ব্যর্থতাটা কাঁদায়নি মেসিকে,২৮ বছর পর কোপা চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা
দীর্ঘ ৭১ বছর পর ঐতিহাসিক মারাকানায় হারল ব্রাজিল
ব্যর্থতাটা কাঁদায়নি মেসিকে,২৮ বছর পর কোপা চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। কোপার ফাইনাল জিতে আর্জেন্টিনা এখন সাফল্যের জোছনায় আলোকিত একটি দল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়েই কোপা আমেরিকার শিরোপা ঘরে তুলল আলবিসেলেস্তেরা। সেই সঙ্গে কোপায় সবচেয়ে বেশি (১৫টি) শিরোপা জেতার রেকর্ডে উরুগুয়ের সঙ্গী হলো আর্জেন্টিনা। দীর্ঘ ৭১ বছর পর ঐতিহাসিক মারাকানায় হারল ব্রাজিল। এরই মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছেন আর্জেন্টাইন তারকা ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি। আজ রোববার সকালে ৬টায় রিও দে জেনেইরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে ১-০ গোলে জিতেছে আর্জেন্টিনা।
কাগজে-কলমের সব হিসাব অবশ্য ম্যাচের আগে উল্টোটাই হওয়ার আভাস দিয়েছিল। ব্রাজিল এই মুহূর্তে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে শক্তিশালী দল। কি র্যাঙ্কিংয়ে, কি খেলোয়াড়ের নামের ভারে। প্রমাণ দেবে পরিসংখ্যানও। আর্জেন্টিনার কাছে আজকের হারটা ছিল ২০১৬ ইউরোতে পেরুর কাছে হেরে গ্রুপ পর্বে বিদায়ের পর লাতিন কোনো দলের কাছে ব্রাজিলের প্রথম হার। পাঁচ বছর আগের সেই ব্রাজিল ছিল দুঙ্গার ব্রাজিল।
ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দলই বেশ আগ্রাসী মেজাজে খেলে। লাতিন ফুটবলের সৌন্দর্য ছাপিয়ে যায় খেলোয়াড়দের অতি আক্রমণাত্মক আচরণে। সবমিলিয়ে ম্যাচে ফাউল হয়েছে ৪১টি, যার মধ্যে ব্রাজিল করেছে ২২টি। রেফারি হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন ৯টি, যার মধ্যে পাঁচটি দেখেছেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা। দি মারিয়া টুর্নামেন্টে আগের কয়েক ম্যাচে বদলি নেমে আলো ছড়িয়েছেন, কিন্তু আজ দি মারিয়াকে শুরু থেকেই খেলিয়েছেন স্কালোনি। ম্যাচের ২২ মিনিটের সময় গোল দিয়েছিলেন ডি মারিয়া; সেটি আর শোধ করতে পারেনি ব্রাজিল। তবে সেমিফাইনালের মতো এবারো আর্জেন্টাইনদের গোল খাওয়া থেকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক মার্টিনেজ। ২০০৪ সালে সিজার ডিলগাডোর পর ডি মারিয়া প্রথম আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় হিসেবে কোপা আমেরিকার ফাইনালে গোল করলেন।
গোলটি দেখুন –
#CopaAmérica 🏆@Argentina salió campeón de América y estas fueron las acciones más destacadas de la final ante Brasil
🇦🇷 Argentina 🆚 Brasil 🇧🇷#VibraElContinente #VibraOContinente pic.twitter.com/uXB9krhnbB
— Copa América (@CopaAmerica) July 11, 2021
গোল হজমের পর ব্রাজিল তা শোধে মরিয়া হয়ে ওঠে। ২৬তম মিনিটে কাসেমিরোর শট মার্টিনেসের গ্লাভসে জমা পড়ে। তবে প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় ভরসা নেইমারকে সেই অর্থে সক্রিয় দেখা যায়নি। নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন পুরো আসরে দুর্দান্ত খেলা লিওনেল মেসিও। যদিও ৩২তম মিনিটে তার একটি শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর ২৫ গজের বিপজ্জনক জায়গা থেকে ফ্রি-কিক পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি ব্রাজিল।
৩৪ মিনিটে নেইমারের ফ্রি-কিক আর্জেন্টিনার রক্ষণের দেওয়ালে প্রতিহত হয়। ৪২তম মিনিটে এভারটনের আক্রমণ প্রতিহত হয় আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক মার্টিনেজের দক্ষতায়। দুই মিনিট পর নেইমারের কর্ণার থেকে বল ধরে আক্রমণ শানান রিচার্লিসন। কিন্তু তা মাঠের বাইরে চলে যায়। ফলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ব্রাজিল।
দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেই আর্জেন্টিনার জালের ঠিকানা খুঁজে নেয় সেলেকাওরা। কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায় সেই গোল। ফলে ম্যাচের ৫৩ মিনিট শেষেও ১-০ গোলে এগিয়ে থাকে আর্জেন্টিনা
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ম্যাচ জমে উঠে। ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠে ব্রাজিল। তবে আর্জেন্টিনার জমাট রক্ষণ কিছুতেই ভেদ করে পারেনি স্বাগতিকরা। ৮৭তম মিনিটে গাব্রিয়েল বার্বোসার দুর্দান্ত শট ফিরিয়ে দেন মার্টিনেজ। এতেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনা একাদশ: দামিয়ান মার্টিনেজ, ওটামেন্দি, আকুনা, মন্টিল, রোমেরো, ডি পল, পারেদেস, লো সেলসো, মেসি, ডি মারিয়া, লাউতারো মার্টিনেজ।
ব্রাজিল একাদশ: এডারসন, থিয়াগো সিলভা, ড্যানিলো, মারকুইনহোস, রেনান লোদি, ক্যাসেমিরো, ফ্রেড, এভারটন, লুকাস পাকুয়েতা, রিচার্লিসন, নেইমার।
এখন পর্যন্ত দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ১০৫ বার। ১৯১৪ সালে প্রথমবার মুখোমুখি হয় সেলসাও-আলবিসেলেস্তেরা। দুই দলের ১০৫ মোকাবেলায় ব্রাজিলের জয়ের পালা ভারি। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা জেতে ৪১টি ম্যাচে, আর্জেন্টিনা ৩৮টিতে। আর বাকি ২৬টি ম্যাচ ড্র।