অপরাধএক্সক্লুসিভঢাকাবাংলাদেশরাজধানী

‘কুশ’, ‘এক্সট্যাসি’, ‘হেম্প’, ‘মলি’ নামে নতুন মাদক ঢাকায়, গ্রেপ্তার ১

গতকাল সোমবার রাতে ওনাইসী সাঈদ ওরফে রেয়ার সাঈদ নামের ওই যুবককে আটক করে র‍্যাব। তাঁর সঙ্গে ফয়সাল নামের প্রবাসী এক বাংলাদেশির যোগসাজশ রয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‍্যাব বলছে, ‘কুশ’ মারিজুয়ানা বা গাঁজার মতো একধরনের উদ্ভিদ। ওনাইসী ঢাকার মোহাম্মদপুরে তাপ নিয়ন্ত্রণ করে বিশেষ পদ্ধতিতে এই মাদকের চাষাবাদ করছেন। তিনি ‘কুশ’ উৎপাদনের পর সেটি বাজারজাতও করেছেন। তাঁর মোহাম্মদপুরের বাসায় র‍্যাব অভিযান চালিয়েছে। শুধু ‘কুশ’ নয়, ‘এক্সট্যাসি’, ‘হেম্প’, ‘মলি’, ‘এডারল’, ‘ফেন্টানিল’–এর মতো বিভিন্ন ধরনের মাদক বিদেশ থেকে দেশে এনে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজও করছেন ওনাইসী সাঈদ।

দেশে নতুন কয়েক ধরনের মাদক পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব। ‘কুশ’, ‘এক্সট্যাসি’, ‘হেম্প’, ‘মলি’ নামে বিদেশে প্রচলিত এসব মাদক দেশে নিয়ে আসা ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীর গুলশান থেকে এক যুবককে আটক করেছে র‍্যাব।চার বছর ধরে ওনাইসী একটি ‘ক্লোজ’ গ্রুপের মাধ্যমে এসব মাদক ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে র‍্যাব। তাঁর অন্যতম সহযোগী কানাডাপ্রবাসী ফয়সাল নামের এক যুবক।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব বলছে, বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবে এসব মাদক সরবরাহ করতেন ওনাইসী। তিনি উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে এই মাদক ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছিলেন। এসব মাদক তিনি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশে নিয়ে আসছেন।

র‍্যাব আরও বলছে, গুলশানে অভিযান চালিয়ে ওনাইসীর কাছ থেকে ১০১ গ্রাম কুশ, ৬ গ্রাম হেম্প, দশমিক শূন্য ৫ গ্রাম মলি, ১ গ্রাম ফেন্টানল, ১৮ গ্রাম কোকেন, ১২৩টি এক্সট্যাসি, ২৮টি এডারল ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও অর্ধলক্ষাধিক মার্কিন ডলারও উদ্ধার করা হয়েছে।

পরে মোহাম্মদপুরের একটি ফ্ল্যাট থেকে তাপ নিয়ন্ত্রণ করে বিদেশি প্রজাতির কুশ উৎপাদনের প্ল্যান্ট ও সেটআপ উদ্ধার করা হয়। বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে তিনি এ কার্যক্রম শুরু করেন।ওনাইসীর বিরুদ্ধে প্রচলিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলার পাশাপাশি বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হবে। পাশাপাশি মানি লন্ডারিংয়ের কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, সেটি তদন্ত করে দেখবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

ওনাইসী সম্পর্কে র‍্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, ওনাইসী সাঈদ বাংলাদেশে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে মালয়েশিয়ায় যান। সেখানে তিনি বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করে ২০১৪ সালে দেশে ফেরেন। প্রথম দিকে ফয়সাল নামের এক ব্যক্তি থাইল্যান্ডে অবস্থান করার সময় সেখান থেকে ওনাইসীকে বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত মাদক সরবরাহ করতেন।

পরে ওই ব্যক্তি কানাডায় যাওয়ার পর সেখান থেকে এখন মাদক সরবরাহ করছেন। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ওনাইসীর নিকটাত্মীয়দের ঠিকানায় মাদকের পার্সেল আসত। তবে তাঁর আত্মীয়রা এ বিষয়ে কিছু জানেন না।ওনাইসীকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, ওনাইসী মাদকের অর্থ পরিশোধ করতেন হুন্ডির মাধ্যমে। তাঁর বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি মুদ্রার বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

র‍্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, ওনাইসীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে, কুশ উৎপাদন করে উন্নত দেশে বাজারজাত করবেন। এ কারণেই পরীক্ষামূলকভাবে তিনি মোহাম্মদপুরের একটি ফ্ল্যাট এক লাখ টাকায় ভাড়া নিয়ে কুশ প্ল্যান্ট তৈরি করেছেন। ওই প্ল্যান্টে তিনি প্রাথমিকভাবে দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ৩০০ গ্রাম কুশ উৎপাদন করেছেন। এসব কুশ প্রতি ১০০ গ্রাম তিনি তিন লাখ টাকায় বিক্রিও করেছেন। তিনি মাদক সরবরাহে ছয় থেকে সাতজনের একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন। তাঁরা ওনাইসীর সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন।

Back to top button