কবি পরিচিতি
শিশির আজমের জন্ম ২৭ অক্টোবর, ১৯৭৮। জন্মস্থান, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা: এলাংগী, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ, বাংলাদেশ।
mail: shishir01978@gmail.com
কাব্যগ্রন্থসমূহ:
ছাই (২০০৫)
দেয়ালে লেখা কবিতা (২০০৮)
রাস্তার জোনাকি (২০১৩)
ইবলিস (২০১৭)
চুপ (২০১৭)
মারাঠা মুনমুন আগরবাতি (২০১৮)
মাতাহারি (২০২০)
টি পোয়েট্রি (২০২০)
সরকারি কবিতা (২০২১)
হংকঙের মেয়েরা (২০২২)
আগুন (২০২৪)
বিষ (২০২৪)
সম্পাদিত ছোটকাগজ: শিকড় (৫টি সংখ্যা প্রকাশিত)। সম্পাদিত কবিতার ভাঁজকাগজ: বাংলা (৩টি সংখ্যা প্রকাশিত)। বাংলা কবিতায় Tea Poetry Movement-এর উশকানিদাতা।
শিশির আজমের কবিতা
জানো তো জিওর্দানো ব্রুনোকে কেন পুড়িয়ে মারা হয়েছিল
‘পৃথিবী সমতল আর সূর্যকে কেন্দ্র করেই সেটা ঘুরছে’
মহামান্য চার্চের এই বক্তব্য
তুমি স্বীকার করে নিলেই পারতে ব্রুনো
ব্রুনো
জিওর্দানো ব্রুনো
আমার বন্ধু
হ্যা আসল সত্যটা তো তুমি জানোই
আর সত্যটা তোমার কাছ থেকে পেয়ে গেছি আমরাও
সমস্যাটা কোথায় জানো
ভাটিকান আর রোম দুজনই ভয় পেয়েছে
পৃথিবী ঘুরবে না সূর্য ঘুরবে
আসলে এতে তেমন কিছু যায় আসে না ওদের
বাইবেলের পবিত্রতা নিয়েও ওদের সত্যিকার দুশ্চিন্তা নেই
তাহলে ভয়টা কীসের
হ্যা
চার্চে পয়সা দেওয়া বন্ধ কর
টের পাবে
এই যে এখন তোমাকে লোহার শেকলে বেঁধে রাখা হয়েছে
টাইবার নদীর ধারে
বিশাল রোম শহরের প্রাণকেন্দ্রে ক্যাম্পো ডি পিওরিতে
মহামান্য পোপ আর সম্মানিত অভিজাতবর্গ তোমার অপরাধের বিচারে বসেছেন
একজন নাস্তিক জ্যোতির্বিদের বিচার
ওনাদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে চার্চ আর সিনেটের প্রতি
তোমার যথেষ্ট শ্রদ্ধাবোধ নেই
প্রচলিত সামাজিক রীতি নৈতিকতা মূল্যবোধকে যুবসমাজের কাছে
তুমি সংশয়াকীর্ণ করে তুলছো
আর এর বিপর্জয়কর প্রভাব সাধারণ মানুষের ভেতর পড়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে
তুমি জানো তোমাকে নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে
বিনা রক্তপাতে
মানে তাড়াহুড়া না করে আস্তে-ধীরে পুড়িয়ে মারা হবে তোমাকে
শেকলে বাঁধা অবস্থায়
আর এটা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করবে রোমের জনগণ
বিপদের আশঙ্কা থেকে মুক্তির উল্লাস
যা হোক তোমাকে পোড়ানোর সময়
তোমার জ্বলন্ত দেহ থেকে যে আগুন স্ফূরিত হবে
ছড়িয়ে পড়বে সমস্ত রোমে
আর সারা পৃথিবীতে
সেই আগুনের সম্ভাব্য বিপদের কথা কি ওরা ভেবে রেখেছে
আর একটা কথা
তোমার দেহটা ওরা পুড়িয়ে ফেলবে
কিন্তু তোমাকে রাখবে কোথায়
তোমার সংশয়কে
তোমার অবিশ্বাসকে
এই আশঙ্কা আর অনিশ্চয়তা তো মারাত্মক
আর সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর ঘোরাটাই বা বন্ধ করবে কে
লেনিন
এইটা কি মারাত্মক একটা ব্যাপার না যে লেনিনরে নিয়া আজ অব্দি
কোন কবিতা আমি লিখি নাই
অথচ কতজনরে নিয়াই তো লিখছি
কতকিছুরে নিয়া
হ্যা এমন আকাঙ্ক্ষা তো প্রতি মুহূর্তেই আমারে উশকাইতেছে
প্রতি মুহূর্তে আমার স্পর্শময়তায় তীক্ষ্ণ আঁচড় কাটতেছে
যে কখন আমি লিখবো কবিতা
লেনিনরে নিয়া
লেনিনের সিম্ফোনিক বস্তুপ্রকৃতি আর অরগ্যানিক ইন্টারকোর্স
আর আত্মনির্ভরতা নিয়া
কিন্তু পারতেছি না
কেন পারতেছি না
না কি লেনিন চান নাই ওনারে নিয়া আমি কবিতা লিখি
কেন
কবিতা কী লিখবো আমি
কতটা উৎকৃষ্ট হবে সেই কবিতা
হ্যা যেন আমরা ভুইলা না যাই সেই কবিতাই উৎকৃষ্ট
যা লেখে জনগণ
কোন জাপানি কি বলতে পারেন সম্রাট হিরোহিতো কবে মারা যাবেন
আজ সন্ধ্যায় আমি টোকিওতে এসেছি
হ্যা
টোকিওতে আমি এই প্রথম
অবশ্য অনেক আগে থেকেই টোকিও আমার চেনা
এখানকার রাস্তাঘাটে তো ধূমকেতু উড়ে বেড়ায়
আর এই ধূমকেতুগুলো গ্রাহ্য করে কেবল মেয়েদেরকে
এখন আমার কাজ হবে ধূমকেতুগুলোর আদি নিবাস কোথায়
আর কলকাতার জনবহুল ফুটপাতে
হাংরিদের পোড়া সিগারেট কুড়িয়ে খাওয়াটা
ওরা দেখেছে কি-না এটা খুঁজে বের করা
হ্যা মেয়েরা প্রথমে ধূমকেতুর পেছনে ঘুরঘুর করে
তারপর ধূমকেতুগুলোকে ধরে ফেলে
তারপর ওদেরকে নিয়ে কী করে এটা জানা দরকার
যেহেতু মহামান্য সম্রাট হিরোহিতোকে এখন এইসব প্রশ্ন করবার
উপায় নেই
আর উনি তো এখন বিশাল ক্লাসিক ডাচ ল্যান্ডস্কেপের ভেতর
নিজেকে নিয়ে চিন্তিত
ঐ উঁচু মিনারে ঈশ্বর করেন কী
শহরের সবচে অভিজাত মসজিদের সামনে এখন আমি দাঁড়িয়ে আছি
তাকিয়ে আছি ওর উঁচু মিনারটার দিকে
কেবল মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরাই নিয়মিত মসজিদে ঢোকে
এটাই নিয়ম
অন্যরা দূর থেকে দেখে
যা হোক ঈশ্বরের খোঁজ কখনো তো আমি করিনি
তবু ঐ মিনারটার দিকে তাকালে
কেন মনে হয় ঈশ্বর ওখানে আছেন
ঐ মিনার বুঝি তোমার, ঈশ্বরকে জিগ্যেস করি, অতো উঁচুতে
তোমার কাজ কী
আমাদের সঙ্গেই তো তুমি থাকতে পারো
মাটিতে
যেখানে কেবল মুসলিমরাই থাকে না
থাকে শোষিত নির্যাতিত প্রতারিতরা
যাদের ওপর আবার হাজারটা ঈশ্বরের কুনজর রয়েছে
আর ঐ ঈশ্বরগুলো
ওরা তো তোমার নামেই রীতিসিদ্ধভাবে কুকর্মগুলো করে যাচ্ছে
i-pill Tablet
দোকানে গিয়ে প্রথমে এক প্যাক i-pill Tablet কিনলাম
কামলি কিনতে বলেছিল
কামলি
আমার নতুন গার্লফ্রেন্ড
ফুলের দোকানে গিয়ে পেয়ে গেলাম এক থোকা ক্যামেলিয়া ফুল
ক্যামেলিয়া আমার প্রিয় ফুল
দ্বিতীয়বার না ভেবে কিনে ফেললাম
হ্যা চড়া দামে
তারপর মেট্রোয় উঠলাম
মেট্রো থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছি
প্রথমে কোনটা ওর হাতে দেবো
i-pill না ক্যামেলিয়া
ক্যামেলিয়া না i-pill
হাঁটছি
হাঁটতে হাঁটতে কখন কামলির মুখটাই হারিয়ে গেল