সাম্প্রতিক সময়ে মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিনের সাথে সাকিব আল হাসানের ছবি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তুলকালাম চলছে। এই ছবির পর কিংস পার্টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। কাদের কিংস পার্টিতে যাওয়ার কথা ছিল, কারা সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন রকমের আনুকূল্য গ্রহণ করেছিল বা কারা সরকারের কাছে কিংস পার্টিতে যাওয়ার জন্য বায়না ধরেছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত দেনা-পাওনার দফারফা না হওয়ার জন্য আর কিংস পার্টিতে থাকেনি, সে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী চর্চা হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গ ছেড়ে অনেকেই কিংস পার্টিতে যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, এবং তাদের সাথে সরকারের প্রাথমিক আলাপ-আলোচনাও হয়েছিল। বিএনপির ওপর বিরক্ত হয়ে এবং তাদের সঙ্গে বারবার আলোচনা করেও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য জোট গঠন করছে না, এ নিয়ে হতাশার কারণে অনেকে কিংস পার্টিতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। আবার অনেকে কিংস পার্টিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন রকমের সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে চেয়েছিলেন।
তবে রাজনৈতিক বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, কিংস পার্টিতে যোগদানের চেয়েও মূল বিষয় ছিল নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া। সরকার কাউকে কোন রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দেয়নি বা অনুরোধও জানায়নি। সরকার চেয়েছিল যে, বিএনপির সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলন করছে সেই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক এবং সেজন্য সেই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে কিছু প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল।
সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর যোগাযোগও হয়েছিল এবং তারা নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু এক একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা নির্বাচনে যাওয়ার জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করেছিলেন- সেটা সরকারের জন্য ছিল অগ্রহণযোগ্য, এবং সরকার পরবর্তীতে তাদের সাথে আর আলাপ আলোচনা নিয়ে এগোয়নি।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, নির্বাচনের সময় গণঅধিকার পরিষদের নুর নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিল। নুরের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মহলে যোগযোগ হয়েছিল। তবে শেষপর্যন্ত নুরের সাথে দফারফা হয়নি। সরকারও নুরের রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা এবং নির্বাচনে তারা কতটুকু প্রভাব ফেলবে এ নিয়ে সন্দিহান থাকায় শেষপর্যন্ত নুরের ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি।
নির্বাচনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন কর্নেল অলি আহমেদ। এলডিপির এই নেতা নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে প্রথম থেকেই আগ্রহী ছিল এবং আগে থেকে সরকারের সঙ্গে তার একটা গোপন যোগাযোগ ছিল। এমনকি তাকে নির্বাচনে আনার ক্ষেত্রে ভারতেরও একটা ভূমিকা ছিল বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। তবে শেষপর্যন্ত তার সাথেও দর-দামে দফা-রফা হয়নি বলেই কর্নেল অলি আহমেদ নির্বাচন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন এবং নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেন।
আ স ম আব্দুর রব নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ব্যাপক উৎসাহী ছিলেন এবং এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যাদের সাথে সবচেয়ে বেশি সরকারের সাথে বৈঠক হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আ স ম আব্দুর রব। তবে তার সাথেও শেষপর্যন্ত দরদামে না বনার কারণে আ স ম আব্দুর রব নির্বাচনে যাননি।
মাহমুদুর রহমান মান্নার নির্বাচনে যাওয়াটা ছিল প্রায় নিশ্চিত। তিনি একা যেতে চাননি। তিনি একটি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে যেতে চেয়েছিলেন। আরেকটি কিংস পার্টি গঠন করতে চেয়েছিলেন। এ কারণে তার সাথে সরকারে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছিল। এমনকি আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার শর্ত হিসেবে মান্না আকাশচুম্বি টাকা দাবি করছিলেন। যেটি সরকারের পক্ষে দেওয়া অসম্ভব ছিল। আর এ কারণে মান্নার সাথেও নির্বাচনে যাওয়ার প্রকল্প ভেস্তে যায়।
যারা এই ধরনের অর্থের বিনিময়ে নির্বাচনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিল, তাদের আদর্শ কতটুকু আছে এবং তারা কতটুকু দায়িত্বশীল রাজনীতি করেন- সেই প্রশ্ন উঠেছে। তবে অনেকেই মনে করেন, এটা ছিল সরকারের একটি কৌশল। সরকার ইচ্ছে করেই এই সমস্ত রাজনীতিবিদদেরকে এক্সপোস করতে চেয়েছে এবং তারা যে আদর্শহীন লোভাতুর- এটা প্রমাণ করতে চেয়েছে। সেদিক দিয়ে এই কৌশলের খেলায় সরকার অবশ্যই জয়ী হয়েছে।