দ্বাদশ নির্বাচনের আগে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিএনএমে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে সাকিব আল হাসান তার রাজনীতিতে অভিষেক করতে চেয়েছিলেন। তার এই কৌশল ছিল পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনুকরণ। ইমরান যেভাবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, ঠিক সেই পথেই হাঁটার পরিকল্পনা ছিল ক্রিকেটার সাকিবের। বিএনএমর বেশ কয়েকটি সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।
সম্প্রতি মেজর হাফিজের বাসায় বিএনএমের সদস্য ফরম পূরণ করে সাকিবের যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি পর্বের একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। এরপরই রাজনৈতিক মহলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। এই ঘটনাটি গত বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের ঘটনা। তবে পরবর্তী সময়ে নতুন দলে না গিয়ে ইউটার্ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যোগদান করেন সাকিব আল হাসান।
এদিকে ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) মতো সাকিবেরও চিন্তা ছিল একটি নতুন দল গঠন করে আলোড়ন সৃষ্টি করা। অদূর ভবিষ্যতে এ দল থেকে নির্বাচন করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের। সমীকরণ না মেলায় শেষ পর্যন্ত এসব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। দ্বাদশ নির্বাচনের আগে কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিএনএমে যোগ দিতে গিয়েও পিছু হটেন তিনি।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে দেখা যায়, বিএনএমের একটি ফরম পূরণ করে সাকিব তুলে দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রমের হাতে। মেজর হাফিজ ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন দুজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা।
জানা গেছে, নির্বাচনের সময় সাকিব তিন দফায় মেজর হাফিজের বনানীর বাসায় যান। প্রাথমিক বৈঠকে সাকিব তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও পরিকল্পনার কথা জানান বিএনএম নেতাদের। দ্বিতীয় দফায় একটি দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাবপত্রে সই করেন। তৃতীয় দফার বৈঠকে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন নেতাদের সঙ্গে। সেখানে রাজনীতি নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনএমের একজন নেতা বলেন, সাকিব উচ্চাভিলাষী। নতুন দলে আসার পেছনে তার সদূরপ্রসারী চিন্তা ছিল। সাকিব চেয়েছিলেন দলটির চেয়ারম্যান হতে। মেজর হাফিজ মারা যাওয়ার পর তিনিই চেয়ারম্যান হতেন। ইমরান খানের মতো নতুন দলে নেতৃত্ব দিয়ে এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। কেননা আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনীতি করে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। সাকিবের টাকা-পয়সা আছে বেশ। দলের অর্থের জোগান নিয়ে ভাবতে হতো না।
তিনি জানান, আমাদের দলে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করবে মর্মে একটি প্রস্তাব পত্রে সাকিব সই করেন। বিএনএমের সদস্য সচিবও সই করেন। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি মেজর হাফিজের হাতে তুলে দেন সাকিব। মেজর হাফিজের কাছে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আসেন বিএনএমের প্রধান সমন্বয়কারী ক্যাপ্টেন (অব.) ড. কামরুল আহসান।
সাকিবের সঙ্গে কামরুলের সখ্য বেশ পুরোনো। সাকিবের সঙ্গে বিএনএম সম্পর্কে সব কথাবার্তা শেষ করে তাকে হাফিজের বাসায় নিয়ে আসেন। ড. কামরুল চেয়েছিলেন সাকিবকে চেয়ারম্যান করতে; কিন্তু মেজর হাফিজ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যানের কথাও উঠে আসে। পরে মেজর হাফিজই সাকিবকে কো-চেয়ারম্যান বানানোর পরামর্শ দেন।
বিএনএমের এ নেতা আরও জানান, দলের কমিটি গঠন হওয়ার আগেই সাকিব হঠাৎ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম কেনেন। এর মধ্যে সাকিব আল হাসান আর কোনো যোগাযোগ করেননি।
পরে আওয়ামী লীগের টিকেটে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাগুরা-১ আসনের এমপি হয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
এসব বিষয়ে সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, কী সব পুরোনো বিষয় নিয়ে আসেন। নিউজ করতে চাইলে করেন।
আর মেজর হাফিজ মঙ্গলবার বনানীতে নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, আমি আগেও বলেছি, কেন আমি বিএনএমে যোগদান করি নাই, কেন আমি বিএনপি ছাড়ি নাই। এতদিন পর আবার এই সংবাদ। এটা তো গোপন কোনো কিছু না। আমাকে প্রপোজ করেছেন তারা (বিএনএম)। আমি প্রস্তাব গ্রহণ করি নাই, বিএনপিতে রয়েছি।
তিনি বলেন, সাবিক আল হাসানও নন্দিত ক্রীড়াবিদ। তার দোষত্রুটি থাকতে পারে, কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে তিনি ইনকমপেয়ারেবল ইন বাংলাদেশ। রাজনীতি করুক যাই করুক, এদের হতাশ করে তারা খেলাধুলা ছেড়ে দিক এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঠেলে দেবেন না।
হাফিজ এও বলেন যে, তিনি সাকিবকে রাজনীতির বিষয়ে উৎসাহিত করেননি।