তিন বন্ধুর ফাঁদে পড়ে গ্রেপ্তার হন ইকবাল
তাঁরা তিনজনই নোয়াখালীর চৌমুহনী এস এ কলেজের ছাত্র। সম্প্রতি অনার্স পরীক্ষা দিয়েছেন। পরীক্ষা শেষ করে বেরিয়ে পড়েন ‘ঘোরাঘুরিতে’। শুরুতে তিনজন মিলে যান কক্সবাজারে। বেড়ানোর মধ্যে এমন একটা অ্যাডভেঞ্চারে জড়াবেন তা ভাবনাতেই ছিল না তাঁদের। সিনেমা, নাটকের মতো এই তিন তরুণ বাস্তবে মুখোমুখি হলেন তেমনই এক ঘটনার।
চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ের মাস্টার্স এর ছাত্র অনিক রহমান জানান, ১৯ অক্টোবর সোমবার রাতে তার বন্ধু মেহেদি হাসান মিশু তাদের ঢাকার তিন ব্যবসায়ী বন্ধু রায়হান, মামুন ও হৃদয়সহ পাঁচ বন্ধু কক্সবাজার বেড়াতে যায়। ২০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে থাকা তাদের আরেক বন্ধু সাইফুল ইসলাম সাইফ তাদের সাথে যোগ দেয়। এরপর বিকাল ৪টায় দরিয়ানগরে ঘুরতে বের হয়। সেখানে তারা ছয় বন্ধু মিলে সময় কাটাতে গান গাওয়ার সময় ইকবাল ও তাদের সঙ্গে সুর মেলাতে থাকে। এরপর ওই রাতে টেলিভিশনে এবং ফেসবুকে ইকবালের ছবি দেখে তাদের সন্দেহ হয়।
পরদিন বৃহস্পতিবার আবারও ওই ব্যক্তির সামনে পড়েন। এবার সুগন্ধা সমুদ্র সৈকতে। লোকটির অদ্ভুত আচরণ, ঘোরাঘুরি অনেকের মতো তিন বন্ধুর কাছেও ধরা পড়ে। একপর্যায়ে তিনজনের একজন সাজেদুর রহমানের (অনিক) কাছে লোকটিকে চেনা চেনা মনে হয়। রহস্যভেদের চেষ্টা পেয়ে বসে তাঁদের। তখন আমরা তার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলি। এক পর্যায়ে ইকবাল পালিয়ে যেতে চাইলে, তাকে নাস্তা ও সিগারেট খাইয়ে কৌশলে আটকে রাখি। এ সময় তার নাম জানতে চাইলে তিনি ইকবাল বলে জানায়।
তখন তারা কৌশলে তার ছবি তুলে মোবাইলে নোয়াখালীর এএসপির সঙ্গে কথা বলে তার ছবি পাঠাই। তিনি আমাদের কুমিল্লার পুলিশ সুপারের মোবাইল নম্বর দেন। এরপর, কুমিল্লার পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছবি পাঠালে, তিনি কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। পরবর্তীতে রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ এসে তাকে আটক করে নিয়ে যায়।
পুলিশ সূত্র জানায়, পরে নোয়াখালীর এসপি পুরো বিষয়টি কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে জানান। তিনি কুমিল্লার এসপিকে বলেন, কয়েকজন ছেলে বিষয়টি তাঁকে জানিয়েছেন। তবে ছেলেরা নিশ্চিত নন ইনিই ইকবাল কিনা। তবে ছেলেরা বলেছেন, গণমাধ্যমে আসা ছবির সঙ্গে এই ব্যক্তির চেহারায় মিল আছে।
কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ ছাত্রদের সম্ভব হলে ইকবালে ছবি ও ভিডিও পাঠাতে বলেন ।’ওরা ছবি ও ভিডিও পাঠালে সেই ছবি ও ভিডিও ইকবালের পরিবারের সদস্যদের দেখানো হয়। তাঁরা নিশ্চিত করেন ছবির ব্যক্তিই ইকবাল হোসেন।ইকবাল কোনো মোবাইল ব্যবহার করেন না। তাঁকে শনাক্ত করতে পুরোপুরি ‘ম্যানুয়াল’ সূত্রের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। ছবিই ছিল ভরসা।ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবি পুলিশ ইকবালের পরিবারের সদস্যদের দেখায়। তারপর ই তাঁরা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যান এই সেই ইকবাল, যাঁকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তাঁরা হন্যে হয়ে খুঁজছেন।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় কুমিল্লার নানুয়ার দীঘির পাড়ে পূজামণ্ডপে এক ব্যক্তি কোরআন শরিফ রেখে, প্রতিমার হনুমানের গদা হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসছেন। সেটি দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীর (১৩ অক্টোবর) দিন। কে রেখেছেন তা ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে পুলিশ। কিন্তু ধরা পড়ছিলেন না ইকবাল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বলেছেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। ফলে ধরতে সময় লাগছে।
অভিযানে সম্পৃক্ত পুলিশ জানায়, কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত ছোট ছোট দলে পুলিশ ৩৫ থেকে ৪০ টি অভিযান করেছে। কিন্তু ইকবালকে ধরা যায়নি।এই ঘটনার তদন্তে কুমিল্লা জেলা পুলিশ থেকে শুরু করে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ), কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) যুক্ত ছিল।
এর আগে, কুমিল্লার পূজা মণ্ডপে পবিত্র কুরআন শরীফ রাখার ঘটনায় ১৬ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের একটি সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যমের কাছে সরবরাহ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন মসজিদ থেকে কীভাবে পবিত্র কুরআন শরিফ নিয়ে বের হয়ে পূজামণ্ডপের দিকে যান এবং মণ্ডপ থেকে হনুমানের গদা হাতে নিয়ে ফেরেন।