ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও পুরনো সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণেই চলছে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), সংক্ষেপে যাকে বলা হয় পঙ্গু হাসপাতাল। রাজধানী ঢাকার এই প্রতিষ্ঠানটিতে এখনও প্রভাব ধরে রেখেছেন আওয়ামী লীগের দোসররা। যে কারণে শেখ হাসিনা সরকার পতনের প্রায় তিন মাস হতে চললেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বিপাকে পড়তে হয়েছে এক চিকিৎসককে।
ডা. ইউসুফ হারুন নামে ওই ভুক্তভোগীর অভিযোগ, খুনি হাসিনার সহযোগীরা তার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের অব্যাহতভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো ফল না পেয়ে এবার সংশ্লিষ্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি।
জানা গেছে, শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার বাসিন্দা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ডা. কাজী শামিমকে বছরখানেক আগে পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক নিয়োগ করা হয়। নিয়োগের পর তার নিজস্ব সিন্ডিকেট দিয়ে পুরো হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ নেয় সে। আর্থিক নানা অনিয়মসহ পঙ্গু হাসপাতালের তিনটি বিভাগ তিনি একাই পরিচালন করছেন।
জুলাই বিপ্লবের মাঝামাঝি রাজধানীতে পুলিশ-ছাত্রলীগের হামলায় হতাহতের সংখ্যা বাড়লে অন্যান্য হাসপাতালের চেয়ে পঙ্গু হাসপাতালে রোগীদের ভিড় বাড়ে। এসময় পরিচালক ডা. কাজী শামিমের নির্দেশে ছাত্রদের চিকিৎসা সেবায় অবহেলা প্রদর্শন করা হয়।
সেখানকার বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও রোগী জানান, ১৬ জুলাইয়ের দিকে আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগী আসতে থাকে। তাদের মধ্যে অনেকেই সময়মতো চিকিৎসা পাননি। এমনকি রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে প্রাথমিক চিকিৎসা পেতেও অনেককে বেগ পেতে হয়। তবে ৫ আগস্টের পর পুরোদমে চিকিৎসা পাচ্ছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোগী জানান। পায়ে গুলি নিয়ে ওই ছাত্র এখনো পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এদিকে জুলাই বিপ্লবের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নানা বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করেও ডা. ইউসুফ হারুন নামের একজন সিনিয়র কনসালটেন্ট রোগীদের সেবা দেন। তার দিক থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় আহত রোগীদের সেবা অব্যাহত রাখায় হাসপাতালটির পরিচালকও তার সিন্ডিকেট তাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও দ্য মিরর এশিয়ার হাতে এসেছে।
ভিডিওতে পরিচালকের পিএ মো. জয়নুদ্দিন নিজেকে কিলিংয়ের সঙ্গে জড়িত দাবি করে কাউকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতে দেখা গেছে।
বিষয়টি ইতমধ্যে হাসপাতালের পরিচালক ডা. কাজী শমিমের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে গত ২৩ অক্টোবর শেরেবাংলানগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ডা. ইউসুফ হারুন।
ওই ডায়েরিতে ডা. শামসুল আলম. মো. জয়নুদ্দিন, ডা. খাইরুল ইসলাম ও পরিচালক ডা. কাজী শামিমের বিরুদ্ধে তাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও তার স্ত্রীকে ফোন করে প্রাণ নাশের হুমকির অভিযোগ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালকের পিএ অভিযুক্ত মো. জয়নুদ্দিন বলেন, তিনি ৩২ বছর ধরে পঙ্গু হাসপাতালে চাকরি করছেন তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
ভিডিওর বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কাউকে হত্যার হুমকি দিইনি। বরং আমি কবিতা আবৃত্তি করেছিলাম। যা ভিডিওর পূর্বের অংশে ছিল। সেটি কেটে ফেলা হয়েছে। কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এছাড়া অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. কাজী শামিমের ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।