পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ ও সুবিধাভোগী অফিসারদের তালিকা
ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের দুই মাসের বেশি অতিবাহিত হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে গণহত্যাকারী স্বৈরাচারের দোসররা। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্রসচিবের আশেপাশের অনেকেই ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুগত সুবিধাভোগী কর্মকর্তা।
স্বৈরাচারের দোসর পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনেকে কর্মকর্তাদের ব্যাপক অসন্তোষ ও ক্ষোভের মুখে সরিয়ে দেয়া হলেও তার নিয়োগকৃত স্বৈরাচারের অনুগত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা এ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে আছে এখনও। এই মুহূর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে হস্তক্ষেপ করছে পলাতক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সহযোগী কুখ্যাত সামিয়া সিন্ডিকেট।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বঞ্চিত কর্মকর্তা -কর্মচারীরা মনে করছেন কোন ত্যাগ তিতিক্ষা ছাড়া বর্তমান সচিব এবং উপদেষ্টা তাদের কাঙ্ক্ষিত পদ পাওয়ার পর বৈষম্য নিরসনের কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ তো নেননি বরং ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের প্রত্যক্ষভাবে প্রশ্রয় দিয়ে শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করছেন। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনসহ অন্যান্য বাংলাদেশী দূতাবাস বর্তমানে আওয়ামী পন্থী কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
দিপু মনি এবং শাহরিয়ার আলম এর মাধ্যমে তাদের নিজস্ব এলাকার প্রায় ২০০ শতাধিক কর্মচারী-কর্মকর্তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে অবৈধভাবে নিয়োজিত রয়েছে। পলাতক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের রাজশাহী এলাকার অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় শতাধিক কর্মচারীকে অবৈধভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকুরী স্থায়ীকরণের ষড়যন্ত্র চলছে।
এ সকল অবৈধ নিয়োগ এবং চাকরি স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়ার সাথে সামিয়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত সাবেক মহাপরিচালক (প্রশাসন) এবং সাবেক পলাতক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের আপন ভাইয়ের বন্ধু ডিএম সালাউদ্দিন মাহমুদ এবং বর্তমান মহাপরিচালক ( প্রশাসন) নাজমুল হকের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকল স্তরের কর্মচারীদের মধ্যে এই অবৈধ নিয়োগের ব্যাপারে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
১। সামিয়া আনজুম:
পলাতক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের ঘনিষ্ঠ সহচর ও মোমেনের স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সামিয়া আনজুম লস এঞ্জেলসের কন্সাল্ জেনারেলের দায়িত্বে আছেন। আলগা মোমেন ও তার স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে সামিয়ার বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মোমেন দায়িত্বে থাকাকালীন বিদেশে পদায়ন, নিয়োগ, স্পর্শকাতর সকল বিষয়ে সামিয়া সিন্ডিকেট প্রভাব বিস্তার করার বিষয়টি মন্ত্রণালয় সকলের কাছে ওপেন সিক্রেট। অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারী পর্যায়ের ব্যক্তিদের সামিয়া ও তার পরিচালিত সিন্ডিকেটের কাছে ধরনা দিতে হতো।
এমনকি সামিয়ার কাছে বিরাগভাজন হবার কারণে অনেকেই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভালো পোস্টিং পায়নি। বিদেশে কোন কর্মকর্তা পড়ালেখার বিষয়েও এই নারী কর্মকর্তার অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল। লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স এ পড়ালেখার সুযোগ পেয়েও মুনতাসির মোর্শেদ নামে একজন কর্মকর্তা শুধুমাত্র সামিয়া আনজুমের আক্রোশের শিকার হয়ে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আরেক কর্মকর্তা শাহ আহমেদ শফি হেনস্থার শিকার হয়ে ৪ বছর রাষ্ট্রদূত পদ পাননি সামিয়ার যৌন হয়রানীর মিথ্যা অভিযোগ ও আক্রোশের কারণে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত পাঁচ বছরে আলগা মোমেনের সময়ে সকল অনাচার এবং বৈষম্যের মূল হোতা কুখ্যাত সামিয়া।
বর্তমানে এই কর্মকর্তা দ্রুত রাষ্ট্রদূত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিজের পদায়ন নিশ্চিত করতে সচেষ্ট। সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ফ্যাসিস্ট সরকারও আলগা মোমেনের একান্ত সহযোগী সামিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্মকর্তারা জোর দাবী তোলেন। সামিয়া আনজুম মহাপরিচালক (জাতিসংঘ) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল অপকর্মকে বৈধতা দেওয়ার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মহলে দেন দরবারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
ডক্টর ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে সরকারি প্রোপাগান্ডার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন এই নারী কর্মকর্তা। উপদেষ্টা আদিলুর রহমান ও অধিকারের বিরুদ্ধে অসত্য বক্তব্য ও প্রচারণায়ও এই সুবিধাবাদী নারী কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের থিংক ট্যাংক সি আর আই এর প্রধান ববি সিদ্দিকী, তার স্ত্রী পেপে সিদ্দিকী এবং অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার সাথে সামিয়ার ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি সর্বজনবিদিত।
বর্তমানের লস এঞ্জেলেসে বসে সামিয়া সিন্ডিকেট মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করছে। পলাতক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের একজন মামাকে লস এঞ্জেলস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিয়োগ দিয়েছে সামিয়া। সামিয়া আনজুম বর্তমানে ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাসের দূতাবাস প্রধান হতে জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছে। পলাতক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলগা মুমিন ঘনিষ্ঠ বেশ কিছু কর্মকর্তা সামিয়ার পক্ষে লবিং করছে। কুখ্যাত সামিয়াকে অবিলম্বে অপসারণ করা জরুরী।
২। ইকবাল আহমেদ – ২১ ব্যাচ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম সুবিধাভোগী, অযোগ্য ও দলবাজ কর্মকর্তা ফ্লোরিডায় নিযুক্ত কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ বিগত ১০ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিরোধীপক্ষের অফিসারদের সাথে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণসহ তাদেরকে মন্ত্রনালয়ে কোনঠাসা করে রেখেছিলেন। তিনি দলবাজ ও চাপাবাজ হিসেবে বহুল আলোচিত। সামিয়া আনজুম এবং ইকবাল আহমেদ মিলে আলগা মোমেনের সময়ে মন্ত্রণালয়ের জুনিয়র এবং সিনিয়র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর অন্যায় নির্যাতন চালাত।
দলবাজ সামিয়া ও ইকবাল যৌথভাবে মন্ত্রণালয়ের স্পর্শকাতর সকল বিষয়ে হস্তক্ষেপ করত এবং পোস্টিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক পররাষ্ট্রমন্ত্রীআলগা মোমেন’কে যে ক’জন অফিসার (সামিয়া আন্জুম সহ) বিভিন্ন বদলী-পদায়ন ও অন্যান্য অফিস সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি তাঁদের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড। পতিত স্বৈরাচারের প্রভাব বলয় কাজে লাগিয়ে কোন পূর্বাভিজ্ঞতা ছাড়াই চাপাবাজ ইকবাল মিলান এবং ফ্লোরিডা’তে কনসাল জেনারেল হিসেবে কাজ করেছেন। সামিয়া ও ইকবালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
৩। ফারুক হোসেন ২৪ ব্যাচ
আলগা মোমেনের একান্ত সহযোগী ফারুক হোসেন বর্তমানে টরেন্টোতে বাংলাদেশের কনসাল্ জেনারেল হিসেবে কর্মরত আছেন। ২৪ ব্যাচের এই কর্মকর্তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম সুবিধাভোগী তেলবাজ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। কুখ্যাত সামিয়া সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য এই ফারুক। আলগা মোমেনের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রমোশন, পোস্টিংসহ স্পর্শকাতর সকল বিষয়ে ফারুকের ভূমিকা ছিল লক্ষণীয়। এই ফারুক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর হিসাবে সকল পলিসির ব্যত্যয় ঘটিয়ে তিনবার নিউইয়র্কে পোস্টিং করেছেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে মোমেনের আশীর্বাদ পেয়ে সরাসরি টরেন্টোতে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন। অবিলম্বে সামিয়া সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য ফারুককে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জোর দাবি জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
৪। তাহলীল দেলোয়ার ২৮ ব্যাচ
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খুনি (ফাঁসির দন্ডে দন্ডিত) কর্নেল দিলাওয়ারের মেয়ে তাহলীল দিলাওয়ার গত সাত বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত আছেন। তার হাজবেন্ড এবং দুই সন্তান অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক এবং তার হাজবেন্ড নিয়ম বহির্ভূত ভাবে অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে ৭ বছর যাবত তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত আছেন। মন্ত্রণালয় চাকুরীকালীন পরিচালক (জাতিসংঘ) হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের গুম ও হত্যাকাণ্ডকে তিনি সমর্থন দিয়েছেন। তিনি তার বাবার ব্যাকগ্রাউন্ড কে কাজে লাগিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় অভূতপূর্ব সুবিধা ভোগ করেন।
তিনি বাংলাদেশ মিশন ক্যানবেরাতে কর্মরত রয়েছে প্রায় ৭ বছরের অধিক সময় ধরে যা একেবারেই অস্বাভাবিক এবং পদায়ন নীতিমালার বিরোধী । উক্ত নীতিমালা অনুযায়ী ক গ্রুপের কোন মিশনে তিন বছরের অধিক সময়ে একনাগাড়ে কর্মরত থাকতে পারবেন না। গত ২৫ শে জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংস্থাপন শাখা থেকে তাকে দেশে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দিয়ে পত্র জারি করা হয় । পরবর্তীতে প্রায় দশ মাস পার হয়ে গেলেও তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেননি। যদিও গত সাত আগস্ট দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পরিচালক-৯ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের কথা ছিল, কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের কারণে তিনি দেশে ফেরেননি। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের নির্ধারিত সংখ্যক কর্মকর্তা পদের বিপরীতে অতিরিক্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন যা নিয়ম বহির্ভূত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে ৭ অক্টোবর তারিখে stand release করলেও তিনি অদৃশ্য শক্তির জোরে দেশে ফিরে আসেননি।
৫। ফারজানা দিনা
ফারজানা দিনা কুখ্যাত পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম রুহানীর স্ত্রী। খুনি পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম রূহানি বর্তমানে পলাতক রয়েছে। গোলাম রূহানী ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর আপন ছোট ভাই। বিগত সরকারের সময়ে বিরোধী মত দমনে দক্ষ এই কুখ্যাত পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী ফারজানা দিনা সুশীল পররাষ্ট্র সচিবের প্রশ্রয়ে বহাল তবিয়তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার দাপট বজায় রেখেছেন। কয়েকদিন পূর্বে জাতিসংঘ অনুবিভাগ থেকে তাকে সরিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়েছে। খুনি গোলাম রূহানী কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। দিনা ও রুহানিকে বিদেশন্থ বাংলাদেশ মিশনে পদায়নের মাধ্যমে পালাতে সহায়তা করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর একান্ত বিশ্বস্ত কর্মী সিনিয়র সহকারী সচিব শোয়েব।ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের দুই মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসন অনুবিভাগ এবং গোপনীয় এসএসএ শাখায় বহাল রয়েছে স্বৈরাচারের দোসররা।
৬। নাজমুল হক
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের কট্টর সমর্থক নাজমুল হককে মহাপরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন অপসারিত পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। ৮ আগষ্ট ২০২৪ তারিখে রাতের আঁধারে নাজমুলকে মহাপরিচালক প্রশাসন হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। নাজমুল এর আগে আওয়ামী সরকারের সময়ে পরিচালক (সংস্থাপন), গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় এস এস এ শাখায় কর্মরত ছিলেন। তিনি তার কর্মজীবনে দ্বিপাক্ষিক ও বহু পাক্ষিক কূটনীতিতে কোন প্রকার অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে আওয়ামী লীগ সরকারের বদান্যতায় কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও তিনি বার্মিংহাম ও জেদ্দায় বাংলাদেশের কনসাল্ জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নাজমুল হকের বিরুদ্ধে জেদ্দায় কন্সাল্ জেনারেল থাকাকালীন দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ আছে।নাজমুল হক ও তার স্ত্রী ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী। তার স্ত্রী রাশেদা রওনক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের ছাত্রী হয়েও আওয়ামী সরকারের লেজুড় বৃত্তির কারণে ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের এই শিক্ষক বিভিন্ন টকশোতে ২০১৮ ও ২০২৪ সালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে এর সরাসরি বিরোধিতা করেন। কোটা বিরোধী আন্দোলনে কোট বহালের যৌক্তিগতা তুলে ধরে তিনি পত্রিকায় একাধিক কলাম লিখেছিলেন।
এছাড়াও টকশো’তে নিয়মিতভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে দালালী করতেন। এক কলামে তাঁর একটি লাইন ছিলো এরকম, “যারা কোটা বিরোধীতা করছে এখন, বাতিল হলে ২০ বছর পরে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তের দিকে ফিরে তাকালে তাঁরা ভীষন লজ্জা পাবে’। প্রশ্ন হচ্ছে, “নাজমুল হক এবং রওনক কি এখনও লজ্জা পান!?” মহাপরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে নিয়োগ পেয়ে নাজমুল হক ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন দূতাবাসে স্বৈরাচারের দোসরদের রক্ষা করা এবং পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন। নাজমুলের সাথে সাবেক মন্ত্রী মোমেন ও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।অবিলম্বে চক্রান্তকারী নাজমুলকে তার বর্তমান পদ হতে অপসারণ করা জরুরী। অন্যথায় বড় ধরনের নাশকতার সৃষ্টি হতে পারে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তাই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন।
৭। শোয়েব তরফদার
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপনীয় ও স্পর্শকাতর এসএস এ শাখার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা শোয়েবুল ইসলাম তরফদার। গোপনীয় ও স্পর্শকাতর এসএস এ শাখায় সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর ব্যক্তিগত নথি ও অন্যান্য স্পর্শকাতর রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয় এবং এ শাখা নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগের বিষয়টি দেখভাল করে। স্বৈরাচারের সহযোগী সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও আওয়ামী দালাল ও সুবিধা ভোগী কর্মকর্তা কানাডায় নিযুক্ত সাবেক হাইকমিশনার খলিলের অত্যন্ত স্নেহভাজন ও ঘনিষ্ঠ শোয়েব বর্তমান পররাষ্ট্র সচিব জসীমউদ্দীনের সাথে সরাসরি কাজ করছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিয়োগে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে শোয়েবের প্রভাব থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। শোয়েবকে অবিলম্বে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এসএসএ শাখা থেকে অপসারণ করা উচিত।
বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তারা বর্তমান পররাষ্ট্রসচিবের এসব গুরুতর বিষয়ে পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হচ্ছেন। স্বৈরাচারের সহযোগীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়া হলে যে কোন সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয়ে কর্মবিরতি সহ প্রতিবাদ কর্মসূচীর ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।