অন্যান্যবাংলাদেশ

দারিদ্রতা কখনও সফলতায় বাধা হতে পারে না

মোহাম্মাদ ঝন্টু আলী তার প্রথম বিসিএস অর্থাৎ ৪০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। এই প্রতিনিধির সাথে যখন অনলাইনে কথা হয়েছিল তখন নিজের অতীত কর্মজীবন আর অধ্যবসায়ের গল্প তারপর বিসিএস ক্যাডার হওয়ার যে জার্নি আর তার আগামীর কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমেস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ ঝন্টু আলী।সম্প্রতি ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ বিভাগের ক্যাডার হয়েছেন তিনি।

মোহাম্মাদ ঝন্টুর আলীর জন্মস্থান ও বেড়ে উঠা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রাইটা গ্রামে। তার পরিবারে আছেন মা বাবা ও তিন ভাই। তিনি মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন রাইটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে আর উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন ভেড়ামারা কলেজ থেকে। । তারপর ২০১৩-১৪ সেশনে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমেস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগে। তার একাডেমিক ফলাফলে তিনি তার মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন।মোহাম্মাদ ঝন্টু আলীর পরিবার নদীভাঙনের কারনে হারিয়েছেন তাদের বসতভিটা আর নিজস্ব কৃষি জমি। যার কারনে দেখতে হয়েছে জীবনের নির্মম বাস্তবতা

। বাবা ছিলেন বর্গা চাষী আর মা ছিলেন গৃহিণী। কিন্তু তারা আমাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন। এত অভাব থাকা সত্বে বাবা আমাদের কোন দিন কোন কাজ করতে দেন নি। তিনি আমাদের বুঝিয়েছেন আমাদের শিক্ষা অর্জনই আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ ও শক্তি। মায়ের প্রভাব ছিল তার জীবনে অনেক, তার মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জানত না কিন্তু একটা কথা বলত যা কর সবচেয়ে ভালটা কর।যখন মোহাম্মাদ ঝন্টু আলী বলছিলেন তার জীবনের মূলমন্ত্রের কথা তখন তিনি বলেন,’’আমার বেড়ে উঠা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে আমাদের কাছে পুলিশের কনস্টেবল অনেক বড় চাকরি কিন্তু যখন ঢাবিতে ভর্তি হই তখন ৩৪তম বিসিএসের রেজাল্ট দেয়,হলের বড় ভাইরা যখন বিভিন্ন ক্যাডার পেয়ে উল্লাস করছিল তখনই আমার মনে হয়েছিল আমার জীবনেও যেন এমন দিন আসে।

আল্লাহ আমার মনের ইচ্ছা পূরণ করেছেন।‘’ তিনি কৃতজ্ঞতা জানান তার শিক্ষকদের যারা তাদের কাছে টিউশনের টাকাও নেন নি তা না হলে তাদের এতদূর আসা হত না। তার কিছু কাছের বন্ধুর নাম ও বলেন যেমন নাজমুল ইসলাম নিষাদ, শিমুল ইসলাম সহ আরও অনেকের।তিনি তার সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞতা জানান তার বন্ধু মহলকে কারন তারা সবাই পড়ুয়া ছিল।মোহাম্মাদ ঝন্টু আলী পড়াশোনা করেছেন নিজের হলের রুমে,যাতে আসা যাওয়ার সময়টা যথাযত ব্যবহার করা যায়।

হলরুমের একাকী পড়াশোনাটা তিনি উপভোগ করতেন। তিনি যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন তার বর্ণনায় তিনি বলেন,’’তৃতীয় বর্ষের শেষের দিক থেকে ভোকাবিলারি ও ইংরেজি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সিলেবাসটা ভাল করে ফলো করতে হবে। আমি কতবেশি পড়ছি তা নয় আমি কতটুকু পরীক্ষার খাতায় দিতে পারছি তা হচ্ছে আসল। টিউশনি করালে তাদের বিসিএস প্রিপারেশনটা অনেকটা সহজ হয়ে যায়, কারণ বিসিএস অধিকাংশ প্রশ্নই নবম-দশমের বইগুলোর মৌলিক বিষয়গুলোর সাথে রিলেটেড।রিভেশন বেশি দিতে হবে,আর বেশি বেশি পরীক্ষা দিতে হবে। যত বেশি পরীক্ষা দিবেন তত বেশি নিজেকে শক্তিশালী করতে পারবেন। বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভাল ভাবে পড়তে হবে।

কারন তার থেকে অনেকগুলো প্রশ্ন আপনি কমন পাবেন। আর আপনি প্রশ্নের ধরনটাও বুঝতে পারবেন। প্রশ্ন ব্যাংক ফলো করলে চাকুরির পরীক্ষা গুলোতে নিজেকে এগিয়ে রাখা সম্ভব। রিটেন পরীক্ষার প্রস্তুতিটা নিতে হবে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে। লিখিত পরীক্ষায় কোন বিষয়ে দুর্বলতা থাকলে সে বিষয়টাতে দুর্বলটা কাটিয়ে ভাল প্রস্ততি নিতে হবে।লিখিত পরীক্ষায় কোন ভাবেই অবহেলা করা যাবে না।

ভাইভা বোর্ড হবে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা । আপনার আচরণ নমনীয়তা, সবকিছু খেয়াল করা হবে। আপনি যত বেশি জানেন কিন্তু ভাইভাতে আপনাড় কাছে যা জানতে চাওয়া হবে তার বেশি উত্তর দেওয়ার দরকার নেই। কারন তারা অনেক অভিজ্ঞ। আপনার সব কিছু খেয়াল করা হবে, আপনার আচরণ, ড্রেস সেন্স,কথা বলার ধরন। মূলত তারা আপনাদের মধ্যে অফিসারের গুন খুঁজবেন।

‘’ বিসিএস যাদের একমাত্র গোল তাদের উদ্দ্যেশে বলেন, ‘’মানুষ তার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করতে পারে সফল হওয়ার জন্য কিন্ত পরিকল্পনা টা সঠিক হতে হবে । সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রস্তুতি নিলে প্রথম শ্রেণির চাকরি পাওয়ার দৌড়ে অনেকটা আগিয়ে যাবে। ‘’ কর্মক্ষেত্রে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে উজাড় করে দেওয়া ও সুনামের সহিত অবসর গ্রহণ করা।

Back to top button