যুবলীগ চেয়ারম্যান পরশের স্ত্রী নাহিদ সুলতানা যুথী এখনও আইনের চোখে পলাতক রয়েছেন। তিনি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে জামিনের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ তার জামিনের আবেদন শুনতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর আজ একটি পৃথক বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার জামিনের শুনানি নিষ্পত্তি হয়নি।
যুথীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভাঙচুর করা, নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরকে হুমকি দেওয়া সহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয়েছে। এই মামলায় অন্য আসামিদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশেষ করে সম্পাদক পদে বিএনপি সমর্থক প্রার্থী কাজলকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডেও আনা হয়েছে। কিন্তু নাহিদ সুলতানা যুথীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তার বাসায় অভিযান চালানো হয়েছিল কিন্তু তাকে বাসায় পাওয়া যায়নি।
যুথীর এই ঘটনার প্রায় ১০ দিন পর যুবলীগের চেয়ারম্যান পরশ এক ভিডিও বার্তা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ঘটনার নিন্দা করেছেন এবং যুবলীগের কেউ যদি এর সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে তার এই বক্তব্যও দায়সারা এবং পাশ কাটানো বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
আইন যে সবার জন্য সমান নয় এবং যুথীকে যে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে সর্বক্ষণই আলোচনা হচ্ছে। এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আইনজীবীরাও যুথীকে এভাবে প্রশ্রয় দেওয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং এতে সরকারের বদনাম হচ্ছে বলে তারা উল্লেখ করছেন।
নাহিদ সুলতানা যুথী ভার কেন আওয়ামী লীগ গ্রহণ করেছে সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এখন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহল নাহিদ সুলতানা যুথীকে বাঁচানোর জন্য এই মামলাটির আপোষ সমঝোতার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো মহল বলছে, সুপ্রিমকোর্টের এই পরিবেশ থাকা উচিত নয়। এটি নিয়ে একটি সমঝোতা করা দরকার এবং এজন্য বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে তারা একটি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়টিকে মিটমাট করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে নতুন নির্বাচনের দাবি করা হয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্টের ঘটনার নির্মোহ তদন্তেরও দাবি করা হয়েছে। তারা বলছে, এক যাত্রায় দুই ফল কেন হবে, সেটিও সরকারকে বলতে হবে। কারণ একই মামলায় প্রধান আসামি বাইরে থাকবেন আর দ্বিতীয় বা তৃতীয় আসামিরা কারাগারে কারাভোগ করবেন এটা কিভাবে সম্ভব?
বিভিন্ন মহল মনে করছেন, নাহিদ সুলতানা যুথীর জন্য নয়। বরং পরশের কারণেই যুথীর প্রতি সহানুভূতি দেখানো হচ্ছে। পরশ কেবল যুবলীগের চেয়ারম্যান নন, তিনি শেখ ফজলুল হক মনির জ্যেষ্ঠপুত্র বটে। আর এ কারণেই বিষয়টি আওয়ামী লীগের জন্য স্পর্শকাতর।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এটি যদি যুথী না হয়ে অন্য কোন আওয়ামী লীগের নেতার স্ত্রী হতেন, তাহলে এতক্ষণে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি তামিল করা হত। কারণ বিষয়টি এতদূর গড়িয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রী নিজে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। তার প্রতিক্রিয়ার পরই যুথীকে গ্রেপ্তারের জন্য দায়সারা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। এখন বিষয়টি একটি নাজুক পরিস্থিতির মোড় নিয়েছে। মামলায় জামিন না নিয়েও যুথী এখনও বাইরে রয়েছেন। এটি যেমন সরকারের জন্য একটি অস্বস্তিকর বিষয় আবার এই মামলা যদি চলতে থাকে তাহলেও সেটাও সরকারের জন্য একটি অস্বস্তিকর বিষয়। এরকম অস্বস্তির ফলে জনগণের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। আর এই রকম বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত যদি মামলা প্রত্যাহার না করা হয় এবং সমঝোতা না করা হয় তাহলে যুথীকে কতদিন বাইরে রাখা যাবে সেটিও একটি বড় প্রশ্ন। সেক্ষেত্রে যুথীর দায়ভার আওয়ামী লীগেই বহন করতে হবে। আওয়ামী লীগ যুথীর ভার আর কত বহন করবে সেই প্রশ্ন এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে দেখা দিয়েছে।