বিএনপিতে এখন চোর পুলিশ খেলা চলছে। কে সরকারের দালাল, গোপনে সরকারের সঙ্গে কারা আঁতাত করেছিল, কিংস পার্টি গঠনের টোপে কারা সাড়া দিয়েছিল- এসব নিয়ে বিএনপিতে চলছে তীব্র বিতর্ক, অবিশ্বাস এবং একে অন্যকে দোষারোপ করার রাজনীতি। আর এই রাজনীতিতে দু একজন যে নেতারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিলেন, যাদেরকে মনে করা হতো সাচ্চা বিএনপি, যারা এই সমস্ত প্রলোভনের কাছে বশীভূত হননি বলে ধারণা করা হতো তাদের অনেকের দিকেও এখন প্রশ্নের তীর ছোড়া হচ্ছে। তাদের অনেককে নিয়ে এখন কিছু কিছু বিতর্ক এবং প্রশ্ন উঠছে। তাদের কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে সরকারের সাথে তাদের গোপন সম্পর্ক রয়েছে এমন গুঞ্জন বিএনপির মধ্যে এখন পল্লবিত হচ্ছে।
এদের মধ্যে একজন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিএনপিতে যে সমস্ত লড়াকু নেতা রয়েছেন, তাদের মধ্যে রুহুল কবির রিজভী অন্যতম। তাকে বিএনপির আপোষহীন নেতা মনে করা হয় এবং তিনি কোন প্রলোভনে পা দেননি বলে এতদিন মনে করা হত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন তথ্য এবং ঘটনার সূত্র ধরে বিএনপিতেই প্রশ্ন উঠেছে যে রুহুল কবির রিজভী সঙ্গে সরকারের গোপন আঁতাত রয়েছে। রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে সরকারের গোপন আঁতাতের কয়েকটি সমীকরণ মিলিয়েছেন বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। আর সরকারের সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই ২৮ অক্টোবর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত সময়ে রুহুল কবির রিজভী গ্রেপ্তার হননি বলে অনেকে মনে করেন।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, যেহেতু রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে তারেক জিয়ার সম্পর্ক ভাল নয়, এটি সরকার জানে। এই কারণে রুহুল কবির রিজভীকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিএনপিতে। রুহুল কবির রিজভীর মাধ্যমে বিএনপির অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরকারের বিভিন্ন মহল নিচ্ছে বলেও তথ্য উপাত্ত পাওয়া গেছে। রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি লোকজনের সম্পর্কের কথাও এখন বিএনপিতে চর্চা হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের ঘটনার পর বিএনপিতে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছিল। এই ধরপাকড়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাসের মতো নেতারা গ্রেপ্তার হন। আর এছাড়াও ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু এই গ্রেপ্তার অভিযানে একেবারেই বাদ থেকে যান রুহুল কবির রিজভী। যখন নেতারা ঘর থেকে বেরোতে পারছিল না সেই সময় বিএনপির এই নেতা বিভিন্ন ঝটিকা মিছিল, লিফলেট বিতরণ এবং নানা রকম কর্মসূচি পালন করছিলেন কিভাবে? এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে এসময় সরকারের একটি গোপন সমঝোতা হয়েছিল এবং সেই সমঝোতার অংশ হিসেবে রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তার কাছ থেকে বিএনপির পরিকল্পনাগুলো জানা হয়েছে। এরকম তথ্য লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার কাছেও আছে বলে বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
আর এই কারণেই যখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করার প্রসঙ্গটি আসে, তখন রুহুল কবির রিজভীর নামটি সবার আগে আলোচনায় ছিল। কিন্তু তারেক জিয়া জানতেন যে, রিজভীর সঙ্গে সরকারের গোপন আঁতাত রয়েছে, গোপন যোগাযোগ রয়েছে এবং রিজভী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরকারের কাছে ফাঁস করে দেন। এ কারণেই তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয়নি।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যখন ঢাকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কথা বলেন তখন তিনি রিজভীকে সঙ্গে নেন না। এর পেছনে অবশ্য অন্য একটি কারণও রয়েছে। যেহেতু রুহুল কবির রিজভী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নন, সে কারণেই তাকে এই ধরনের বৈঠকগুলোতে রাখা হয় না। তবে অন্য সূত্র বলছে যে, রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে সরকারের গোপন যোগাযোগের বিষয়টি সম্পর্কে তারেক জিয়া অবহিত। এজন্যই তাকে ডাকা হয় না।