ফেসবুক সংস্থার নতুন নাম মেটা
জল্পনা ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। ফেসবুক যে নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করতে চাইছে, সেই ইঙ্গিত মিলেছিল আগেই। অবশেষে বদলে গেল ফেসবুকের নাম। সংস্থার নতুন নাম হল ‘মেটা’। তবে সংস্থার নাম বদলালেও ফেসবুক অ্যাপের নাম বদলাচ্ছে না। নতুন যে নামে সংস্থা আত্মপ্রকাশ করছে তার অধীনে একটি অ্যাপের নাম হয়ে থাকবে ফেসবুক। মনে করা হচ্ছে, সংস্থার অধীনে যেহেতু এখন ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের মতো একাধিক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, তাই সংস্থার নাম ফেসবুক হওয়া বাঞ্ছনীয় নয় বলেই মনে করছেন উচ্চপদস্থ কর্তারা।
চলতি বছরের সম্মেলনে ফেসবুকের প্রধানকর্তা মার্ক জাকারবার্গ নাম পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপরই আগের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম ঘোষণা করা হয়।বৃহস্পতিবার ফেসবুক কানেক্ট অগমেন্টেড এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কনফারেন্সে নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ফেসবুক, এখন মেটা নামে পরিচিত। একটি ভার্চুয়াল বিশ্বে কাজ করার এবং খেলার জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করার জন্য, সাই-ফাই শব্দের মেটাভার্সের উপর ভিত্তি করে নতুন মনীকার গ্রহণ করেছে।
আজ ‘কানেক্ট ২০২১’ নামে এক ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত হয়েছিলেন ফেসবুকের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার তথা প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ। নানা বিষয়ে আলোচনা হয় সেখানে। এরপরই সংস্থার নতুন নাম ঘোষণা করেন মার্ক জুকারবার্গ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংস্থার বর্তমানে যে নাম রয়েছে, তাতে আমাদের পুরো কাজের প্রতিফলন হয় না। আমরা ভবিষ্যতে আমাদের এই সংস্থাকে একটি মেটাভার্স সংস্থা হিসেবে পরিচয় করাতে চাই।’ আর সেই লক্ষ্যেই এই নাম পরিবর্তন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
মেটা সিইও মার্ক জুকারবার্গ বলেন, ‘আজকে আমরা একটি সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু আমাদের ডিএনএ-তে আমরা এমন একটি কোম্পানি যা মানুষকে সংযুক্ত করার জন্য প্রযুক্তি তৈরি করে, এবং মেটাভার্স হল পরবর্তী সীমানা, ঠিক যেমনটি আমরা শুরু করেছিলাম যখন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ছিল।’
কেন মেটা নামটি বেছে নেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে কম্পানির সিইও মার্ক জুকারবার্গ লিখেছেন, ‘ক্লাসিকস পড়তে বরাবরই ভালোবাসি। গ্রিক শব্দ ‘বিয়ন্ড’ (অনন্ত) থেকে এসেছে মেটা শব্দটি। ব্যক্তিগতভাবে যে শব্দ বেছে নেওয়ার কারণ আরো অনেক কিছু তৈরি করা বাকি। আমাদেরও পথচলার অনেক নতুন পথ বাকি, সেই ধারণা থেকেই এই নামকরণ।’
দিন কয়েক আগে একাধিক নেতিবাচক কারণে শিরোনামে এসেছিল ফেসবুক। কিছুদিন আগেই প্রযুক্তিগত সমস্যায় টানা ৬-৭ ঘণ্টা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ফেসবুক। এই দুই কারণে সংস্থার শেয়ারও নেমে যায় অনেকটাই। ওই সংস্থার অধীন অন্যান্য পরিষেবা, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার , ইন্সটাগ্রামের মতো পরিষেবাও একধাক্কায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জেরবার হন কোটি কোটি মানুষ।
এ সবের মধ্যেই ফ্রান্সেস হগান নামে সংস্থার এক পুরনো কর্মী নথি দিয়ে প্রমাণ করেন ফেসবুক জুড়ে নাকি হিংসার ছড়ানোর রসদ ছড়িয়ে আছে, ইন্সটাগ্রামের মোহ যে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষতি করছে, সে কথাও নাকি জানা ফেসবুকের। তিনি দাবি করেন, ‘ফেসবুক বারবার প্রমাণ করে দিয়েছে যে, তারা নিরাপত্তার থেকে বেশি জোর দেয় লাভে।’ তিনি মনে করেন, ফেসবুক আমাদের সমাজকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে আর বিশ্ব জুড়ে হিংসা ছড়াচ্ছে। কিছুদিন আগেই কিছু নথি ফ্রান্সেস তুলে দেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের হাতে। এসবের পরই একেবারে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করল জনপ্রিয় এই সংস্থা। আগামিদিনে কোন কোন চমক আসবে, সেই অপেক্ষাতেই রইলেন ব্যবহারকারীরা।