ভারতীয় পণ্য বর্জন করে বিএনপি হবে ধন্য
ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান সাড়া ফেলেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই প্রচারে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতার সংহতি জানানোর পর এ নিয়ে জোর আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। ভারতের বিপক্ষে এমন প্রকাশ্য অবস্থান বিএনপির জন্য ভালো না মন্দ হবে—সে নিয়েও আছে আলোচনা।
তবে বিষয়টি নিয়ে বিএনপি এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অবস্থান নিতে চাইছে না বলে মনে হচ্ছে। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, তা বোঝার অপেক্ষায় থাকতে চান তাঁরা।
ভারতীয় পণ্য বর্জনে সংহতি জানাতে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও বিষয়টিকে ‘ন্যায্য’ বলে মানছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। গতকাল রোববার তিনি বলেন, ‘জনগণ একটি দেশের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছে, এটা খুবই সত্য।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই দেশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। মানুষের এই ক্ষোভ খুবই স্বাভাবিক এবং ন্যায্য। এটা সত্য, আমরা দলীয়ভাবে এটা নিয়ে সেভাবে কথা বলছি না, কোনো সিদ্ধান্তও দেইনি। তবে এটা ন্যায্য।’
২০ মার্চ রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নিজের কাশ্মীরি শাল ছুড়ে ফেলে দিয়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারের সঙ্গে সংহতি জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সেদিন তিনি দলের পক্ষ থেকে সংহতি জানানোর কথা বলেছিলেন। পরে এ কাজকে তিনি ‘ব্যক্তিগত’ বলে দাবি করেন।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রিজভী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিতে পারেন। কিন্তু সব মহলে, জনগণের মাঝে এটি আজ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সুতরাং ভারতীয় পণ্য বর্জনে আমরা যে সংহতি জানিয়েছি, তা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে।’
বিএনপির মিত্র ১২ দলীয় জোটও ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারে সংহতি জানিয়েছে। কিন্তু খোদ বিএনপির মধ্যেই বিষয়টা নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি আছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেছেন, এ ধরনের প্রচারে সমর্থন বা সংহতি জানিয়ে ভারতকে চাপে ফেলার সুযোগ নেই। রিজভী আলোচনায় থাকার জন্য অতি উৎসাহী হয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এমন ধারণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিএনপির কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, এটা বিএনপির কোনো কর্মসূচি নয়। একটা সামাজিক আন্দোলন চলছে, যার সঙ্গে সংহতি জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জনগণের মনোভাবকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘যারা এই কর্মসূচি পালন করছে, তারাই আমাদের বলেছে একাত্মতা জানাতে। এর সঙ্গে আমরা সংহতি প্রকাশ করেছি। এ নিয়ে দলে কোনো মতপার্থক্য আছে বলে আমার জানা নেই।’
তবে ভারতীয় পণ্য বর্জন প্রচারে বিএনপি নেতা রিজভীর সংহতি জানানোর ঘটনাকে ‘কাঁচা’ কাজ বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এ ঘটনায় ক্ষমতাসীনদেরই লাভ হবে। তারা এখন আরও ভালোভাবে ভারতের সামনে বিএনপিকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের সুযোগ পাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘মনে হয় না, জেনেশুনে এমন কাজ করা হয়েছে। এত কাঁচা কাজ বিএনপির মতো দল করতে পারে! বোঝা গেল তাদের নেতৃত্বেরও দুর্বলতা আছে।’
কাজটি বিএনপির জন্য ভালো নাকি মন্দ হলো—এমন জিজ্ঞাসায় সরাসরি কিছু না বলে এ ব্যাপারে জনগণের মনোভাবকে সামনে এনেছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, ‘ভারতের কাছে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। কিন্তু সর্বশেষ নির্বাচনে ভারত যেভাবে একটি দলের পক্ষে ভূমিকা রেখেছে, তা গণতন্ত্রের পক্ষে যায়নি। এর মধ্য দিয়ে তারা খুব সংকীর্ণতার পরিচয় দিয়েছে। তাদের এমন ভূমিকায় দেশের মানুষ খুব ক্ষুব্ধ।’
নিকৃষ্ট ভারত কে হাটাও বাংলাদেশ কে বাঁচাও