যে কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দুঃসময়ে নিপতিত
আওয়ামী লীগ তার জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে সুসময় কাটাচ্ছে। টানা টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় রয়েছে। বিরোধী দলেরও কোন চাপ নেই। নেই কোন রকমের বাইরের চাপও। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার মতো কোন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক শক্তি এখন দৃশ্যমান নেই। আর টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি এবং আয়েশি ভাব। কিন্তু এই সুসময়েও আওয়ামী লীগকে দুঃসময় বার্তা দিচ্ছে। টানা সুসময়ে থাকার কারণে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানারকম টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। সংগঠন বিভক্ত হয়ে পড়ছে, সাংগঠনিক তৎপরতা স্তিমিত হয়ে গেছে এবং দলের ভিতরে আদর্শ চর্চা একেবারেই ম্রিয়মাণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আর এই সমস্ত কারণে আওয়ামী লীগের সামনে দুঃসময়ের ইঙ্গিত দেখছেন অনেকে। যেকোন কঠিন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ আগের মতো করে শক্তিশালী ভাবে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে পারবে কি না সে নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। নানা কারণে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দুঃসময়ের পূর্বাভাস দেখছেন এই সুসময়ে। যে সমস্ত কারণে তারা সামনের দিনগুলোতে খারাপ সময় আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন, তার মধ্যে রয়েছে;
১. জনগণের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা: আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে যে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জনগণের এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে জনগণকে অবজ্ঞা অবহেলা করছে এবং জনগণ কি চাচ্ছে সেটা শোনার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা এবং মন্ত্রীদের আগ্রহ নেই। জনগণই যে ক্ষমতার উৎস এবং জনগণই যে প্রজাতন্ত্রের মালিক এমন ভাবনাটা আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন আস্তে আস্তে লোপ পেতে শুরু করেছে।
২. জিনিসপত্রের দাম এবং জনগণের অস্বস্তি: আওয়ামী লীগের সামনের দিনগুলোতে খারাপ যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় কারণ হল সামনের দিনগুলোতে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি এবং মুদ্রাস্ফীতির নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ এবং অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। যেকোন সময়ই এই ক্ষোভ-অসন্তোষ বড় আকার ধারণ করতে পারে বলেও আওয়ামী লীগের অনেক তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন। জনগণ যদি একবার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাহলে আওয়ামী লীগের সুসময় থেকে দুঃসময় যাত্রা পথ বেশি দূরে নয় বলেও কেউ কেউ ধারণা করছেন।
৩. আওয়ামী লীগের চেইন অব কমান্ড নষ্ট হয়ে গেছে: আওয়ামী লীগে এখন কোনো চেইন অব কমান্ড নেই। সিনিয়র নেতারা জুনিয়র নেতাদেরকে মানছে না। স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে সম্মান করছে না। এখন আওয়ামী লীগের ভিতর কোন রকমের পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সমীহ ইত্যাদি লোপ পেতে পেতে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এটি যেকোন সংগঠনের জন্য উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আওয়ামী লীগের সংগঠনের অবস্থা হতশ্রী হতে বেশি সময় লাগবে না।
৪. বুদ্ধিজীবী এবং সুশীলদের সঙ্গে দূরত্ব: আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুশীল সমাজ এবং বুদ্ধিজীবীদের কোন সম্পর্কই নেই বলে অনেকে মনে করেন। একটা সময় আওয়ামী লীগ সুশীল সমাজের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক রেখে চলতো। এখন সুশীল সমাজের সাথে সেই সম্পর্কটাই আলগা হয়ে গেছে। যার ফলে আওয়ামী লীগের ভেতর বাইরে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা এবং মেধা-মননের লালন একেবারেই কমে গেছে। এটা যেকোন রাজনৈতিক দলের জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
৫. আদর্শ চর্চার বদলে ভোগ চর্চা: আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে আদর্শ চর্চা নেই বললেই চলে। বরং নেতাকর্মী সবাই একযোগে ব্যস্ত কে কতটুকু ভোগ করতে পারেন। আর একারণে সারা দেশে সাংগঠনিক অবস্থা একেবারেই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। একদিক থেকে দলীয় বিভক্তি অন্যদিকে সংগঠনের দিকে মনোযোগ না দিয়ে ব্যক্তিগত লাভের আশায় নেতাকর্মীদের ছোটাছুটি দলকে সামনের দিকে এক সঙ্কটের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করেছে বলেই অনেকে মনে করেছে।