জানা অজানা

ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে কতদূর এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ?

হাজার বছরের সংগ্রামমুখর বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। দীর্ঘ পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালের এই দিনে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীন বাংলাদেশ এবার ৫৪ বছরে পা দিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

এরপর ৩০ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়, নাম তার বাংলাদেশ। সেই থেকে সুন্দর আগামীর স্বপ্নে পৃথিবীর বুকে নতুন করে পথচলা শুরু।

সময়ের পরিক্রমায় সেই বাংলাদেশ আজ স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে লড়াই করে শৃঙ্খলমুক্ত হওয়ার দিনটি বাঙালি জাতির জন্য ইতিহাসের এক বড় অর্জন। ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর বিশ্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পরিচয় ছিল তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪৬তম বড় অর্থনীতির দেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। সেখানে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার। স্বাধীনতা অর্জনের সময়ে দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৯৪ ডলার। আজ দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২৮০০ ডলার ছাড়িয়েছে। ২০১৮ সালে ‘স্বল্পোন্নত’ দেশের তালিকা থেকে ‘উন্নয়নশীল’ দেশের তালিকায় উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। কেবল অর্থনীতি নয়; সময়ের সাথে সাথে প্রায় প্রতিটি খাতেই অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে বাংলাদেশ।

শুধু তাই নয়, যে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দেশ বাংলাদেশকে শৃঙ্খলার বন্ধনে বেঁধে রাখতে চেয়েছিল সেই পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫৪ বছরের মধ্যেই মাথাপিছু জিডিপিতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় শক্তির দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। দুই দশক ধরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনেক ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এই তালিকায় আছে গড় আয়ু, সাক্ষরতার হার, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরে মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে টানা চার বছর ধরে ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। আর এ ক্ষেত্রে টানা আট বছর ধরে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) এখন ২৮০০ ডলার। অন্যদিকে ভারতের ২ হাজার ৬১২ ডলার এবং পাকিস্তানের ১ হাজার ৪৭১ ডলার।

৪ বছর ধরে ভারতের ওপরে বাংলাদেশ: মাথাপিছু জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ক্ষেত্রে টানা চার বছর ধরে ভারতের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। আইএমএফের সর্বশেষ হিসাবে, ২০২৩ সালে এসে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়িয়েছে ২৮০০ ডলার। আর ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ২ হাজার ৬১২ ডলার।

আবার গত ১৫ বছরে ভারতের জনসংখ্যা বেড়েছে ২১ শতাংশ, আর বাংলাদেশের বেড়েছে ১৮ শতাংশ। এসবের প্রভাব পড়েছে মাথাপিছু আয়ে। ২০০৭ সালেও বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ভারতের অর্ধেক। আর ২০০৪ সালে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ছিল বাংলাদেশের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি।

৮ বছর আগেই পাকিস্তান পেছনে: ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে মাথাপিছু জিডিপিতে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ। ওই বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৫৯ ডলার। পাকিস্তানের ছিল ১ হাজার ৪৬৮ ডলার। এরপর আর কোনো বছর পাকিস্তান বাংলাদেশকে ছাড়াতে পারেনি। মাথাপিছু জিডিপি ওঠানামার মধ্যে ছিল দেশটির। সর্বশেষ ২০২৩ সালে এসে পাকিস্তানের মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৭১ ডলার।

ক্রয়ক্ষমতায় পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে: একটি দেশের মানুষ কতটা সম্পদশালী, তা বোঝার জন্য তাদের ক্রয়ক্ষমতা কেমন, সেটিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। নিজের আয় দিয়ে একজন মানুষ প্রয়োজনীয় কী কী জিনিস কিনতে পারেন, তা দেখা হয়। বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিকে তুলনা করতে ক্রয়ক্ষমতার সমতা বা পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটির (পিপিপি) ভিত্তিতে জিডিপি এবং মাথাপিছু জিডিপি নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসাবে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

২০২৩ সালের আইএমএফের হিসাবে, পিপিপি অনুসারে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৮ হাজার ৬৭০ ডলার। ভারত ও পাকিস্তানের যথাক্রমে ৯ হাজার ১৮০ ডলার ও ৬ হাজার ৭৭০ ডলার।

নারীর ক্ষমতায়নে এগিয়ে বাংলাদেশ: শ্রমশক্তিতে কত শতাংশ নারী আছেন, এটি দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণের প্রবণতা বোঝায়। এদিক দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রতি তিনজনে একজন নারী কাজের মধ্যে আছেন। অন্যদিকে ভারত ও পাকিস্তানে প্রতি পাঁচজনে একজন কর্মক্ষম নারী।

দেশের কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে ৩৫ শতাংশই এখন নারী। বর্তমানে শ্রমশক্তিতে আড়াই কোটির বেশি নারী আছেন। ভারত ও পাকিস্তানে শ্রমশক্তিতে যথাক্রমে ২৩ শতাংশ ও ২০ শতাংশ নারী।

অন্যান্য সূচকেও এগিয়েছে বাংলাদেশ: শুধু অর্থনীতি নয়, সামাজিক সূচকেও বাংলাদেশ ভালো করছে। ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষ বেশি দিন বাঁচেন। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুষ্কাল ৭২ দশমিক ৪ বছর। মানুষের গড় আয়ু ভারতে ৭২ বছর। আর পাকিস্তানে এই গড় আয়ু প্রায় ৬৯ বছর।

অন্যদিকে মৌলিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতে এখন সাক্ষরতার ৭৭ শতাংশ। অন্যদিকে পাকিস্তানে এই হার ৫৯ শতাংশ। এ ছাড়া মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, প্রজনন হার—এসব খাতেও বাংলাদেশ ভালো করছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button