অন্যান্য দলরাজনীতি

ভারতীয় পণ্য বর্জনের আড়ালে অন্য এক রাজনীতির খেলা

ভারত বিরোধিতার আড়ালে নতুন করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি দানা বেঁধে উঠছে বাংলাদেশে। ভারতীয় পণ্য বর্জনের নামে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক গোষ্ঠী আবার নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। আর এই ঐক্যবদ্ধ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত ইস্যুতে নতুন করে একটি মেরুকরণের চেষ্টা চলছে। আর এই চেষ্টায় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো এক কাতারে নতুন করে মিলিত হচ্ছে। শুধু মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি নয়, এর সঙ্গে উগ্র বাম এবং উগ্র দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো একাট্টা হচ্ছে বলে রাজনীতির মাঠে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কিছু গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়। এই ডাক দেওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল যে, তারা মনে করছে ভারতের কারণে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় থেকেছে। ভারতের পৃষ্ঠষ্পোষকতায় এই সরকারকে কেউ কিছু করতে পারছে না। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারছেন না। এ কারণে তারা সহজ সূত্র দেয় যে, ভারত বিরোধিতা করতে হবে।

ভারত বিরোধিতার নামে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়। এই ধারণাটি এসেছে মূলত মালদ্বীপের রাজনীতি থেকে। মালদ্বীপে মুইজ্জুপন্থীরা ‘ইন্ডিয়া আউট’ একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। যে কর্মসূচির মূল কথা ছিল যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন করা এবং ভারতীয় সেনা বাহিনী যেন মালদ্বীপ থেকে চলে যায় সেজন্য আন্দোলনকে জোরদার করা। এই দাবি নিয়ে তারা নির্বাচন করে এবং নির্বাচনে ভারতপন্থীদেরকে পরাজিত করে মুইজ্জু বিজয়ী হন। তার এই বিজয়ের পরপরই ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি মালদ্বীপে আরও জনপ্রিয়তা পায়।

মালদ্বীপে নানা কারণেই ভারত বিরোধিতা এবং ভারত বিদ্বেষ দানা বেঁধে উঠেছিল। আর বাংলাদেশের উগ্র গোষ্ঠী সেরকম একটি মডেল বাংলাদেশে স্থাপন করার জন্য চেষ্টা করে। আর সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে তারা প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা করে। এরপর তারা বিএনপিকে নেয়। এখন অন্যান্য ধর্মান্ধ উগ্র রাজনৈতিক দলগুলোকেও এই কাতারে মিলিত করতে চাচ্ছে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় উগ্র চৈনিকপন্থীরা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। সেই চৈনিকপন্থীদের উত্তরসূরি রাজনৈতিক দলগুলো যেমন ওয়ার্কার্স পার্টির একাংশের সাইফুল হক, গণসংহতি জোনায়েদ সাকি ইত্যাদি অতি বামরা এখন ভারতবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদেরকে যুক্ত করেছেন। আবার জামায়াত ইসলামীর মতো দক্ষিণপন্থী স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিগুলো নতুন করে বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতার জিকির শুরু করেছে। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার একটি নতুন বিষবাষ্প তৈরি হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন বা ভারত বিরোধিতা আসলে একটি সাম্প্রদায়িকতার ধারাকে উস্কে দিচ্ছে। এই ধারায় আস্তে আস্তে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন, সংখ্যালঘুদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করা হবে। এটি পরবর্তী ধাপে দৃশ্যমান হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পঁচাত্তর পরবর্তী যে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানো হয়েছিল, এবং সংখ্যালঘু নিপীড়ন, উগ্র জাতীয়তাবাদ, মৌলবাদের আষ্ফালনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হরণ করা হয়েছিল ঠিক তেমনিভাবে ভারত বিরোধিতার নামে নতুন করে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে। এখন এই সাম্প্রদায়িকতার যে অভিশাপ তা থেকে রাজনীতিকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

একটি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button