বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সম্প্রতি যে- ভারতীয় পণ্য বর্জন কর্মসূচি পালন করছেন, ভারতীয় পণ্য আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ফটোসেশনে অংশ নিচ্ছেন সেটি বিএনপির সিদ্ধান্ত কিনা এই প্রশ্ন উঠেছে। গতকাল অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য এই প্রশ্ন তুলেছেন। অন্য একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেছেন যে, এই সিদ্ধান্ত বিএনপির নয়, এটি রিজভীর একান্ত সিদ্ধান্ত।
এছাড়াও লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বলেছেন, রিজভী তার বক্তব্যে বলেছেন এটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু দলের একজন নেতা ব্যক্তিগতভাবে এই ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন কি না সেই প্রশ্ন বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উঠেছে। এই বৈঠকে একজন নেতা প্রশ্ন করেছেন যে রুহুল কবির রিজভীর নেতা আসলে কে তারেক জিয়া না, পিনাকী ভট্টাচার্য?
উল্লেখ্য যে, মালদ্বীপের মুইজ্জুর ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচির আদলে প্যারিসে অবস্থানরত পিনাকী ভট্টাচার্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পিনাকী ভট্টাচার্য এর আগে গোয়েবলসীয় কায়দায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হচ্ছে এবং খুব শীঘ্রই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটছে এরকম আজগুবি মিথ্যাচার করেছিলেন। নির্বাচনের পর সব কুল হারিয়ে তিনি ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেন। আর সেই ডাকে সাড়া দিয়েই এখন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভারতীয় শাল নিজের গা থেকে সরিয়ে আগুন দিয়েছেন গত ২০ মার্চ। এছাড়াও তিনি ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনকে সমর্থনও জানাচ্ছেন।
রুহুল কবির রিজভীর এই ভূমিকার ফলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকে মনে করছেন, যেহেতু রুহুল কবির বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, কাজেই বিএনপির সিদ্ধান্তের আলোকেই তিনি হয়ত এই কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালনা করছেন। কিন্তু বিএনপির গতকালের বৈঠকে এ নিয়ে রহস্যময় ভূমিকা দেখা যায় নেতাদের মধ্যে। একদিকে যেমন তারা বলছেন যে এটি তাদের দলগত সিদ্ধান্ত নয়, অন্যদিকে তারা রুহুল কবির রিজভীর ব্যক্তিগত এই কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করছেন না। একজন দলের পদে থাকা ব্যক্তি দলের পরিচয় বহন করে ব্যক্তিগত অভিমত এভাবে ব্যক্ত করতে পারেন কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ বিএনপিতে।
অনেকেই মনে করছেন যে, এটি বিএনপির একটি কৌশল। রিজভীকে মাঠে নামিয়ে বিএনপি আসলে বাজার দেখতে চাইছে যে, ভারত বিরোধী রাজনীতির হালে পানি পায় কি না বা এরকম বিষয়কে নিয়ে যদি মাঠে নামে তাহলে জনগণের কতটুকু সমর্থন পাওয়া যায়। আর এ কারণেই তারা গিনিপিগ হিসেবে রিজভীকে ব্যবহার করছেন বলে অনেকে মনে করেন।
যদি দেখা যায় যে, ভারতীয় পণ্য বর্জনের কর্মসূচির ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ রয়েছে, মানুষ উৎসাহিত হচ্ছে তাহলে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচিতে নিজেদের নাম জড়াবে। আর যদি দেখা যায় যে পিনাকীর নির্দেশে রিজভীর এই কর্মসূচিতে জনগণের তেমন কোন সাই নেই, জনগণ উৎসাহিত হচ্ছে না তাহলে বিএনপি এই অবস্থান থেকে সরে আসবে। তবে রিজভীর মতো কোন নেতা যখন দলে কর্মসূচির বাইরে গিয়ে একক কর্মসূচি পালন করে তখন প্রশ্ন উঠে যে- রিজভীর নেতা আসলে কে, তারেক না পিনাকী?