গফরগাঁওয়ের কদমরসুলপুর গ্রামে জঙ্গল থেকে এক কিশোরীর আগুনে পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত কিশোরীর নাম মারুফা খাতুন (১৫)। তার পিতার নাম মো. মজিবুর রহমান। ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হওয়ার তিন ঘণ্টা পর মঙ্গলবার ভোররাতে কদমরসুলপুর গ্রামের মাইজপাাড়ার এলাকার নির্জন চৌরাভিটা জঙ্গল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশে হাত ও পায়ে বাঁধার দাগ ছিল।
নিহতের দিনমজুর পিতা মুজিবুর রহমান (৫১) জানান, বরাবরেই মতই তার মেয়ে মারুফা গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে রাতের আহার শেষে ছোট বোন রহিমা আক্তারের সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাতে মারুফা প্রকৃতির ডাকে ঘর থেকে বের হয়ে আর ঘরে ফিরে না আসায় ছোট মেয়ে রহিমা তার পিতা-মাতাকে জানায়।
নিহত মারুফা ২০১৮ সালে পার্শ্ববর্তী ত্রিশাল উপজেলার রায়েরগ্রাম আইয়ুবীয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। করোনা শুরু হওয়ার পর সে পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়। গফরগাঁও থানা পুলিশ মারুফার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
প্রকৃতির ডাকে ঘর থেকে বের হয়ে আর ঘরে ফিরে না আসায় মুজিবুর রহমান তার দুই ভাইকে (মারুফার চাচা) নিয়ে রাতেই খুঁজতে বের হন। ভোর ৫টার দিকে বাড়ি থেকে চারশত গজ দূরে নির্জন চৌরা ভিটা জঙ্গলে তার মেয়ের আগুনে পোড়া ক্ষত-বিক্ষত লাশ পড়ে থাকতে দেখে। কিশোরী মেয়ের আগুনে পোড়া, ক্ষত-বিক্ষত বীভৎস লাশ দেখে হতবিহ্বল পিতা তার গায়ের চাদরটি মেয়ের শরীরে বিছিয়ে দেয়।
লাশের পাশেই একটি গাছের ডালে একটি বিছানার চাদর ঝুলছিল। খবর পেয়ে থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। সিআইডি পুলিশের ক্রাইমসিনের সদস্যরা জায়গাটি ঘিরে রেখেছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করছে। ঘটনাস্থলের একশ’ গজ দূর থেকে পুরুষের একজোড়া জুতা থানা পুলিশ উদ্ধার করে।
মারুফার বোন রসুলপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রহিমা (১৪) জানায়, রাতে খাবার খেয়ে তার বোন মারুফা তার সঙ্গেই ঘুমিয়ে ছিল। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে গভীর রাতে মারুফা ঘর থেকে বের হয়ে দীর্ঘক্ষণ পরেও ফিরে না আসায় বাবা-মাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে সে ঘটনাটি জানায়।
মারুফার মা বেদেনা আক্তার (৪৮) জানান, তার মেয়ে পর্দা করতো তবে একটু বোকা ধরনের ছিল। সবসময় হাসতো। এইজন্য তাকে কবিরাজি চিকিৎসাও দেয়া হয়েছিল। কীভাবে এই নৃশংস ঘটনা ঘটলো তা সে ধারণা করতে পারছে না।
মারুফার চাচি আজিরা খাতুন (৩৫) ভোরবেলায় জঙ্গল থেকে মারুফার লাশ উদ্ধারের খবর তারা জানতে পারে।গফরগাঁও থানার ওসি ফারুক আহম্মেদ বলেন, লাশটি আগুনে পোড়ানো ছিল। হাত ও পায়ে বাঁধার দাগ ছিল। তদন্ত ছাড়া হত্যার কারণ বলা যাচ্ছে না।