কুকুরের সঙ্গ লাভে মনোযোগ ও সৃজনশীলতা বাড়ে: গবেষণা

যেসব কর্মকাণ্ড কুকুর ও অংশগ্রহণকারী দুজনেই একই সঙ্গে উপভোগ করছিল তার ওপর নির্ভর মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপও পরিবর্তন হতে দেখা যায়। ছবি: পেক্সেলসযেসব কর্মকাণ্ড কুকুর ও অংশগ্রহণকারী দুজনেই একই সঙ্গে উপভোগ করছিল তার ওপর নির্ভর মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপও পরিবর্তন হতে দেখা যায়। ছবি: পেক্সেলস
কুকুরের সঙ্গে সময় কাটালে মানুষের মন ভালো হয়ে যায়। তবে এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের নিবিষ্টতা ও সৃজনশীলতা বেড়ে যায় বলে দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে।

কুকুরের সঙ্গে খেলার সময় মানুষের মানসিক অবস্থা ও হরমোনে কী কী পরিবর্তন হয় তা নিয়ে এর আগেও অনেক গবেষণা হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার কনকুক বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গবেষণাটি আরও একধাপ এগিয়ে। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণের জন্য ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি (ইইজি) স্ক্যান ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গবেষকেরা চমকপ্রদ ফলাফল দেখতে পেয়েছেন।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, আট বছর বয়সী পুডল প্রজাতির প্রশিক্ষিত কুকুরের সঙ্গে হাঁটা, খেলা ও আদর করার সময় অংশগ্রহণকারীদের মাথায় একটি ইইজি ইলেকট্রোডস ক্যাপ পরানো হয়। গবেষকেরা দেখেন, কুকুরের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সময় মস্তিষ্ক থেকে বিচ্ছুরিত বৈদ্যুতিক তরঙ্গ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। যেসব কর্মকাণ্ড কুকুর ও অংশগ্রহণকারী উভয়ে একই সঙ্গে উপভোগ করছিল তার ওপর নির্ভর করে মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপও পরিবর্তিত হতে দেখা যায়।

পরীক্ষা শুরুর আগে মস্তিষ্কের উদ্দীপনা কমাতে (শান্ত করতে) অংশগ্রহণকারীরা তিন মিনিটের জন্য সাধারণ দেয়ালের দিকে তাকিয়ে বসে ছিলেন।

গবেষণাটি পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্স বা পিএলওএস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণায় ৩০ জন ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা পুডলের সঙ্গে ৮টি ভিন্ন উপায়ে মিথস্ক্রিয়া করেন: খাবার দেওয়া, খেলনা নিয়ে খেলা ও একসঙ্গে ছবি তোলা ইত্যাদি।

দেখা গেছে, কুকরের সঙ্গে হাঁটা বা খেলার সময় অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের আলফা তরঙ্গ শক্তিশালী হয়। আলফা তরঙ্গ উন্নত স্মৃতিশক্তি ও কম মানসিক চাপের সঙ্গে সম্পর্কিত। আলফা তরঙ্গ বাড়লে বোঝা যায় মস্তিষ্ক শিথিল আছে।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন যখন অংশগ্রহণকারীরা পুডলের গ্রুমিং বা যত্ন নেন, হালকা ম্যাসেজ দেন বা তার সঙ্গে খেলেন, তখন মস্তিষ্কের বেটা তরঙ্গ শক্তিশালী হয়। এই তরঙ্গ উচ্চতর মনোযোগের সঙ্গে যুক্ত।

পুডলের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার পরে অংশগ্রহণকারীদের উল্লেখযোগ্যভাবে কম হতাশাগ্রস্ত, চাপ ও ক্লান্তি বোধ করতে দেখা গেছে।

অংশগ্রহণকারীদের সবার নিজের পোষা প্রাণী ছিল না। এটিকে গবেষণার পক্ষপাতদুষ্ট না হওয়ার শর্ত দাবি করা হলেও এই গবেষণার একটি দুর্বল দিক হলো— অংশগ্রহণকারীরা সম্ভবত কুকুরের প্রতি ভালোবাসার জন্য স্বেচ্ছাসেবক হয়েছিলেন, যা পক্ষপাতদুষ্ট ফলাফল তৈরি করতে পারে।

ফলে কুকুর নিয়ে আগ্রহী নন এমন লোকদের মধ্যে মস্তিষ্কে উল্লেখিত পরিবর্তনগুলো নাও দেখা যেতে পারে।

গবেষণাটি হাসপাতাল, স্কুল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষিত কুকুরের ব্যবহার সম্পর্কে আরও গবেষণার পথ প্রশস্ত করবে বলে গবেষকেরা আশা করছেন। যেমন: কুকুর ব্যবহার করে মানুষের উদ্বেগ কমানোর উপায়ও গবেষণা করে বের করা যাবে।

গবেষকেরা বলেন, মানুষের চিকিৎসায় পোষা প্রাণীর ব্যবহার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করার জন্য এই গবেষণা মূল্যবান তথ্য দিতে পারে।

তবে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তা ছাড়া তাঁদের কারওরই মানসিক বা স্নায়বিক সমস্যা নেই। ফলে কুকুরের সঙ্গে এ ধরনের কার্যকলাপে অসুস্থ মানুষ উপকৃত হবেন কি না সেটিও স্পষ্ট নয়। এ ছাড়া মানুষের সঙ্গে এসব মিথস্ক্রিয়ায় কুকুরও একই সুবিধা পাবে কি না তা এই গবেষণায় পরীক্ষা করা হয়নি।

Exit mobile version