দলের ভিতরে ভিন্নমতকে পেশিশক্তি দিয়ে দমনকারিরা আওয়ামী লীগের নয়, তারা আসলে দুর্বৃত্ত
এ ধরনের ঘটনাগুলো যারা ঘটাচ্ছেন তারা কখনও আওয়ামী লীগের মঙ্গল চায় না
জেলায় জেলায় এমনকি উপজেলা পর্যায়ে সহিংসতা এবং কোন্দল ছড়িয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের জেলা কমিটিগুলো নিয়ে এখন দলের ভেতর বিভিন্ন গ্রুপ এবং উপগ্রুপগুলো প্রকাশ্য হচ্ছে। প্রতিদিনই কোথাও-না-কোথাও দুগ্রুপের সংঘর্ষের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে।গত ডিসেম্বর মাসে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাস থেকে ১১ মাসেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রায় ২ হাজার সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাগুলোতে মারা গেছেন ১২ জন, আহত হয়েছেন শতাধিক।
আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে এ তথ্য গুলো পাওয়া গেছে। এই সহিংসতা গুলো এখন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আজও নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি যেহেতু জেলা পর্যায়ে কমিটিগুলো করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ৩৩ টি জেলার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা কমিটির নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। এটি যখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে আলোচনা হয় এবং তখন আওয়ামী লীগ সভাপতি ‘মাইম্যান’ কমিটি দেয়ার ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। দেখা গেছে, জেলা থেকে যেগুলো পাঠানো হয়েছে সেখানে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ভাগবাটোয়ারা করে কমিটি করেছে।
কোথাও সভাপতি তার নিজের লোকজনকে দিয়ে কমিটি করেছেন। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, একটি জেলায় সভাপতি পদের জন্য একাধিক ব্যক্তি থাকেন। শেষ পর্যন্ত সেখানে একটি সমঝোতার মাধ্যমে একজনকে সভাপতি করা হয়। নতুন যিনি সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন, তিনি তার যারা প্রতিদ্বন্দ্বী তাদেরকে কমিটির সহ-সভাপতিতো নই বরং কোন পদেই রাখেননি। যার ফলে জেলাগুলোতে যারা বঞ্চিত তারা ওই কমিটিটা তার পকেটস্থ। এরকম ভাবেই প্রস্তাবটি কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন।
যেটি আওয়ামীলীগ সভাপতি অনুমতি দেননি। আর এর ফলে জেলাগুলোতে যারা বঞ্চিত, তারা এখন শক্তি পেয়েছেন। তারা বুঝতে পেরেছেন যে, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সর্বময় কর্তৃত্ব এখন আর থাকবে না, সেজন্য তারাও সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছেন। অন্যদিকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা মনে করছে এখন যদি প্রতিপক্ষ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তাহলে তাদের জেলায় যে আধিপত্য এবং সর্বময় কর্তৃত্ব সেটি ক্ষুন্ন হবে। আর এ কারণেই বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এমনকি ইউনিয়নের দুই গ্রুপের মধ্যে প্রকাশ্যে সংঘর্ষ-সহিংসতা ও হানাহানির ঘটনা ঘটছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতির নজরে এসেছে। যারা এরকম করছেন,মারামারি করছেন এবং নিজেদের দলের লোকদের উপর চড়াও হচ্ছে। তাদের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। প্রত্যেকটি সহিংসতার ঘটনার জন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকদের তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, আওয়ামী লীগের প্রতিটি বিভাগের জন্য একজন করে সাংগঠনিক সম্পাদক রয়েছেন। এই সাংগঠনিক সম্পাদকরা যেকোন সহিংসতার ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে এলাকায় নিরপেক্ষভাবে খোঁজখবর নেবেন । কেন ঘটনা ঘটলো, কারা দায়ি তার একটি পুর্নাঙ্গ রিপোর্ট আওয়ামী লীগ সভাপতিকে দিবেন।
আওয়ামীলীগ সুত্রে জানা গেছে যে, আগে এ ধরনের ঘটনাগুলো কে উপেক্ষা করা হতো। কিন্তু ক্রমশ এ ধরনের ঘটনাগুলো বেড়ে যাওয়ার ফলে আওয়ামী লীগ দলীয় ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তার এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন হলে যারা বিভিন্ন এলাকায় কোন্দল মারামারি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ দৃশ্যমান হতে পারে।
আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন যে, দলের ভিতরে মতবিরোধ থাকবেই, ভিন্নমত থাকবেই এটিই একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সৌন্দর্য । কিন্তু ভিন্নমতকে পেশিশক্তি দিয়ে দমন করা বা দু`পক্ষের মধ্যে মারামারি, অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া এটি কখন আওয়ামীলীগের সংস্কৃতিতে নয়। এটি যারা করছে তারা আওয়ামী লীগের নয়, তারা আসলে দুর্বৃত্ত।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, আসলে জেলায় জেলায় যে মারামারি গুলো হচ্ছে, সেটি আসলে হাইব্রিডদের হাত থেকে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিতরা আওয়ামী লীগের পুনরুদ্ধার করার চেষ্টার অংশ হিসেবে মারামারি এবং সহিংসতার ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের ত্যাগী এবং পরীক্ষিতরা কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন।
এখন যেমন আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদেরকে মূল্যায়ন করার কথা বলছেন, তখন তারা সংঘবদ্ধ হচ্ছে। আর এটি দলের হাইব্রিড-অনুপ্রবেশকারীদের পছন্দ হচ্ছে না। এজন্য তারা চড়াও হওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, এ ধরনের ঘটনাগুলো যারা ঘটাচ্ছেন তারা কখনও আওয়ামী লীগের মঙ্গল চায় না। তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভাপতি কঠিন এবং কঠোর অবস্থান গ্রহণ করছেন।