স্টিফেন হকিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে চিঠিতে কী লিখেছিলেন
২০২২ সালের নভেম্বর মাসে মাইক্রোসফটের অর্থায়নে মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ওপেনএআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি উন্মুক্ত করার পর থেকেই প্রযুক্তি দুনিয়ায় রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। এর পর থেকেই বিশ্বের প্রায় সব প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানই নিজস্ব চ্যাটবট তৈরির পাশাপাশি নিজেদের বিভিন্ন প্রযুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত করেছে।
তবে আজকের জনপ্রিয় এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি কিন্তু হঠাৎ করেই তৈরি হয়নি। ২০১৫ সালে এআই ম্যাগাজিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি বিষয়ে একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেই গবেষণাপত্রের পরিপ্রেক্ষিতে একটি মুক্ত চিঠি লেখেন বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং, স্পেসএক্স ও টেসলার মালিক ইলন মাস্কসহ কেমব্রিজ, অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫০ জনের বেশি শিক্ষক গবেষক ও প্রযুক্তিবিদ। চিঠিতে তাঁরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ভবিষ্যতের গবেষণাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। কী লেখা ছিল সেই চিঠিতে? পাঠকদের জন্য চিঠিটি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণার শুরু থেকেই বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পদ্ধতির খোঁজ করা হচ্ছে। গত ২০ বছরে বা তারও বেশি সময় ধরে এই ক্ষেত্রে গবেষণা চলছে। এই সময় বুদ্ধিমান সত্তা তৈরির জন্য বিভিন্ন সমস্যার ওপর বিশেভাবে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। সেই বুদ্ধিমান সত্তা এমন একটি পদ্ধতি হবে, যার উপলব্ধি করার ক্ষমতা আছে ও সেই পথে কাজ করে। এই প্রসঙ্গে বলা যায়, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যৌক্তিকতার সম্পর্ক বেশ গভীর। পরিসংখ্যানগত ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গেও এ বিষয়গুলো সম্পর্কিত। সাধারণভাবে বুদ্ধিমত্তা বলতে ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া, পরিকল্পনা বা অনুমান করার ক্ষমতাকে বোঝানো হয়। গবেষণার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য নানা বিষয় ও সিদ্ধান্তনির্ভর তাত্ত্বিক উপস্থাপনা ও পরিসংখ্যানগত শিক্ষাপদ্ধতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
এআই, মেশিন লার্নিং, পরিসংখ্যান, কন্ট্রোল থিওরি, স্নায়ুবিজ্ঞান এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের মধ্যে পারস্পরিক সংযুক্তি বেড়েছে। এই বহুমুখী তাত্ত্বিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তথ্য ও প্রক্রিয়াকরণ শক্তির সমন্বয় ঘটেছে। এই সমন্বয়ের কারণে কণ্ঠস্বর শনাক্তকরণ, ছবি বিশ্লেষণ, স্বয়ংক্রিয় যানবাহন, মেশিন ট্রান্সলেশনও প্রশ্ন-উত্তর ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
বর্তমানে নানা ক্ষেত্রগুলোর মধ্য সমন্বয় ও সক্ষমতা বেড়েছে। এখন সবাই ঐকমত্য পোষণ করেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা ক্রমাগতভাবে অগ্রসর হচ্ছে। সমাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব বাড়তে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাব্য সুবিধা অনেক। এখন পর্যন্ত সমাজ-সভ্যতার সবকিছুই মানুষের বুদ্ধিমত্তার ফসল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন টুলসের মাধ্যমে মানব বুদ্ধিমত্তার পরিধির বিস্তৃতি নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার সুযোগ নেই। এসবের মাধ্যমে রোগ ও দারিদ্র্য নির্মূল করা কিন্তু অকল্পনীয় নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশাল সম্ভাবনার কারণে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়িয়ে কীভাবে সুবিধা বাড়ানো যায়, তা নিয়ে গবেষণা করা গুরুত্বপূর্ণ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণার অগ্রগতি শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সক্ষম করার জন্য নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে সামাজিক উন্নয়নের বিষয়েও গবেষণা করা গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে এএএআই ২০০৮-০৯ প্রেসিডেনশিয়াল প্যানেল এআই ফিউচারস ও এআইসংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রকল্পকে চালু করা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে তখন গবেষণার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিস্তৃতি ঘটে। এখন পর্যন্ত গবেষণায় নিরপেক্ষ কৌশলের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গতিশীলতা ও উপকারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রসারিত গবেষণার পরামর্শ দিচ্ছি। আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পদ্ধতিতে মানুষ হিসেবে আমরা যা করতে চাই, তা অবশ্যই যুক্ত করতে হবে। অগ্রাধিকারভিত্তিতে গবেষণা করতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সামাজিক উপকারের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। যেহেতু সমাজ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জড়িত, তাই এসব গবেষণায় প্রয়োজননির্ভর বিভিন্ন বিষয়ের সমন্বয়ে করতে হবে।
এককথায়, আমরা বিশ্বাস করি যে কীভাবে এআই সিস্টেম আরও শক্তিশালী ও উপকারী করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী। গবেষণাসংশ্লিষ্ট নির্দেশাবলি আজ থেকেই অনুসরণ করা যেতে পারে।
সূত্র: ফিউচার অব লাইফ