পূর্বা মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
কবি পরিচিত:
জন্ম মে ১৯৭৩, উত্তর কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। বেড়ে ওঠা উত্তর কলকাতা সংলগ্ন বিভিন্ন শহরতলিতে। প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। পেশা শিক্ষকতা। এ যাবৎ প্রকাশিত কবিতার বই তেরোটি। গদ্যগ্রন্থ দু’টি। কবিতা লেখার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০২১ সালে ভাস্কর চক্রবর্তী স্মৃতিপুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।
পূর্বা মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
রতি
তীব্র সে। ফালা ফালা করে চেরে। গন্ধ শোঁকে রক্তের, মাংসের…
মশলার বন ভেঙে বিধুর হাওয়ায় ভাসে তার গূঢ়,গাঢ় অভিপ্রায়।
অশ্রুর লবণে আমি জারিয়ে মেখেছি ওর খিদে,যাতে
বারবার দাঁড়ায় এসে, বারবার আহ্বান জানায়…
আমি মৃত। সে কি মৃত নয়?
সাদা চাদরের তলে খিদের নিচুতে শুয়ে খিদে বলে:
‘হে বন্য হরিণী,
মাংসের পচন আমি কোনোদিন আকাঙ্ক্ষা করিনি…’
রাগ
আগুন কেন দিল ও আমায়…
কত যে পুড়ে যাওয়া কাহিনি !
লুকিয়ে জ্বলে গেছে শরবন,
শশক লাফ দিয়ে চাঁদে যায়…
আগুনে পোড়া গায়ে সে শশক
লুকিয়ে ঢেলে দিল জ্যোৎস্না
সকল মৃত ছাল ঝরে যায়…
আবার বনতলে বর্ষণ
আমি সে জলে ভিজে জ্বরে যাই
আমি সে জ্বরে পুড়ে অঙ্গার
আগুন চিরকাল চেটে খায়
কাহিনি, রৌদ্রের… বেদনার…
ব্রীড়া
আঙুলে বিদ্যুৎ ছিল। কটিদেশ থরথর করে কাঁপত হিমায়িত রাতে।
আকাশে ছিল না তারা। আঁখিতারা ডুবে যেত হিমের লালাতে।
সমুদ্র উদ্যতফণা মেলে দিয়ে চিকুরের ঘ্রাণ নিতে নিতে
সহসা বাক্যের পথ ভরে দিত মধুর ছোবলে…
আমি কেন সে পুরুষ মহাদেশকে অন্ধ ভৈরবীর মতো মন্থন করেও
জুড়োতে পারিনি? আহ্ ব্রীড়া,কেন চক্রপথে অন্তরায় হলে?
মোহ
অন্যরূপে এসেছিল। তন্নতন্ন করে
খুঁজতে এসেছিল কী কী নিয়েছে সময়,
কী হারালো। কিসে ওর বিকল্প পন্থায়
পরিতৃপ্তি হয়, কিন্তু ঝরে না বেদনা।
বেদনা সাজানো ওর সান্ধ্য কাঁচঘরে
বিচ্ছুরণ হয়, বর্ণবিচ্ছুরণ হয়…
আলোর কাহিনিগুলি বিকল্পবিহীন।
প্রিয় বাতিদান। ওকে তঞ্চক বলবো না।
আবেশ
থাকে না। কেটে যায় অচিরে
পৌর্ণমাসী রাতে কালোমেঘ
পৌষে ধান জ্বলে শিশিরে
মধ্যরাতে, কেউ দর্শক
থাকে না।
ডাকে না, বলে না সে দৃশ্য
দৃশ্য জুড়ে অদৃশ্য
আমার একাকিনী বিশ্বের
যা কিছু বিশ্বাসে থেকে যাও…
থাকে না। তাই কেউ থাকে না।