ইউরোপএক্সক্লুসিভবিশ্ব সংবাদ

আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু পুতিনের স্বাস্থ্য

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরাশক্তি রাশিয়া। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে এই অভিযান শুরু হয়। এরই মধ্যে সোমবার ১৯তম দিনে গড়িয়েছে এই অভিযান। বিগত ১৮ দিনে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি নগরী দখলে নিয়েছে রুশ বাহিনী।

নানাভাবেই পুতিনের কঠিন ব্যক্তিত্ব ও চেহারার ছবি অনেক আগে  থেকেই নেট দুনিয়ায় ভেসে বেড়ায়। কিন্তু ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর নতুন করে গতি পেয়েছে পুতিনের স্বাস্থ্যগত বিষয়। তবে কি রুশ ‘লৌহমানব’ গুরুতর অসুস্থ? এর পেছনেও কিছু কারণ রয়েছে।

ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পর বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এখন তার স্বাস্থ্যগত বিষয়ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।বিশ্ববাসী আগে থেকেই পরিচিত পুতিনের সঙ্গে। কখনও তারা দেখেছেন জুডোয় পারদর্শী পুতিনকে। আবার কখনও আইস হকির উৎসাহী। ঘোড়ায় চড়া বা জিমে ব্যায়ামরত পুতিনকেও দেখেছেন বিশ্ববাসী। 

পুতিনের সাম্প্রতিক ছবিতে দেখা গেছে, তার মুখ ও ঘাড় বেশ ফোলা। চেহারা ফ্যাকাশে। এতেই জল্পনার পালে হাওয়া লেগেছে। যদিও পুতিনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও বিবৃতি এখনও পর্যন্ত জারি করেনি মস্কো।যদিও ৬৯ বছরের পুতিনের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে জল্পনা নতুন নয়।

কয়েক বছর ধরেই পুতিনের সুস্থতা নিয়ে নানা জনের নানা মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার পর তা আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এ নিয়ে পাঁচটি কারণও জানা যাচ্ছে।

রাশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ তথা হোয়াইট হাউসের এক শীর্ষ পদাধিকারী ফিয়োনা হিল আমেরিকার এক সংবাদমাধ্যমে বলেন, “পুতিনকে মুখ ফুলে গিয়েছে। তাকে তেমন একটা সুস্থ দেখাচ্ছে না। আমরা জানি যে তার পিঠে একটা সমস্যা রয়েছে। তবে তার থেকেও গুরুতর কিছু সমস্যা হয়েছি কি? তাহলে হয়তো তিনি বেশি মাত্রায় স্টেরয়েড নিচ্ছেন অথবা অন্য কিছুও হতে পারে।”

বেশি মাত্রায় স্টেরয়েড নেওয়ার ফলে কোভিডের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে পুতিনের। এমন মন্তব্য করেছেন অনেকে। ব্রিটেনের সাবেক পররাষ্ট্র সেক্রেটারি ডেভিড ওয়েনের মতে, “যারা বলছেন যে পুতিন প্লাস্টিক সার্জারি বা বোটক্স করিয়েছেন, তাদের কথা বিশ্বাস করি না। পুতিনের মুখটা দেখুন! কীভাবে তা বদলে গিয়েছে। এখন তার মুখ একেবারে গোলাকৃতি!”

ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডের দাবি, গত কয়েক সপ্তাহে পুতিনের মুখ এবং ঘাড়ের অংশ বেশ ফোলা দেখাচ্ছে। যেন কোনও চিকিৎসার জন্য তিনি স্টেরয়েড নিচ্ছেন। তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেই ফুলে গিয়েছে তার মুখ ও ঘাড়ের অংশ।

পুতিন কি পার্কিনসন্স এবং ক্যানসারে আক্রান্ত? এ প্রশ্নও উঠছে। রাশিয়ার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ তথা ইতিহাসবিদ ভ্যালেরি সলোভেইয়ের দাবি ছিল, পুতিনের শারীরিক উপসর্গে পার্কিনসন্স এবং ক্যানসারের লক্ষণ— দুই-ই রয়েছে।

তার আরও দাবি, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে জরুরি অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে পুতিনকে।এক ধাপ এগিয়ে সলোভেইয়ের মন্তব্য, “পুতিনের দু’টি সমস্যা রয়েছে। একটি সাইকো-নিউরোলজিক্যাল এবং অন্যটি ক্যানসারের সমস্যা।”

সেই সঙ্গে তার সাবধানী উক্তি, “আমি চিকিৎসক নই এবং এসব সমস্যার কথা প্রকাশ্যে আনার নীতিগত অধিকারও নেই আমার।” তবে সলোভেইয়ের আরও দাবি, শারীরিক সমস্যার কারণেই ২০২১ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার কথাও চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন পুতিন।

আমেরিকার সেনেটর মার্কো রুবিওর মন্তব্যেও পুতিনের স্বাস্থ্য নিয়ে ধোঁয়াশা বেড়েছে। পুতিন সম্পর্কিত তথ্য হাতে পেয়েছেন বলে দাবি সেনেটের ইন্টেলিজেন্স কমিটির সদস্য মার্কোর। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছুই জানাননি তিনি।

যদিও সংবাদমাধ্যমের কাছে মার্কোর মন্তব্য, “যদি আপনাদের সঙ্গে আরও কিছু তথ্য শেয়ার করতে পারতাম! তবে এখনকার মতো এটুকু বলতে পারি যে এটা বেশ বোঝা যাচ্ছে যে পুতিনের অনেক কিছুই ঠিকঠাক নেই।”পরে তিনি বলেন, “মনে হচ্ছে (পুতিনের) কিছু নিউরো-সাইকোলজিক্যাল শারীরিক সমস্যা রয়েছে।

রাষ্ট্রনেতা হোক বা নিজের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের সহযোগী— সম্প্রতি সব পক্ষের সঙ্গেই বৈঠকে পুতিনকে দেখা গিয়েছে অস্বাভাবিক লম্বা টেবলের অপর প্রান্তে বসে রয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে পুতিনের সঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরনের বৈঠক হয়েছিল একটি ১৩ ফুট লম্বা টেবিলে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভকেও আর একটি অত্যধিক লম্বা টেবলের এক প্রান্তে বসতে হয়েছিল।

বৈঠকে কি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছেন পুতিন? সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে দাবি, পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে বাধ্যতামূলকভাবে দু’সপ্তাহের নিভৃতবাসে থাকতে হচ্ছে তার কর্মী এবং রাজনীতিকদের। এমনকি, পুতিনের সাক্ষাৎপ্রার্থীদের সকলকেই নাকি জীবাণুনাশক টানেলের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। এ কারণে জল্পনা ছড়িয়েছে, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে আছেন পুতিন। কারণ তার নিশ্চয়ই সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।

Back to top button