বগুড়ার কাহালুতে ২০০ কেজি মাছসহ গলাসমান পানি নিমিষেই উধাও
বগুড়ার কাহালুতে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে একটি পুকুরে মাছ চাষ করছিলেন নূরুল ইসলাম। ওই পুকুরে এবারও প্রায় ২০০ কেজি মাছ ছাড়া হয়েছিল। সেই মাছসহ গলাসমান পানি নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর পুকুরের মাঝ বরাবরে দেখা মিলেছে একটি সুড়ঙ্গের।
কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের বাগইল পশ্চিমপাড়ায় গত মঙ্গলবার বিকেলে এই ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এলাকায় তুমুল হৈচৈ পড়ে গেছে। দলে দলে লোকজন ছুটছেন সেই পুকুরটি দেখতে।সরেজমিন ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ ও শিশুরা দলবেঁধে দেখতে এসেছেন পুকুরটি। অনেকে কাদা মাড়িয়ে নিচে নেমে উঁকি দিয়ে দেখছেন সুড়ঙ্গের গভীরতা।
এ বিষয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আব্দুল হাই জানান, তুরস্কসহ পৃথিবীর অনেক জায়গায় এমন নজির আছে। পাহাড়ি অঞ্চল বা খনি এলাকায় ‘সিঙ্ক হোল’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সমতল এলাকায় এটি খুবই বিরল।
তিনি আরও বলেন, ভূগর্ভ থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি, বালু বা খনিজ পদার্থ উত্তোলন করলে নিচের স্তরে যে শুণ্যতা সৃষ্টি হয়, সেই শুণ্যতা পূরণের জন্যই এমন সুড়ঙ্গ বা গর্ত তৈরি হয়। এটি যেহেতু সমতল এলাকায় হয়েছে। তাই ভূতত্ত্ব জরিপ বিভাগের খতিয়ে দেখা উচিৎ।কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাপিয়া সুলতানা জানান, ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
পুকুরের মালিক নূরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি পুকুরে মাছ চাষ করছেন। এবারও ২০০ কেজি মাছ ছেড়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে হঠাৎ পুকুরের মাঝ বরাবরের পানিতে বুদবুদ উঠতে দেখেন। প্রচন্ড গরমের কারণে হয়তো এমনটি হচ্ছে ভেবেছিলেন তিনি।
গত শুক্রবার থেকে সেই বুদবুদ বাড়তে শুরু করে। পরে সোমবার বিকেলে হঠাৎ পুকুরের পানি ১০ থেকে ১৫ ফুট উঁচু হয়ে লাফিয়ে উঠতে শুরু করে। এ নিয়ে এলাকায় অনেকটা আতঙ্কও দেখা দেয়। পরের দিন বিকেলে হঠাৎ করেই কমতে শুরু করে পুকুরের পানি। নিমিষের মধ্যেই গলা সমান পানি নেই হয়ে যায়। পানি তো নেই-ই, এমনকি কোন মাছের ছিঁটে ফোটাও ছিলো না।
পাইকড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হারুনুর রশিদ জানান, প্রায় ২০ বছর আগে ওই পুকুর থেকে বালু তুলে বাড়ি করেছেন নূরুল ইসলাম। এ কারণে সেখানে ধ্বস দেখা দিয়েছে।তবে নূরুল ইসলাম জানান, বালু উত্তোলনের পর কয়েক দফা পুকুরটি তারা খনন করেছেন। তখন সেখানে এমন কোন লক্ষণই ছিলো না।