অর্থ ও বাণিজ্যএক্সক্লুসিভঢাকাবাংলাদেশবিএনপিব্যাংকিংরাজধানীরাজনীতি

আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান রিজার্ভে মাত্র ৫ মাস আমদানি ব্যয় মেটানো যাবেঃফখরুল

আমদানি ব্যয় ৪৪ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে আর মাত্র পাঁচ মাস আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।দলীয়ভাবে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে আজ বুধবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।  

স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৩-১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে চাপে রয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স আয়ে ঘাটতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে অসহনীয় হয়ে উঠছে জিনিসপত্রের দাম। মনে হচ্ছে, আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও বেসামাল হয়ে উঠবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। এই মুহূর্তে যে রিজার্ভ বর্তমানে রয়েছে, তা দিয়ে মাত্র আর পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আবার প্রবাসী আয়ও কমে গেছে। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।

গত সোমবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভায় দেশের চলমান অর্থনীতি, রাজনীতি ও সরকারের নানা পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। সভা মনে করে, দেশের বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচক পর্যালোচনায় করে বর্তমান অর্থনীতিকে অশনিসংকেত।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, রিজার্ভ নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। এটি দ্রুত কমে আসছে। গত ৮ মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। পরের ২ মাসে এটা আরও ৪ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। এভাবে যদি রপ্তানির তুলনায় আমদানি বাড়তে থাকে এবং সেটা যদি রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করা না যায়, তাহলে অতি দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে। রিজার্ভ শেষের কী ভয়াবহ পরিণতি শ্রীলঙ্কার চলমান পরিস্থিতি তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ।

বিএনপির এই নেতা বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। আইএমএফের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরের জুনের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪৬ বিলিয়ন ডলারের যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকার কথা বলা হয়েছিল, তা আসলে ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হবে ৩৯ বিলিয়ন ডলার।

মির্জা ফখরুল বলেন, এদিকে টাকার মান ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার ছাড়ার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৭-৮ টাকা কমে গেছে। ভবিষ্যতে টাকার মান আরও কমতে থাকবে। এ ক্ষেত্রে প্রতি মার্কিন ডলার ১০০ টাকার উপরে চলে যেতে পারে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এ বছরই আমদানি প্রায় ৮২-৮৫ বিলিয়ন ডলারে চলে যাবে। কিন্তু রপ্তানি প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার। এই ৩২-৩৫ বিলিয়ন ডলারের যে বাণিজ্য ঘাটতি, সেটা রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করা সম্ভব হবে না। কাজেই এ বছরই ১০ বিলিয়ন ডলারের একটা ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে ব্যালেস্ট অব পেমেন্ট একাউন্ট বিপদের মুখে পড়বে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ‘এলার্মিং’ অবস্থায় রয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আইএমএফের সুপারিশ মোতাবেক সঠিক নিয়মে রিজার্ভ হিসাব করলে বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। বাস্তবিকভাবে আইএমএফ প্রনীয় নিয়মে রিজার্ভ হিসাব করা হলে বাংলাদেশের হাতে আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে মাত্র সাড়ে তিন মাসের। যা একেবারেই অশনিসংকতে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১২ শতাংশ। রিজার্ভ বিপজ্জনক লেভেলে চলে আসার কারণে টাকার দামও কমছে। সেক্ষেত্রে অর্থনীতিতেও সব কিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। ক্রেতা সাধারণের ত্রাহি অবস্থা। তার ওপর রয়েছে সরকার দলীয় সিন্ডিকেটের তাণ্ডব।

ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিশেষ করে পাম ও সয়াবিন ওয়েলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বাংলাদেশে এর আগে এত দাম বাড়েনি। ভরা মওসুমে চালের দাম যেখানে সবসময় স্বাভাবিক নিয়মে কমে যায় গত কয়েকদিনে তা অনেক বেড়ে গেছে।বর্তমান এই অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সার্বজনীন ঐক্যের মাধ্যমে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে অনতিবিলম্বে এই সরকারকে হটানোর বিকল্প নাই।

Back to top button