বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীবিএনপিরাজনীতি

জামায়াতের সাথে নতুন সম্পর্ক নিয়ে বিএনপিতে দ্বন্দ্ব

স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলাম গতকাল শনিবার সরকার নিয়ন্ত্রিত পাঁচ তারকা হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও-এ জমকালো ইফতার পার্টির আয়োজন করে। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের মালিকানার একটি বড় অংশ সরকারের। বেসামরিক বিমান চলাচল এবং পর্যটন মন্ত্রণালয় এই হোটেলটি নিয়ন্ত্রণ করে। সেরকম হোটেলে একটি অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কীভাবে ইফতার পার্টির আয়োজন করতে পারে—সেটি একটি বিস্ময়কর ব্যাপার বটে। সরকারের ভেতরে যে জামায়াত এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের ভূত এবং প্রেতাত্মারা রয়েছে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও-এ জামায়াতের জমকালো ইফতার তার বড় প্রমাণ।

সেটি অন্য প্রসঙ্গ। তবে দীর্ঘ নয় বছর পর রাজধানীতে জামায়াত বড় পরিসরে যে ইফতার পার্টির আয়োজন করে, সেই পার্টির প্রধান আকর্ষণ ছিল বিএনপির বেশ কিছু সিনিয়র নেতা। এই ইফতার পার্টিতে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান সভাপতিত্ব করেন এবং অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার আমন্ত্রিতদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

দীর্ঘদিন পর আয়োজিত জামায়াতের ইফতারে বিএনপির যে সমস্ত নেতারা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও মির্জা আব্বাস। উপস্থিত ছিলেন এয়ার ভাইস মার্শাল অবসরপ্রাপ্ত আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নাল আবেদীন, আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম, আতাউর রহমান ঢালী, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মুজিবুর রহমান সরওয়ার, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, জহিরউদ্দিন স্বপন, অপর্ণা রায়, রুহুল কুদ্দুস কাজল সহ আরও কয়েকজন।

মজার ব্যাপার হল যে, জামায়াতের ইফতারে বিএনপির সাম্প্রতিক সময়ে প্রভাবশালী তিন নেতা কেউই উপস্থিত ছিলেন না। এই তিন নেতার মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী নেতা ড. মঈন খান এবং আমির খসরু মাহমুদ উপস্থিত থাকেননি। এছাড়াও বিএনপির আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ওই ইফতার পার্টিতে আমন্ত্রিত হননি। আর আমন্ত্রিত হওয়ার পরও ইফতার পার্টিতে যোগ দেননি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোঃ নজরুল ইসলাম খান। আর এই সমস্ত মিলিয়ে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের মতবিরোধ এবং দ্বন্দ্ব নতুন করে তীব্র আকার শুরু করেছে।

২০১৮ নির্বাচনের পর থেকেই জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক গুটিয়ে ফেলার নীতি অনুসরণ করতে থাকে বিএনপি। এই সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০ দলীয় জোটকে অকার্যকর করে ফেলেন। জামায়াতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় যে, ২০ দল এখন আর নেই। দুই দলের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কথাও শোনা যায়। এসময় বিএনপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে এবং মূলত তাদের পরামর্শেই জামায়াতের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক বিরহে রূপ নেয়। জামায়াতকে এড়িয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করে বিএনপি। আর এ কারণেই জামায়াত এবং বিএনপির মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে।

বিএনপি নতুন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও ঐক্য করতে চায়। কিন্তু ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপির মধ্যে আবার একটি গোষ্ঠী জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং তারাই পরিকল্পিতভাবে ভারত বিরোধী স্লোগান এবং ভারতের সমালোচনা মুখর হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে রুহুল কবির রিজভী সহ বেশ কিছু নেতা ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই কর্মকাণ্ডের মধ্যেই জামায়াত এবং বিএনপির মধ্যে আবার নতুন করে প্রেম শুরুর আভাস পাওয়া যায়। যেহেতু বিএনপি এখন পশ্চিমাদের বিশ্বাস করছে না, আর বিএনপি এখন ভারত বিরোধী রাজনীতিতে আবার নিজেদেরকে যুক্ত করেছে সে কারণে এখন জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা শুরু করে হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ বেশ কিছু নেতা মনে করছেন এই সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। এর ফলে বিএনপি আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। এ কারণেই তারা ইফতার পার্টিতে যোগ দেননি। তবে এ নিয়ে বিএনপিতে দ্বন্দ্ব এবং সংঘাত নতুন করে দাঁনা বেধে উঠেছে। এই দ্বন্দ্ব এবং সংঘাত বিএনপিকে জামায়াতের দিকে ঝুকে দিবে নাকি জামায়াত থেকে চূড়ান্ত ভাবে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করবে সেটােই দেখার বিষয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button