এক্সক্লুসিভবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিশ্ব সংবাদ

নাসার সৌরযান ‘পার্কার’ প্রথমবারের মতো সূর্যকে ‘ছুঁয়ে’ ফেলল

প্রথমবারের মতো সূর্যের বলয়ের মধ্যে ঢুকে পড়েছে নাসার সৌরযান। পার্কার নামের ওই সৌরযানটি করোনা নামের ওই সূর্যের  বলয়ের ভেতর ঢুকে পড়ে বলে মঙ্গলবার বিজ্ঞানীরা আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের এক বৈঠকে  ঘোষণা করেছেন।  বার্তা সংস্থা এপি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞানীরা জানান, চলতি বছরের এপ্রিলে মহাকাশযান পার্কার করোনার ভেতর ঢুকে পড়ে। সেই সময় পার্কার যে তথ্য সংগ্রহ করেছিল, এতদিনে তা বিজ্ঞানীদের হাতে এসে পৌঁছেছে।জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী নুর রাওফি এই ঘটনাকে ‘চমকপ্রদ উত্তেজনাপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছেন। 

পৃথিবীতে তৈরি কোনও মহাকাশযান তো বটেই, কোনও বস্তুও প্রথম ছুঁয়ে দেখল সূর্যকে! মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা মঙ্গলবার সূর্যকে ছোঁয়ার এই ঘোষণা দিয়েছে। উপগ্রহ চাঁদের অনেক কিছুই এতদিনে জানা সম্ভব হয়েছে। কাছের গ্রহ মঙ্গলেও এখন যাতায়াত করা যায়। এবার কাছের আরেক নক্ষত্রকে আরও কাছ থেকে জানার দরজা খুলল। নাসার এই কৃতিত্বে বিজ্ঞানীরা এবার চাঁদ-মঙ্গলের মতো সূর্যের রহস্য জানার অপেক্ষা করছেন।

বিজ্ঞানীরা জানান, ২০১৮ সালে পৃথিবী থেকে সূর্যের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল নাসার সৌরযান পার্কার। সূর্যের সবচেয়ে কাছে তা পৌঁছে গেছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। নাসার তরফে বলা হয়েছে, এর আগে সূর্যের এত কাছে কোনো যান পৌঁছাতে পারেনি। সূর্যের বলয়ের মধ্যে ঢুকে তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে পার্কার।

করোনা নামে ওই সূর্যের বলয়ে  পার্কার যখন পৌঁছেছিল তখন সেখানে উত্তাপ দুই মিলিয়ন কেলভিন ছিল বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। অর্থাৎ, সেখানে ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭২৬ দশমিক আট পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। ওই উত্তাপে সেকেন্ডে একশ কিলোমিটার বেগে করোনার ভেতরের তথ্য সংগ্রহ করেছে পার্কার।

সূর্যের বহিরাবরণ, যাকে ‘কোরোনা’ বলা হয়, তা ভেদ করে সূর্যের ভেতরে প্রবেশ করেছে নাসার সৌরতদন্ত যান ‘পার্কার।’ এই কোরোনাকে প্রচলিত কথাবার্তায় সূর্যের ‘উঠান’ বলা যায়। মূল বাড়ি আর সদর দরজার মধ্যে যেমন একটা নিরাপদ দূরত্ব থাকে, অনেকটা সেই রকম। তবে এই এলাকার মধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রবল। চৌম্বক ক্ষমতাও তীব্র। এতটাই ক্ষমতা ওই দুই শক্তির যে, তা সৌরপদার্থকে বহিরাবরণ পেরিয়ে বের হতে দেয় না। নিরাপদে থাকে সৌরজগতের গ্রহ-উপগ্রহ।

নাসার বিজ্ঞানীদের ধারণা, এর মধ্যে অন্তত তিনবার সূর্যের বলয়ের মধ্যে ঢুকেছে পার্কার। সব মিলিয়ে দশবার সূর্যের বলয়ে যানটি প্রবেশ করবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। ২০২৫ সাল পর্যন্ত পার্কার তার অভিযান চালিয়ে যাবে।রাওফির মতে, করোনায় যতটা মনে করা হয়েছিল তার চেয়ে ধূলিময়।

তিনি বলেন, ভবিষ্যত পার্কারের করোনায় অনুসন্ধান বিজ্ঞানীদেরকে সৌর বায়ুর উৎপত্তি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। এছাড়া কীভাবে সূর্য পুরো সৌরমণ্ডলকে পরিচালিত করে, পার্কারের পাঠানো তথ্য থেকে সে বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

হার্ভার্ডের স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অধ্যাপক দিব্যেন্দু বলছেন, পার্কারের সৌরতদন্তের এই সাফল্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সৌর হাওয়ার উৎপত্তিকে জানা। এর আগে সৌর হাওয়া কীভাবে সূর্য থেকে পৃথিবীতে এসে পৌঁছায় তা জেনেছিল পার্কার। তবে এবার সূর্যের কোরোনায় প্রবেশ করে চৌম্বক ক্ষেত্র এবং প্লাজমার নমুনা সংগ্রহ করেছে। এ থেকে সৌর হাওয়ার উৎপত্তি কীভাবে, কখন হচ্ছে তা জানা যাবে।

Back to top button