্দ্র মোদির তীব্র সমালোচনা কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর

ভারত ‘জোড় যাত্রা’ শুরুর তিন দিন আগে দিল্লির রামলীলা ময়দানের বিশাল সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তীব্র সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। আজ রোববার সমাবেশে রাহুল বলেন, দেশের সর্বত্র ঘৃণা ও ক্রোধ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। এতে দেশ দুর্বল হচ্ছে। বিভাজিত হচ্ছে। সমভাবাপন্ন মানুষ, সংগঠন ও বিরোধীদের নিয়ে কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

কংগ্রেসের উদ্যোগে রামলীলা ময়দানে এই জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব বৃদ্ধি, পেট্রল-ডিজেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামছাড়া দাম ও প্যাকেটজাত খাদ্যের ওপর অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর বসানোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখাতে। সমাবেশে প্রতিটি রাজ্য থেকে কংগ্রেস নেতৃত্ব দিল্লিতে উপস্থিত হয়েছিলেন।

রাহুলের নেতৃত্বে আগামী বুধবার তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত শুরু হচ্ছে ভারত জোড় যাত্রা। দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের এই পদযাত্রার প্রয়োজনীয়তা কেন, রাহুল তা ব্যাখ্যা করেন সমাবেশে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কারও কথা শোনেন না। কাউকে কথা বলতেও দেন না। সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান তিনি নষ্ট করে দিয়েছেন।

বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশনসহ সবকিছু কবজা করেছেন। সংসদের অবমাননা হচ্ছে প্রতিদিন। বিরোধীদের সেখানে বলতে দেওয়া হয় না। কিছু বলতে গেলেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়।রাহুল বলেন, ‘এই অবস্থায় আমাদের সামনে একটাই পথ খোলা রয়েছে। সেই পথই আমরা বেছে নিয়েছি। মানুষের দরবারে হাজির হওয়া। পদযাত্রায় সেটাই আমরা করব।

মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদের কথা শুনব। তাঁদের বোঝাব বিপদ কী ভয়ংকর।’কংগ্রেস নেতা আরও বলেন, বিজেপি-আরএসএস দেশকে হীনবল করছে, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেস দেশকে শক্তিশালী করবে। আসন্ন ভারত জোড় যাত্রার উদ্দেশ্যও তাই।

ভাদ্র মাসের তীব্র তাপপ্রবাহ সত্ত্বেও হাজার হাজার কংগ্রেস কর্মী ও সমর্থক উপস্থিত হয়েছিলেন রামলীলা ময়দানে। গোটা চত্বর ঢাকা পড়েছিল রাহুল-সোনিয়া-প্রিয়াঙ্কার কাট আউট, পোস্টার ও ব্যানারে। যদিও এই সমাবেশে সোনিয়া ও প্রিয়াঙ্কা উপস্থিত হননি।

সমাবেশস্থলজুড়ে ছিল রাহুলকে কংগ্রেস সভাপতি পদে দেখার আরজি। ব্যানার, পোস্টারে সেই কথা লেখা ছাড়াও উৎসাহী নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা বারবার সেই দাবিও জানান। শশী থারুর, জয়রাম রমেশ, পি চিদাম্বরম, অশোক গেহলট, ভূপেশ বাঘেল, শচিন পাইলট, অধীর চৌধুরী, মল্লিকার্জুন খাড়গেসহ উপস্থিত প্রায় সবার আবেদনও অনুরূপ।

প্রত্যেকেই চান সব দ্বিধা ঝেড়ে রাহুল কংগ্রেস সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন। দলের দায়িত্ব নিন। রাহুল অবশ্য দলীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো ইঙ্গিত দেননি। বলেছেন, ভারত জোড় যাত্রায় তিনি অংশ নেবেন ‘মোদির অপশাসনের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে’।

জনসমাবেশে বেলা একটায় ভাষণ দিতে উঠে রাহুল বরাবরের মতো আক্রমণের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেন প্রধানমন্ত্রী মোদিকে। তিনি বলেন, ‘সারা দেশে ঘৃণা বাড়ছে, কারণ মানুষ ভীত হয়ে পড়ছে। মানুষ ভয় পাচ্ছে বেকারত্বের দরুন, কর্মহীনতার দরুন, অন্ধকার ভবিষ্যতের দরুন।

প্রধানমন্ত্রী এইভাবে দেশের ক্ষতি করছেন। সাধারণ মানুষের ক্ষতি করছেন। কৃষক, শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষের ক্ষতি করে লাভবান করছেন শুধু তাঁর কাছের গুটিকয় শিল্পপতির। কংগ্রেসের লড়াই এই মানসিকতার বিরুদ্ধে।’

গত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই মোদিকে আক্রমণ করতে গিয়ে রাহুল বারবার তাঁর আশীর্বাদধন্য দুই শিল্পপতির (আম্বানি ও আদানি) বাড়বাড়ন্তের উল্লেখ করে আসছেন। গতকালের সমাবেশেও দুই শিল্পপতির উল্লেখ করে রাহুল বলেন, ওঁদের বাইরে আর কেউ মোদির নজরে পড়েন না। বন্দর ও সড়ক নির্মাণ, সেলফোন, তেল, বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো তৈরির যাবতীয় উদ্যোগ শুধু ওই দুজনকেই ঘিরে।

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে

Back to top button