শক্তিমান অভিনেতা ড. ইনামুল হক মারা গেছেন
একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক ও শিক্ষক ড. ইনামুল হক আর নেই। তিনি সোমবার দুপুরে ঘুমের মধ্যে বেইলি রোডের বাসায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ড. ইনামুল হকের জামাতা অভিনেতা লিটু আনাম বলেন, কোনো ধরনের অসুস্থতা ছিল না তার। তিনি বাসায় চেয়ারে বসা অবস্থাতেই মারা গেছেন। তার দাফনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বাংলা ম্যগাজিনকে বলেন, তার মৃত্যুর খবর পেয়েছি। দাফন প্রক্রিয়ার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তার পরিবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।ড. ইনামুল হকের জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী সদরের মটবী এলাকায়। তার বাবা ওবায়দুল হক ও মা রাজিয়া খাতুন। তার পুরো পরিবারই নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। তার দাম্পত্য সঙ্গী বরেণ্য নাট্যজন লাকী ইনাম। তাঁদের সংসারে দুই মেয়ে হৃদি হক আর প্রৈতি হক। দুই জামাতা অভিনেতা লিটু আনাম ও সাজু খাদেম।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) তিনি দীর্ঘ ৪৩ বছর শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এই দীর্ঘ সময়ে ১৫ বছর রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং দুই বছর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ফেনী পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে তিনি বিএসসি ও এমএসসি সম্পন্ন করেন। পরে ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি লাভ করেন।
নটরডেম কলেজে পড়াশোনার সময়ই তিনি প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। ফাদার গাঙ্গুলীর নির্দেশনায় তিনি ‘ভাড়াটে চাই’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৬৮ সালে বুয়েট ক্যাম্পাসেই ‘নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়’র যাত্রা শুরু হয়। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। দলটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এই দলের হয়ে প্রথম তিনি মঞ্চে অভিনয় করেন আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’। এরপর এই দলের হয়ে ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘নূরুল দীনের সারা জীবন’সহ আরও বহু নাটকে অভিনয় করেন।
ইনামুল হক অভিনীত প্রথম টিভি নাটক মোস্তফা মনোয়ার পরিচালিত ‘মুখরা রমনী বরশীকরণ’। তার লেখা প্রথম নাটক ‘অনেকদিনের একদিন’ নির্মাণ করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিটিভির প্রথম নাটক ‘বাংলা আমার’ এবং একুশের প্রথম নাটক ‘মালা একশত মালঞ্চের’ তারই লেখা ছিল।
১৯৯৫ সালে তিনি এই দল থেকে বের হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন’। এই দলের হয়ে তিনি মঞ্চে অভিনয় করেন ‘জনতার রঙ্গশালা’,‘সরমা’সহ আরও বেশ কয়েকটি নাটকে। ২০০০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন ইনস্টিটিউট অব ড্রামা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।