সবজি প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত উত্তরের জেলা পাবনার হাটবাজারে হঠাৎ করেই দরপতন হয়েছে প্রায় সব ধরনের সবজির। সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে বেগুন ও লাউয়ের। বেগুন পাইকারি হাটে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। সেই হিসেবে প্রতি কেজি বেগুনের দাম দাঁড়াচ্ছে ২ থেকে ৩ টাকায়। আর সাধের লাউ বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাঁচ টাকায়।
সবজির এমন দরপতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। লাভ তো দূরের কথা। উৎপাদন খরচই উঠছে না কৃষকদের। এই রমজান মাসে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম দামে বেগুন লাউ বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি চাষিদের।
কৃষকরা জানান, এক মাস আগেও পাবনার পূর্বাঞ্চল বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় যে বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে সেই বেগুন কৃষকেরা প্রতি কেজি পাইকারি দুই থেকে তিন টাকা দরে বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অন্যদিকে ৫০-৬০ টাকা দরে প্রতিটি লাউ বিক্রি হয়েছে মাস খানেক আগে। এখন কৃষকেরা এসেই লাউ হাটে নিয়ে চার থেকে পাঁচ টাকার বেশি দাম পাচ্ছেন না। অথচ খুচরা বাজারে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বেগুন। আর প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়। শুধু দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা।
শুধু লাউ বা বেগুনই নয়, করলা, টমেটোসহ বেশির ভাগ সবজিই এখন কৃষকদের হাটে নিয়ে পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেক কৃষকের সবজি খেতেই নষ্ট হচ্ছে। উৎপাদন খরচ না ওঠায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
সাঁথিয়া উপজেলার করমজা গ্রামের বেগুন চাষি বলেন, ‘হাটে বেগুন লিয়ে আইসে দেহি ৮০-৯০ টেকা মণ দাম কয় ব্যাপারীরা। সে হিসেবে তো ২ থেকে ৩ টেকা কেজি পড়ে। মিজাজটা কিরম হয় তালি কন। এত কষ্ট কইরে ফসল ফলাইলেম, আর তার দাম এইরম। কি করবো বাধ্য হয়ে বেইচে দিয়ে গেলেম।’
মূলত রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে কমতে থাকে লাউ ও বেগুনের দাম। কৃষকরা বেগুন হাটে এনে কেজি দরের পরিবর্তে এখন বস্তা (প্রতি বস্তা ৪০ কেজি) হিসেবে বিক্রি করছেন। প্রতি বস্তা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। এতে প্রতি কেজি বেগুনের দাম পড়ছে দুই থেকে তিনি টাকা।
লাউয়ের অবস্থাও অনেকটা একই রকমের। কৃষকরা হাটে লাউ নিয়ে এসে প্রতিটি তিন থেকে চার টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা, পরিবহণ খরচই উঠছে না। এছাড়া ৫ থেকে ৬ টাকা কেজি করলা, ২০ টাকা কেজি টমেটো, ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি পটোল, ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। এই দামে সবজি বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না।
বেড়া বাজারের সবজি ব্যবসায়ী জানান, ‘সবজির চাহিদা একেবারেই পড়ে গেছে। কৃষকেরা হাটে সবজি এনে দাম না পাওয়ায় হা-হুতাশ করছেন। আমরাই বা কি করবো বলেন। এসব সবজি রোযার মধ্যে মানুষ খুচরা বাজারে কিনছে কম। বিক্রি তেমন হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে কম দামে কিনতে হয়।’
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘একদিকে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে সবজির, অন্যদিকে রোজার কারণে মানুষের চাহিদা কম। তার ওপর সব ধরনের সবজি মানুষ একসঙ্গে খেতেও চাচ্ছেন না। এ কারণে সবজির দাম কমেছে। তবে ঈদের পর সবজির দাম আবার বাড়ার সম্ভাবনা আছে।’