সম্রাটের চারটি মামলার কোনোটিরই বিচার শুরু হয়নি
ক্যাসিনোবিরোধী র্যাবের অভিযানে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে সম্রাট ও তাঁর সহযোগী এনামুল হক ওরফে আরমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই অভিযানে যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামীমসহ মোট ১৩ জন গ্রেপ্তার হন।
যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের চারটি মামলার কোনোটিরই বিচার শুরু হয়নি। তবে তিনটি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আরেকটি মামলার তদন্তই শেষ হয়নি।
চলতি বছরের ১০ এপ্রিল থেকে ১১ মের মধ্যে চার মামলায় জামিন পান সম্রাট। তবে এক সপ্তাহ পর ১৮ মে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় হাইকোর্ট জামিন বাতিল করে তাঁকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। সর্বশেষ ২২ আগস্ট তিনি এই মামলায় জামিন পান।
এরপরও তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। গতকাল শুক্রবার তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তিনি সমর্থকদের নিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরসহ বিভন্ন এলাকায় মহড়া দেন। এতে ছুটির দিনেও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা দেয়।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর গ্রেপ্তারের পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সম্রাট ও তাঁর সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করে পুলিশ। এ ছাড়া মানি লন্ডারিং আইনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট স্বীকার করেন, ‘গডফাদারদের’ পক্ষে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও তদবির করলেও একসময় তিনি নিজেই রাজনৈতিক পর্যায়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার প্রধান নিয়ন্ত্রক ছিলেন তিনি। পাশাপাশি মার্কেট ও ফুটপাতে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করে তিনি প্রতিদিন প্রায় এক কোটি টাকা পেতেন।
মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সম্রাটের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ১৯৮ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। হুন্ডির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করা টাকার বড় অংশই তিনি সিঙ্গাপুরে ক্যাসিনোতে খরচ করেন। ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত তিনি শুধু সিঙ্গাপুরেই গেছেন ৩৫ বার। একই সময়ে তিনি মালয়েশিয়ায় গেছেন তিনবার।
র্যাব ও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট বলেন, ছয়টি ক্যাসিনোর একেকটি থেকে প্রতি সপ্তাহে ১০ লাখ করে ৬০ লাখ টাকা পেতেন। তৎকালীন একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও খালেদ মাহমুদ তাঁর জন্য চাঁদা তুলতেন। এসব টাকার হিসাব রাখতেন তাঁর সহযোগী আরমানের কাছে। জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট র্যাব ও পুলিশকে কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করে বলেন, ক্যাসিনো পরিচালনা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ এসব নেতা তাঁকে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিতেন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), র্যাব ও ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তদন্ত শেষে ৫২টি মামলার অভিযোগপত্র দেয়। সম্রাট ও খালেদের মানি লন্ডারিংয়ের দুই মামলা সিআইডি এবং এনু ও রুপনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তিনজনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তিন মামলা তদন্ত করছে দুদক।
দুই ভাই এনু ও রুপনের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দুই দফা অভিযান চালিয়ে নগদ প্রায় ৩২ কোটি টাকা, ৯ কেজি সোনা এবং ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ও একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মানি লন্ডারিং আইন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মোট সাতটি মামলা হয়। গত বছরের ২৫ এপ্রিল অর্থ পাচার মামলায় তাঁদের ১১ বছর করে কারাদণ্ড হয়েছে। বাকি ছয়টি মামলার অভিযোগই গঠন হয়নি।
সম্রাটসহ গ্রেপ্তার ১৩ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ, র্যাব ও দুদক মোট ৫৭টি মামলা করে। এর মধ্যে অস্ত্র, মাদক, বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ, বিশেষ ক্ষমতা ও মানি লন্ডারিং আইনে ৩৪টি মামলা করে পুলিশ ও র্যাব। এ ছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক বাদে বাকি ১২ জনের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা করে দুদক।
৫৭ মামলার মধ্যে ৫২টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে। বেশির ভাগ মামলার অভিযোগই গঠন হয়নি।
অভিযোগ গঠন দেরি হচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (চিফ পিপি) আবদুল্লাহ আবু বলেন, অভিযোগপত্র দাখিলের পর বিচারের জন্য মামলা বিভিন্ন আদালতে স্থানান্তর করা হয়। খোঁজখবর নিয়ে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে
জামিন পেলেন কেমনে?
আম্লিগের সময় হবেও না আম্লিগের মাম্মোর সোনার ছেলে বলে কথা
বিচার হবে ও না