বিকৃত রুচির এক ব্যাংকার আটক
মো. সারোয়ার আহমেদ কামরুল। ভালো বেতনে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। তার মূল টার্গেট এবং নেশা হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগের বড় বড় হাসপাতালের নারী চিকিৎসক। গুগল সার্চসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নারী চিকিৎসকদের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে হোয়াটসঅ্যাপ এবং মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তাদেরকে বিকৃত যৌনাচারের ছবি, কুরুচিপূর্ণ অশ্লীল বার্তা পাঠিয়ে বিরক্ত করেন এই ব্যাংকার।
মহানগর সাইবার গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর পুলিশ হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসকের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে হঠাৎ একটি অশ্লীল ভিডিও আসে। পরবর্তীতে ওই নারী চিকিৎসক বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও পর পর একইভাবে বিকৃত যৌনাচারের ভিডিও পাঠায় কামরুল।
এখন পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় একশ’ নারীর সঙ্গে এমন বিকৃত যৌনাচার সাইবার অপরাধ করেছেন তিনি। রাজধানীর পুলিশ হাসপাতালে দায়িত্বরত এক নারী চিকিৎসক তার বিরুদ্ধে গত বছরের নভেম্বর মাসে তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। মামলা নম্বর-১০০। অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার শেষে জিজ্ঞাসাবাদে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয় ওই ব্যাংক কর্মকর্তা।
সে নারী চিকিৎসকদের ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ অশ্লীল বার্তা ও নিজের প্রাইভেট পার্টের ছবি পাঠায়। নারী চিকিৎসক তার মেসেজের উত্তর না দেয়ায় এবং ফোন রিসিভ না করায় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মেসেজ পাঠায়। পরবর্তীতে ব্যক্তিগত সম্মানের বিষয়টি চিন্তা করে ভুক্তভোগী নারী চিকিৎসক তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, অভিযুক্ত কামরুল পড়ালেখা শেষে বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে ক্যাশ অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। তার মূল টার্গেট হচ্ছে দেশের স্বনামধন্য হাসপাতালগুলোর নারী চিকিৎসক।কামরুলের মুঠোফোন পর্যালোচনা করে দেখা যায় বিভিন্ন পর্নো সাইটের মেম্বার সে। প্রথমে গুগল সার্চ করে ওয়েবসাইট থেকে নারী চিকিৎসকদের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে।
এরপর অভিনব কায়দায় নম্বরগুলো তার ফোনবুকে এ, বি, সি এবং ১, ২, ৩ ইত্যাদি রূপক ভাবে সেভ করে। যদিও ব্যক্তিগতভাবে সে কাউকে চিনতো না। নিজের বিকৃত রুচি চরিতার্থ করতে নারী চিকিৎসকদেরকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল করতো। যাদের কণ্ঠ ভালো লাগে তাদেরকে ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ অশ্লীল বার্তা পাঠাতো। অভিযুক্ত কামরুলের ফোন রিসিভ না করলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতো।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন বিভাগীয় প্রধান নারীকেও একই ভাবে উত্ত্যক্ত করে এই বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা। ভুক্তভোগী নারীর বরাত দিয়ে গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মেসেঞ্জারে গত কয়েক মাস আগে ভিডিও কল করেন কামরুল।
অপরিচিত নম্বর দেখে রিসিভ না করায় নারী চিকিৎসককে একইভাবে অশ্লীল ভিডিও এবং কুরুচিপূর্ণ বার্তা পাঠায়। পরবর্তীতে ওই নারীকে ফোন দিয়ে জানায় তার কণ্ঠ সুন্দর, তাই তাকে ভালো লেগেছে। ভুক্তভোগী নারী অবশেষে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট একটি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নুসরাত জাহান মুক্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে মনে হয়েছে। এই ব্যাংক কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত অসংখ্য নারীকে একইভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। সম্প্রতি পুলিশ হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসকের সঙ্গে একই আচরণ শুরু করলে অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি সামনে আসে। তার মুঠোফোনে অসংখ্যা নারীর ফোন নম্বর রয়েছে। যাদেরকে সে বিকৃত যৌন হয়রানিমূলক মেসেজ পাঠাতো।
তার মুঠোফোনে প্রায় এক শ’ জন নারী চিকিৎসকের ফোন নম্বর, আপত্তিকর মেসেজ, অশ্লীল ছবি-ভিডিও পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে কামরুলের পরিবার এবং সে জানায়, স্নাতকোত্তর শেষ করে বর্তমানে একটি ব্যাংকে কর্মরত আছেন। প্রথমবার এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর থেকে সে একাকী থাকতে শুরু করে। একপর্যায়ে পর্নো আসক্ত হয়ে পড়ে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। সে বর্তমানে অবিবাহিত। পরিবার চাইলেও কামরুল বিয়ে করতে আগ্রহী না।