ভালোবাসা দিবসে নতুন ব্যবসায় পা দিয়েছেন শাহরুখ খানের স্ত্রী, প্রযোজক ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গৌরী খান। মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকায় নিজের প্রথম রেস্তোরাঁ দিয়েছেন তিনি। নতুন এই রেস্তোরাঁর নাম ‘তরী’। কিছুদিন আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভক্তদের সঙ্গে রেস্তোরাঁর একটি ভিডিও শেয়ার করেন গৌরী। সেখান থেকেই আসে নতুন ব্যবসায় পদার্পণের ঘোষণা।
‘শাহরুখ খানের স্ত্রী’ বাদেও গৌরীর নিজস্ব একটি পরিচয় রয়েছে। পেশায় তিনি একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। নিজেদের বিশাল বাংলো ‘মান্নাত’-এর ইন্টেরিয়র ডিজাইন পুরোটাই গৌরীর করা। শখের বশে শুরু করলেও এখন পুরোদস্তুর ইন্টেরিয়র ডিজাইনার তিনি। মুম্বাই ও পুনেতে বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁর অন্দরসজ্জা করেছেন তিনি। এ ছাড়া ক্যাটরিনা কাইফ, অনন্যা পান্ডেসহ কয়েকজন বলিউড তারকার অন্দরও হয়েছে গৌরী খানের তত্ত্বাবধানে।
সেসব রেস্তোরাঁর কাজ করতে গিয়েই চিন্তাটা মাথায় আসে। নিজের একটা রেস্তোরাঁ হলে মন্দ হয় না। তখন আর ক্লায়েন্টের চাওয়া–পাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। নিজের মনের মতো করে সাজানো যাবে।
নিজের পছন্দের খাবার নিয়ে গৌরী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই পাঞ্জাবি খাবার খেয়ে বড় হয়েছি। মাখনি ডাল আমার খুব পছন্দের খাবার। তবে বাইরে কোথাও খেতে গেলে আমার পছন্দ এশিয়ান ফুড। যে কারণে এই রেস্তোরাঁও সাজানো হয়েছে এশিয়ান থিমে। আমি বাইরে গিয়ে যেটা খেতে পছন্দ করি, সেটাই দিতে চাই। ভালো মানের জাপানি খাবারের জন্য তরীতে আসতে হবে। এই রেস্তোরাঁর মধ্যে আমার সবচেয়ে পছন্দের ডিশ সুশি রোল, ডাম্পলিং, থাই কারি।’
গৌরীর এই স্বপ্নযাত্রায় সাথি হয়ে আছে তাঁরই দুই বন্ধু তানাজ ভাটিয়া ও অভয়রাজ কোহলি। দুজনেরই আগে টুকটাক রেস্তোরাঁ ব্যবসার অভিজ্ঞতা ছিল। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই নতুন যাত্রায় নেমেছেন গৌরী। তবে এত কিছুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে রেস্তোরাঁর ভেতরের সাজসজ্জা।
নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে কাজ করতে পেরেছেন, পরতে পরতে তা স্পষ্ট। পুরো রেস্তোরাঁ সাজানো হয়েছে লাল ও সোনালি রং দিয়ে। রেস্তোরাঁটি সাজানো হয়েছে মূলত কাঠগোলাপ দিয়ে। লাল, সোনালির মতো জমকালো রং, কাঠগোলাপ, বাহারি কচুগাছ মিলিয়ে তৈরি হয়েছে রাজকীয় এক আবহ।
প্রাকৃতিক আলো ভেতরে ঢোকানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে কার্টেইন ওয়াল। অর্থাৎ সিলিং থেকে মেঝে পর্যন্ত পুরোটাই জানালা। অন্দরে প্রাধান্য পেয়েছে জাপানিজ আর্ট। দুই বছর আগে এখানে একটি মেক্সিকান রেস্তোরাঁ ছিল। সেটি রিডিজাইন করে তৈরি হয়েছে এই রেস্তোরাঁ। মেনুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুরো রেস্তোরাঁর ইন্টেরিয়র সাজানো।
রেস্তোরাঁর প্রবেশমুখে রয়েছে রাজপ্রাসাদের মতো বিশাল দরজা। যাতে স্বর্ণালি অক্ষরে বড় বড় করে লেখা ‘তরী’। নিচু সিলিং, মাটি থেকে ছাদ পর্যন্ত জানালা, দেয়ালে ঝোলানো চিত্রকর্ম থেকে শুরু করে ডেকোরেশন—রেস্তোরাঁর প্রতিটি কোনায় রয়েছে আভিজাত্যের ছাপ। নিজের প্রথম রেস্তোরাঁ নিয়ে যারপরনাই খুশি গৌরী। ইনস্টাগ্রামে দেওয়া একটি ভিডিওতে বলেন, ‘হিন্দিতে “তরী” শব্দের অর্থ মন্দিরের প্রবেশদ্বার। আমাদের কাছে জায়গাটি এর চেয়েও বড় কিছু। এই জায়গার প্রতিটি রং, প্রতিটি চিত্রকর্ম, গাছপালা—সবকিছু আমার নিজ হাতে সাজানো। আমার ইচ্ছা ছিল এমন একটা জায়গা তৈরি করা, যেখানে আভিজাত্য নতুন একটি অর্থ পাবে।’
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে বিশাল আয়োজনে উদ্বোধন করা হয় রেস্তোরাঁর। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শাহরুখ খান, করণ জোহর, ভাবনা পান্ডে, নিলাম কোঠারিসহ বলিউডের বড় বড় তারকা। তরী তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে গৌরী বলেন, ‘ডিজাইন আমার প্যাশন আর খাওয়াদাওয়া আমার ভালোবাসা। পরপর কয়েকটা রেস্তোরাঁ ডিজাইন করার পর মনে হয়েছে নিজেরও একটা রেস্তোরাঁ থাকা প্রয়োজন। সেখান থেকেই তরীর সূচনা।’
তবে ব্যবসা নিয়ে এখনই সাত আসমান ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখছেন না গৌরী; বরং সতর্ক রয়েছেন। ‘আমি জানি, আমি একটুই নতুন ব্যবসায় প্রবেশ করেছি। এই পথে এখনো অনেক কিছু শেখার বাকি। এই পথ কোথায় গিয়ে ঠেকে, তা দেখার জন্য আমিও অধীর আগ্রহে বসে আছি।’
গৌরীর এই রেস্তোরাঁয় এশিয়ার বিখ্যাত খাবারগুলো পাওয়া যায়। সুশি থেকে শুরু করে সবুজ শাকসবজি, লবস্টার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদের মাংস—শেফ স্টেভান গাদিতের তত্ত্বাবধানে সবই পাওয়া যাবে। এই রেস্তোরাঁ আসলে লাক্সারি ডাইনিং এক্সপেরিয়েন্সের জন্য। এখানে দুটো মানুষের পেটপুরে খেতে পকেট থেকে বেরিয়ে যাবে লাখখানেক টাকা।
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, কার্লি টেলস