ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ দেশ থেকে বাঙালি মুসলিম সংস্কৃতি মুছে ফেলতে চেয়েছিল

সকালের মক্তব বাঙালি মুসলিম সংস্কৃতির অংশ। একসময় ফজরের পর গ্রামের ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে কোরআন ও সিপারা নিয়ে মক্তবে ছুটে যেত। বিভিন্ন বাড়ি থেকে শোনা যেত মধুময় কোরআন তিলাওয়াত। ছোট-বড় সবাই মিলে মসজিদে কোরআনসহ দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলোর শিক্ষা অর্জন করত।

কিন্তু আওয়ামী সরকারের গত ১৫ বছরের শাসনামলে অনেকটাই হারিয়ে গেছে বাঙালি মুসলিম সংস্কৃতির এই অংশ। ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে রক্তের বিনিময়ে মুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ এই দেশ থেকে বাঙালি মুসলিম সংস্কৃতি মুছে ফেলতে চেয়েছিল। ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চেয়েছিল ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতি।

বাংলাদেশের কোনো টিভি চ্যানেল ভারতে দেখানো হয় না। অথচ সে দেশের সংস্কৃতি প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জিটিভি ও স্টার জলসার মতো চ্যানেলগুলো। আওয়ামী লীগ শুধু এতটুকু করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। কোথাও কোরআন শিক্ষার দরস হলে সেটা দমনেও সিদ্ধহস্ত ছিল তারা।

গত ১০ মার্চ পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানিয়ে ঢাবির বটতলায় কোরআন তিলাওয়াত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আরবি সাহিত্য পরিষদ। আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের কেন শাস্তি দেওয়া হবে না, তার জবাব চেয়ে গত ১৩ মার্চ আরবি বিভাগের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছিলেন কলা অনুষদের সদ্য সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির।

কেউ নামাজ আদায় করলে, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে বা ভারতবিরোধী মনোভাব প্রকাশ করলেই দেওয়া হতো জঙ্গি ট্যাগ। নেওয়া হতো রিমান্ডে। বাধা দেওয়া হতো ধর্মীয় মাহফিলেও।

এমনকি আওয়ামী দুঃশাসনে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন আর নিপীড়নের শিকার হয়েছে আলেম সমাজ। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে দেশ মুক্ত হয়েছে। এ দেশে থাকবে না কোনো বৈষম্য। হিন্দু-মুসলিম সবাই ভাই ভাই। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে সবাই ভারতীয় আধিপত্যবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।

নতুন এই বাংলাদেশে হবে বাঙালি মুসলিম সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্র। সকালের মক্তবগুলো আবার চালু হবে। শিশুরা মক্তবে যাবে। ছোট-বড় সবাই মিলে কোরআন শিখবে। প্রত্যেক ঘর থেকে সকালে ভেসে আসবে কোরআনের মধুর সুর। মক্তবের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছেন নূরানি তালিমুল কোরআন বোর্ড বাংলাদেশের পরিচালক মাওলানা ইসমাইল বেলায়েত হুসাইন।

তিনি বলেন, কোরআনের তিলাওয়াত, দোয়া-দুরুদ আর মাসআলা আমরা সকালের মক্তব থেকেই শিখেছি। মসজিদের বারান্দা আর জুমাঘরের উঠানেই কালিমার উঁচু আওয়াজ শিখেছি। সুরে সুরে শিখেছি দোয়া-দুরুদ আর কালিমায়ে শাহাদাত। ইসমাইল বেলায়েত হুসাইন আরও বলেন, শিশু-কিশোরদের পদভারে মুখরিত করে তোলা প্রয়োজন সকালের মক্তবগুলো। শিশু-কিশোরদের মন কাদামাটির মতো নরম। কাদামাটিতে সব আঁকা যায়। আমাদের সন্তানদের মনের শৈশবে আল্লাহতায়ালা ও রাসুলের নাম এঁকে দিতে হবে। যত্ন নিয়ে মক্তবখানা চালু করা জরুরি। তবে আমার দুটি পরামর্শ আছে।

 

এক. দেশব্যাপী মক্তবগুলোয় পড়াশোনার উন্নত পরিবেশ প্রয়োজন। যতটা পারা যায়, ছাত্রছাত্রীদের ভালো পরিবেশ দিতে হবে। সমাজের সব শ্রেণিপেশার মানুষ যেন সন্তানকে মসজিদে পাঠিয়ে মানসিক স্বস্তিতে থাকে। উন্নত আর মানসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

দুই. গাছাড়া শিক্ষা দেওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে নূরানি ট্রেনিংপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মাধ্যমে মক্তব পরিচালনা করতে হবে। পড়াশোনার মান, উন্নত পাঠদান পদ্ধতি শিশু মনোবিজ্ঞান জানা একজন আদর্শ শিক্ষক মক্তবকে জীবন্ত করতে পারে। বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসাশিক্ষা বোর্ড-বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক আমার দেশ-এর নতুন এই যাত্রাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আবহকাল থেকেই বাংলাদেশের মানুষ মক্তবে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করে এসেছে। কিন্তু কোরআনের দুশমনদের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মক্তব সংস্কৃতি প্রায় হারিয়ে যাওয়ার পথে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোরআন শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটানোর জন্য আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলিম। তাই আমি বলব, আমাদের শিক্ষার সর্বস্তরে বিশেষ করে প্রাথমিক ও হাইস্কুল লেভেলে কোরআন শিক্ষা এবং ইসলামের মৌলিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা অপরিহার্য। অন্তর্বর্তী সরকারের যারা দায়িত্বশীল পর্যায়ে আছেন, আমি তাদের কাছে আহ্বান জানাব, কোরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য আপনারা বাস্তবমুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button